সারা বাংলা

সময় এখন খেজুর রসের

লক্ষ্মীপুরে শীতের এই সকালে গ্রামের প্রায় প্রত্যেক ঘরেই তৈরি হয় খেজুর রসের পিঠা পায়েসসহ নানা উপকরণ। এসব খাবার ছোট বড় সকলের কাছেই পছন্দের। তাই এ সময়ে রস সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন লক্ষ্মীপুরের গাছিরা।

জেলার বিভিন্ন গ্রামের রাস্তা ও খাল পাড়ে চোখে পড়ে অসংখ্য খেজুর গাছ। সারাবছর অযত্নে পড়ে থাকা এসব গাছের এখন খুবই কদর। শীত মৌসুমে যার ক'টি খেজুর গাছ আছে, তিনি আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। অন্তত এই শীতে রস সংগ্রহের বিড়ম্বনায় পড়ছেন না। রসের জন্য তাকে গাছিদের পেছনে পেছনে ছুটতে হচ্ছেনা। 

তবে কদর থাকা সত্ত্বেও লক্ষ্মীপুরে আগের মতো খেজুর গাছের প্রাচুর্য নেই। গাছিরা বলছেন, গাছ কমে যাওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী রস সরবরাহ করতে পাচ্ছেন না তারা। তাই বলে মোটেও ব্যস্ততা কম নেই গাছিদের। যে পরিমাণ গাছ রয়েছে, সেগুলো থেকেই খেজুর রস সংগ্রহ করছেন গাছিরা। 

প্রতিদিন দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত গাছিরা খেজুর গাছ কেটে হাঁড়ি ঝুলিয়ে দেন।  সারারাত ফোটা ফোটা রস পড়ে ভরে ওঠে হাঁড়ি।  পরেরদিন ভোরে খেজুর গাছ থেকে রসের হাঁড়ি নামান তারা। এরপর রসগুলো হাঁড়ি ও কলসি ভর্তি করে বিক্রি করেন হাট-বাজারগুলোতে। কেউ আবার রস দিয়ে তৈরি করছেন গুড়। ওই গুড় দিয়ে তৈরি হয়, নানা রকমের পিঠা। লক্ষ্মীপুরে এ মৌসুমে প্রতি হাঁড়ি ৩শ থেকে ৪শ টাকা, কলস ৭শ থেকে ৯শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

লক্ষ্মীপুরের রায়পুরের বাসিন্দা সবুজ জানালেন, এখন সচরাচর খেজুরের রস পাওয়া যায় না। তিনি চরবংশী এলাকা থেকে এক কলস রস আনিয়েছেন। দাম বেশি, তবুও তিনি আনন্দিত। কারণ, সুমিষ্ট এই রসের পায়েস খেতে পারবেন।

সদর উপজেলার আবিরনগরের সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ এলাকার গাছি আবদুস শহিদ বলেন, এখন আর আগের মতো খেজুর গাছ নেই। কিন্তু খেজুর গাছের রস ও গুড়ের চাহিদা ঠিকই রয়েছে। গাছ কমে যাওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী রস পাচ্ছেন না।  তবুও দাম ভালো পাওয়ায় খুশি তারা। 

আরেকজন গাছি বললেন, বেশিরভাগ সময় খেজুর গাছের রস বাজারে নিতে হয় না। গাছ থেকে হাঁড়ি নামাতেই নিয়ে যান ক্রেতারা। রস বিক্রি করে শীত মৌসুমে বাড়তি আয় হচ্ছে তাদের।  তাছাড়া পরিশ্রমও কম। শুধু রাত জেগে পাহারা দেওয়া কিছুটা কষ্টের।   

স্থানীয় সমাজকর্মী আব্দুল মালেক নিরব বললেন, খেজুরগাছ কেটে ফেলে আর নতুন গাছ লাগাচ্ছেন না। তাই গাছের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। এভাবে হয়তো একদিন গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য খেজুর রসও হারিয়ে যাবে। এজন্য প্রয়োজন, সরকারি-বেসরকারিভাবে উদ্যোগ নিয়ে খেজুর গাছ রোপণ করা।