সারা বাংলা

৯ মাস পরে জানা গেলো খুন, প্রেমিকসহ স্ত্রী গ্রেপ্তার

বরগুনায় এক শিক্ষককে হত্যার ৯ মাস পরে হত্যার রহস্য উদঘাটন হয়েছে। হাসতে হাসতে স্বামীকে হত্যার পরিকল্পনা করে নির্মমভাবে ওই শিক্ষককে হত্যা করেছে স্ত্রী ও তার প্রেমিক।

হত্যার পরিকল্পনার ফোনকল রেকর্ডের উদ্ধৃতি দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে ডিবি পুলিশ।

পুলিশ জানায়, গত বছরের ২৩ মে বরগুনা সদর উপজেলার পশ্চিম গোলবুনিয়া শিশু কিশোর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক নাসির হাওলাদারকে ঘুমের ওষুধ খাওয়ানোর পরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে তার স্ত্রী মিতু আক্তার ও তার প্রেমিক রাজু মিয়া। পরে স্বামী হার্ট অ্যাটাক করেছে বলে তড়িঘড়ি করে পরদিন সকাল ১০টায় জানাজা শেষে দাফন করা হয়। হত্যার এ বিষয়টি একরকম ধামাচাপা পড়ে যায়। কিন্তু ঘটনার ৯ মাস পরে পুলিশের হাতে আসে হত্যার পরিকল্পনার ফোনকল রেকর্ড। 

ডিবি পুলিশের ওসি আবুল বাসার জানান, স্বামীর অর্থসম্পদ নিজের করে নেওয়ার জন্য প্রেমিকের সহায়তায় ওই স্কুল শিক্ষককে হত্যার পরিকল্পনাসহ ১৩টি কলরেকর্ড গোয়েন্দার মাধ্যমে পেয়ে বুধবার (১০ ফেব্রুয়ারি) রাতে তারা হাতে পায়। এরপরই সদরের বড়ইতলা এলাকা থেকে প্রথমে প্রেমিক রাজু মিয়াকে আটক করে। প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার কথা স্বীকার করেন রাজু। এরপর নিহতের স্ত্রী মিতু আক্তারকে সদরের থানাপাড়ার নিজ বাসায় অভিযান চালিয়ে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনিও স্বামীকে হত্যার কথা স্বীকার করেন।

এ বিষয়ে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তারিকুল ইসলাম রাইজিংবিডিকে জানান, নিহত শিক্ষকের ভাই জলিল হাওলাদার এ ঘটনায় মিতু ও রাজুকে আসামি করে সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে আটক দু'জনকেই গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ।

বরগুনার অতিরিক্ত পুলিশ ‍সুপার (সদর সার্কেল) মেহেদী হাছান রাইজিংবিডিকে জানান, গত বছরের ১০ মে হাসতে হাসতে স্বামীকে হত্যার এ পরিকল্পনা করেছিলেন নিহত শিক্ষকের স্ত্রী মিতু  ও তার প্রেমিক একই এলাকার বারেকের ছেলে রাজু মিয়া। পুলিশের কাছে হত্যার পরিকল্পনা থেকে হত্যার সম্পূর্ণ বর্ণনা দিয়েছেন হত্যাকারী রাজু। ২৩ মে রাতে বড়ইতলার নিজ বাড়িতে স্বামীকে খাবারের সঙ্গে রাত ৮টায় ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে অজ্ঞান করে স্ত্রী মিতু। রাত ১১টার পরে প্রেমিক রাজুকে ফোন করে বাসায় আসতে বলে মিতু। প্রেমিক রাজু রাত ১১টা ৪০ এর পরে ওই শিক্ষকের বাসায় এসে হাত-পা বেঁধে পায়ের উপরে উঠে বসে রাজু। স্ত্রী মিতু স্বামীর বুকের উপরে উঠে কম্বল দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা করলে প্রাণ ভিক্ষা চান ওই শিক্ষক। টানা দু'ঘন্টা ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে নিস্তেজ হয়ে যায় শিক্ষক নাসিরের দেহ। সফল হয় কিলিং মিশন। তবে তাদের গোয়েন্দার তথ্যের মাধ্যমে ঘটনা জানতে পেরেই ডিবি পুলিশ ও সদর থানা পুলিশের ৪টি টিম অভিযান শুরু করে আসামিদের ধরতে। পরে তাদের আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা হত্যার কথা স্বীকার করেন।

পুলিশের এ কর্মকর্তা আরও জানান, গত মে মাসে করোনাকালীন পরিস্থিতি ভয়াবহ ছিলো বরগুনায়। তাই সেই সময়টা টার্গেট করেই হত্যাকারীরা ভেবেছিলো মৃতদেহ নিয়ে কেউ বাড়াবাড়ি করবে না। ভিড়ও করবে না। তবে পুলিশের কর্মতৎপরতার কারণে দেরিতে হলেও সামনে এসেছে সত্যটা।

নিহতের বড় ভাই ও মামলার বাদী রাইজিংবিডিকে জানান, তারা ভাবতেই পারেননি তাদের ভাইকে হত্যা করা হয়েছে। তার ভাই মারা যাবার পর থেকেই ভাইয়ের সরকারি বেতনসহ সকল সম্পত্তি ভোগ দখল করে আসছিলেন মিতু। স্বামীর পেনশনের টাকার জন্যেও আবেদন করেছেন মিতু।