সারা বাংলা

অভাবের তাড়নায় সন্তানকে পানিতে ফেলে দিলেন মা 

কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলায় অভাবের তাড়নায় ১৫ মাসের সন্তানকে পানিতে ছুঁড়ে ফেলে দিলেন মা জমিলা বেগম। পরে পথচারী ও এলাকাবাসী জীবিত অবস্থায় শিশুটিকে উদ্ধার করে।   

শিশু জাহিদ এখন স্থানীয় রফিকুল ইসলাম ও এলিনা দম্পতির কাছে সুস্থ রয়েছে।  

শুক্রবার (২৯ জানুয়ারি) সকালে উপজেলার কাশিমবাজারে ব্রিজ থেকে শিশুটিতে পানিতে ফেলে দিলে সে ভাসতে থাকে। তা দেখে পথচারী ও এলাকাবাসী দ্রুত এগিয়ে এসে উদ্ধার করে।

প্রত্যক্ষদর্শী দুলাল হোসেন সন্তোষ বলেন, ‘সকাল ৯টার দিকে আমি ওই পথ দিয়ে বাজারে যাচ্ছিলাম। তখন ব্রিজের ওপর থেকে এক নারীকে পানিতে কিছু ফেলতে দেখি। নিচের দিকে তাকিয়ে দেখি- একটি শিশু ভাসছে ও হাত-পা নাড়াচ্ছে। আমি চিৎকার করতে থাকি। চিৎকার শুনে স্থানীয় ফরিদুল ইসলাম এবং একজন পথচারী এগিয়ে আসে। তারা পানিতে নেমে শিশুটিকে উদ্ধার করে।’ 

মা জমিলা বেগম বলেন, ‘এক বছর আগে দুই মাসের জাহিদকে নিয়ে স্বামীর বাড়ি থেকে বিতারিত হই। এরপর থেকে ভুরুঙ্গমারী উপজেলার পূর্বকেদার গ্রামে বাবার বাড়িতে থাকি। দিনমজুর বাবার পক্ষে আমার সন্তানের ভরণপোষণ দেওয়া সম্ভব ছিলো না। এ নিয়ে প্রায়ই আমার সঙ্গে ঝগড়া হতো। তখন থেকে ছেলেকে পানিতে ফেলে দেওয়ার চিন্তা আসে।’  

প্রতিবেশীরা জানান, ঘটনার দিন জমিলা বেগম তার বাবার সংসার থেকে দুই কেজি চাল সবার অজান্তে বিক্রি করে সন্তানের জন্য খাবার ও তেল কেনে। পরে তা জানতে পেরে বাবা জয়নাল রাগান্বিত হয়  এবং জমিলাকে বাড়ি থেকে চলে যেতে বলে। তখন মনের দুঃখে জমিলা শিশুকে নিয়ে বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরে কাশিমবাজার সংলগ্ন ব্রিজের ওপর গিয়ে পানিতে ফেলে দেয়। 

জমিলা বেগমের বাবা জয়নাল মিয়া বলেন, ‘আড়াই বছর আগে রংপুরের মর্ডান মোরের হাফিজুরের সঙ্গে জমিলার বিয়ে হয়। পরে তাদের সংসার ভাঙে। দুই মাসের সন্তান নিয়ে জমিলা ফিরে আসে। এর আগে জমিলার বড় বোনও স্বামীর বাড়ি থেকে ফিরে এসেছে। দিনমজুরি করে নয় সদস্যের ভরণপোষণ দেওয়া আমার পক্ষে অসম্ভব।’ 

জমিলার নানী সুফিয়া বেওয়া বলেন, ‘আমার ভিক্ষার চাল দিয়ে মাঝেমধ্যে জমিলার সন্তানের খরচ চলতো। জমিলা তার সন্তানের জন্য অনেক নির্যাতন সহ্য করেছে।’  

বলদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান বলেন, শিশুটি আপাতত রফিকুল ও এলিনা বেগম দম্পতির কাছে রয়েছে। তাকে তার মায়ের কাছে ফেরত দেওয়া হবে। 

ভূরুঙ্গামারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপক কুমার দেব শর্মা বলেন, বিষয়টি তিনি জানেন না। খোঁজখবর নিয়ে ওই পরিবারকে সবধরনের সহযোগিতা করা হবে।