সারা বাংলা

নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল: ব‌্যস্ত ডাক্তার, উদাসীন নার্সরা 

শীতে চলছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। এই সময়ে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্তরা উপেক্ষার শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ  তুলেছেন ভুক্তভোগীরা।  তারা বলছেন,  করোনার  উপসর্গ ছাড়া অন‌্য রোগীদের প্রতি ডাক্তার-নার্সরা তেমন মনোযোগ দিচ্ছেন না। বারবার যোগাযোগ করেও নার্সদের দেখা মেলে না। এলেও দায়সারা দুই-একটি কথা বলেই কেটে পড়েন। আর ডাক্তারা ওষুধের নাম লিখেই দায়িত্ব শেষ করছেন। 

 হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন আউটডোরে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ রোগী  আসেন। সেখানে টিকিট কেটে ডাক্তার দেখাতে হয়। রোগের ধরন অনুযায়ী রোগীরা ডাক্তার দেখিয়ে চলে যান। তবে, অনেক রোগীর অভিযোগ, ডাক্তাররা ভালো করে তাদের কথা শোনেন না, দেখেনও না। তারা দেখামাত্রই টিকিটেও পিঠে ওষুধের নাম লিখে দেন। বেশি অসুস্থ হলে ভর্তির পরামর্শ দেন। প্রতিদিন এই হাসপাতালে গড়ে ২৫০ থেকে ৩০০ রোগী ভর্তি হন। এর মধ্যে  বেশি সমস্যায় পড়তে হয় ঠান্ডাজনিত রোগীর ক্ষেত্রে। এই রোগে বেশি ভর্তি বয়স্ক ও শিশুরা। করোনার মতো উপসর্গ থাকায় তারা ডাক্তার ও নার্সদের সঠিক পরিচর্যা পাচ্ছে না। ভর্তির পর হাসপাতালে শুয়ে থাকা ছাড়া কিছু করার থাকে না। মাঝে মাঝে নার্সরা এসে দূর থেকে স্বজনদের হাতে ওষুধের নাম লিখে দিয়ে চলে যান।

মেডিসিন ওয়ার্ডের রোগীর ছেলে নুর ইসলাম বলেন, ‘বাবাকে নিয়ে এসেছি পরশু। জ্বর-কাশি-সর্দি ছিল। এখন জ্বর নেই। ডাক্তার এসে দূর থেকে দেখে প্রেসক্রিপশন লিখে সিস্টারদের হাতে দিয়ে চলে যান। রোগীকে দেখেনও না।’

শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি হওয়া আবরার নামের এক শিশুর অভিবাবক বলেন, ‘আজ তিন দিন ধরে হাসপাতালে বাচ্চাকে নিয়ে আছি। বাচ্চার ঠান্ডা লেগেছে। ডাক্তাররা নার্সদের কাছ থেকে রোগ শুনে ওষুধ লিখে চলে যাচ্ছেন। বাচ্চাকে দেখছেন না। আর সময় মতো নার্সদেরও দেখা পাওয়া যায় না।’

গাইনি ওয়ার্ডে আয়েশা আক্তার নামে একজন রোগীর অভিযোগ, ‘ভর্তি হওয়ার পর ডাক্তার এসে দেখেছিলেন। তবে, বেশি সময় দেননি। রিপোর্ট দেখে নার্সদের বুঝিয়ে চলে যান। নার্সরা আমাকে সে অনুযায়ী চিকিৎসা দেয়।’

ডায়রিয়া ওয়ার্ডের একজন রোগীর স্বজন জানান, ভর্তি হওয়ার পর শুধু স্যালাইন দিয়ে রেখেছে। ডাক্তার এখনো আসেননি।

এসব অভিযোগের বিষয়ে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক‌্যাল অফিসার সৈয়দ মহিউদ্দিন আবদুল আজিম বলেন, ‘হাসপাতালে সব ধরনের রোগীর চিকিৎসা দিতে আমরা সার্বক্ষণিক চেষ্টা করছি। শীতকাল হওয়ায় ঠাণ্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা বেশি। সমস্যা বুঝে আউটডোর সেবা দেওয়া হচ্ছে। বেশি অসুস্থ হলে ভর্তি করানো হচ্ছে। করোনার কারণে অন্যান্য রোগীর সেবায় কোনা ব্যাঘাত ঘটছে না। এছাড়া, করোনার উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীর সংখ্যাও কম। শনাক্ত হলে আইসোলোশনে পাঠাই। ডাক্তাররা সময়মতো রাউন্ড দিচ্ছেন। এই হাসপাতালে সব ধরনের রোগীর সেবা অব্যাহত আছে।’

এদিকে, জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্র বলছে, এখন বেশি পরীক্ষা করাচ্ছেন বিদেশগামীরা। গত জুলাই থেকে এখানে বিদেশগামীদের পরীক্ষা শুরু হয়। এই পর্যন্ত ১১ হাজার ৭২৬ জনের পরীক্ষা হয়েছে। এর মধ্যে শনাক্ত হয়েছে ১০৯ জনের। এছাড়া, জেলায় এই পর্যন্ত ৪১ হাজার ৭৮৪ জনের করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে শনাক্ত হয়েছে ৫ হাজার ৬৩২ জন।