সারা বাংলা

খুপড়ি ঘরেই ভূমিহীন আমেনার দুই যুগ পার

ফেনী সদর উপজেলার ফরহাদ নগর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড। গ্রামের নাম চরলালা। দক্ষিণে ফেনী নদী, পশ্চিমে মুহুরী নদী, গ্রামের পূর্ব পাশে ঘোপাল ইউনিয়নের সীমান্ত। মূল ইউনিয়ন ফরহাদ নগরের সাথে যাতায়ত করতে হয় খেয়া নৌকায় বা সমিতি বাজার হয়ে খাইয়া বাজার দিয়ে।

এ গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন মৃত মাহফুজুর রহমানের স্ত্রী ভূমিহীন আমেনা খাতুন। স্বামী মাহফুজুর রহমান ছিলেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী । স্বামী মাহফুজ মারা যান প্রায় এক যুগ আগে। সেই থেকে গ্রামে সবাই তাকে আন্ধা বুড়ি হিসেবে চিনে।

এলাকাবাসী আবু তাহের জানান, আজ থেকে প্রায় ২০ বছর আগে এক টুকরো (১২ শতক) ভূমি পাওয়ার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করেছিল আমেন খাতুন ও তার ছেলে সিরাজ। কিন্তু নানা জটিলতার কারণে তারা ভূমি বন্দোবস্ত পায়নি। ফলে বর্তমানে তারা যে জায়গায় বসবাস করছে সে জায়গাটিও সরকারি। ফলে গত দুইযুগ ধরে আমেনা থাকেন পাটি পাতা ও সিমেন্টের বস্তা ঘেরা একটি খুপড়ি ঘরে। শীতের রাতে হিমেল হাওয়া, দিনের সূর্য আর বৃষ্টির পানিরে সাথে যুদ্ধ করে কোনোরকম বেঁচে আছে আমেনা খাতুন।  

ভোটার আইডি কার্ডের জন্ম তারিখ অনুসারে তার বয়স প্রায় ৭৪ বছর । কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় একটি ঘর তো দূরের কথা, পান না বয়স্ক ভাতা কিংবা বিধবা ভাতাও। তাই তাকে ভিক্ষাবৃত্তি করে আধপেট খেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে। উপায়ন্তর না দেখে গ্রামে ঘুরে ঘুরে তিনি এক বেলা আহার যোগাড় করে দু-বেলা খেয়ে জীবন কাটান। যাযাবর না হলেও থাকেন যাযাবরের মতো। সামান্য বাতাসে দুলছে খুপড়ি ঘরটি। বর্তমানে রোগে-শোকে কাতর তিনি। হারিয়ে ফেলেছেন মানসিক ভারসাম্যও।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকীতে দেশের কোন মানুষ ভূমিহীন ও গৃহহীন থাকবে না বলে সরকারের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছিলেন মুজিববর্ষে একটা মানুষও ভূমিহীন থাকবে না, গৃহহীন থাকবে না। কিন্তু চরলালা গ্রামের আমেনার দিকে তাকায়নি ইউপি সদস্য থেকে শুরু করে স্থানীয় চেয়ারম্যানের কেউ।

রোববার (৭ ফেব্রুয়ারি)  দুপুরে এ প্রতিবেদক চরলালা গ্রামে গিয়ে দেখতে পান আমেনা খাতুনের মানবতার জীবনের চিত্র। আমেনা জানান ভূমিহীন ছিলেন তার স্বামী মাহফুজুর রহমান। তিনি মারা যাওয়ার পর তার সন্তানরা তার দেখভাল করা অনেকটা বন্ধ করে দিয়েছেন। তারা ঠিকমতো খোঁজখবর নেন না। যার ফলে দুই মুঠো ভাতের জন্য গ্রামে গ্রামে ঘুরে খাবার জোগাড় করে পেটের ক্ষুধা মেটান। কিন্তু এখন  রোগে শোকে কাতর আমেনা খাতুন। ঠিকভাবে কথা বলতে পারেন না। মানুষের সাহায্য নিয়ে এসেই চলে। মরার আগে তিনি একটি ঘর দেখে যেতে চান। পেতে চান সরকারের দেয়া সাহায্য সহযোগিতা।

ঘরে ঢুকে দেখা গেল একটি চোকির উপর একটি বালিশ। একটি কাঠের তাকে উপর দুটি খালি পাতিল । পাটি পাতা ও সিমেন্টের বস্তা দিয়ে ঘেরা ঘরে দিয়ে দেখা যাচ্ছে বাহিরের সূর্য ও আকাশ। প্রচণ্ড শীতে যখন যুবকরা ও কাবু তখন আমেনা খাতুনকে থাকতে হয় খুপড়ি ঘরে। হিমেল বাতাস, কুয়াশায় ঢেকে যায় খুপড়ি ঘরটি।

স্থানীয় নারী ইউপি সদস্য রাশেদা আক্তার জানান । বৃদ্ধা আমেনা খাতুন তাদের কাছে কখনো যায়নি । ভাতা জন্য আবেদনও করেননি। তাই ভাতা ও ঘর দেয়ার সুযোগ হয়নি।

৫ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবুল বশার খোকা মিয়া, জানান, নদীর ওপারের কারণে তার ব্যাপারে খেয়াল নেই, তবে মহিলা মেম্বার রাশেদা বেগম যদি বিষয়টা আমাদেরকে জানাতো তাহলে আমরা উনার নামের লিস্ট উপরে রাখতাম। এতদিনে উনি ভাতা পেয়ে যেতো। তবে আমাদের এখনো সুযোগ আছে চেয়ারম্যান সাহেব চেষ্টা করলে ভাতা-ঘর উভয় পাবেন।

ফরহাদনগর ইউপি চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন টিপু জানান, নদীর ওপারে হওয়ায় এ গ্রামের কিছু মানুষ বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। এতদিনে তার নজরে আসেনি।  তার জন্য ভাতা ও একটি ঘরের ব্যবস্থা করা হবে দ্রুত ।

ফেনী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসরিন সুলতানা জানান, এসব লিস্ট দেয়ার দায়িত্ব হচ্ছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের। নদীর ওপার বলে দায়িত্ব এড়ানোর সুযোগ নেই। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা যদি সঠিকভাবে লিস্ট দিত তাহলে এতোদিনে আমেনা খাতুন ভাতা ও ঘর পেয়ে যেতেন।