সারা বাংলা

সাতছড়িতে সাত অভিযান: মিললো যত অস্ত্র

হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে অবস্থিত সংরক্ষিত বনাঞ্চল সাতছড়ি জাতীয় উদ‌্যান যেন অস্ত্রের খনি। সর্বশেষ ২ মার্চ রাতে অভিযান চালিয়ে ১৮টি রকেট লঞ্চারের গোলা উদ্ধার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। সাতছড়িতে অস্ত্র উদ্ধারে এটি সপ্তম অভিযান। এর আগে অস্ত্র উদ্ধারে ২০১৪ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ছয়টি অভিযান চালিয়েছে র‌্যাব।  

বুধবার (৩ মার্চ) সকাল ১১টায় বিজিবি-৫৫ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফট্যানেন্ট কর্নেল এসএনএম সামীউন্নবী চৌধুরী সংবাদ সম্মেলন করে অস্ত্র উদ্ধারের তথ্য জানিয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে, রকেট লঞ্চারের গোলাগুলো অনেক পুরনো। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের দেড় কিলোমিটার বাংলাদেশের সাতছড়ি বনের ভেতরে মাটি খুঁড়ে এগুলো রাখা হয়েছিল। গোলাগুলো প্লাস্টিকের কাভারের ভেতরে পলিথিনে মোড়ানো ছিল। খবর পেয়ে বিজিবি সেখানে অভিযান শুরু করে।

লেফট্যানেন্ট কর্নেল এসএনএম সামীউন্নবী চৌধুরী আরও জানান, এ ব্যাপারে মামলা দায়ের করা হবে এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে এখনও এগুলোর সঙ্গে জড়িত কাউকে শনাক্ত করা যায়নি।

সাতছড়ি বন্যপ্রাণি সহকারী রেঞ্জ কর্মকর্তা মাহমুদ হোসেন জানান, এ বনে নানা প্রজাতির প্রাণি রয়েছে। রয়েছে গভীর বন। এসব প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করার জন্য দেশের নানা প্রান্ত থেকে প্রতিদিন কয়েকশ’ পর্যটকের আগমন হয়। ২০১৪ সাল থেকে পরপর এ পর্যন্ত সাত দফায় এ বনে অভিযান চালিয়ে গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে র‌্যাব ও বিজিবি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন পর্যটক বলেন, ‘এ বনে প্রাণি ও উদ্ভিদ আছে বলেই আমরা ভ্রমণ করছি। কিন্তু মাটি খুঁড়লেই অস্ত্র পাওয়া যায় জানা ছিল না। সাতছড়ি যেন অস্ত্রের খনি। পর্যটক নিরাপত্তায় এখানে পুলিশ ফাঁড়ি করা হোক।’বিজিবির সূত্র জানায়, ১৯৯৬ সালের আগে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন ‘ত্রিপুরা পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (টিপিডিএফ)’ গোপনে সাতছড়ি গহীন অরণ‌্যে আস্তানা বানায়। টিলার ওপর অতিগোপনে পরিত্যক্ত স্থাপনা তৈরি করে অস্ত্র সংগ্রহ ও সংগঠনের তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছিল। দীর্ঘ সময় পর তাদের সংগঠনের অবস্থান ও গোপনে নির্মিত স্থাপনাসহ অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদের বিষয়ে গোয়েন্দা তৎপরতা দেখা দেয়। বিষয়টি আঁচ করে অস্ত্র ও গোলাবারুদ পার্শ্ববর্তী টিলাসমূহে গর্ত করে সংরক্ষণ করে ভারতে চলে যায় দলটি।

ঘটনাস্থলের পাশে সংরক্ষিত বনাঞ্চলসহ সাতছড়ি চা বাগান ও আনুমানিক তিন কিলোমিটার দক্ষিণে ভারতের পশ্চিম ত্রিপুরার আগরতলা মোহনগঞ্জ থানার দীঘাবাড়ি ও আরকে পার্ক গ্রাম এলাকায় বিএসএফ-এর ক্যাম্প রয়েছে। 

সাতছড়ি বিজিবি ৫৫ ব্যাটালিয়ন হবিগঞ্জের অধীন। এছাড়া সীমান্ত পরবর্তী ভারতীয় কাঁটাতারের বেড়ার পাশাপাশি নোম্যান্স ল্যান্ড সংলগ্ন পাহাড়ি ছড়া। এজন‌্য বিএসএফ ও বিজিবির টহলকে আড়াল করে সীমানা পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করা ভৌগোলিকভাবে সুবিধা রয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ১ জুন থেকে ২০১৯ সালের ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের অরণ্যে ছয় দফা অভিযান চালায় র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। 

অভিযানগুলোতে ৩৩৪টি কামান বিধ্বংসী রকেট, ২৯৬টি রকেট চার্জার, একটি রকেট লঞ্চার, ১৯টি মেশিনগান, আটটি ম্যাগাজিন, একটি বেটাগান, ছয়টি এসএলআর, একটি অটোরাইফেল, নয়টি মেশিনগানের অতিরিক্ত খালি ব্যারেল, প্রায় ১৬ হাজার রাউন্ড রাবার বুলেট, ২৫০টি গুলি ধারণক্ষমতা সম্পন্ন আটটি বেল্ট, উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন একটি রেডিও, এসএমজি ও এলএমজির আট হাজার ৩৬০ রাউন্ড, থ্রি নট থ্রি রাইফেলের ১৫২ রাউন্ড গুলি, পিস্তলের ৫১৭ রাউন্ড গুলি, মেশিনগানের নয় হাজার ৪৫৪ রাউন্ড বুলেট, ১০টি হাই এক্সক্লুসিভ ৪০ এমএম অ্যান্টি-ট্যাংক রকেট ও ১৩টি রকেট লঞ্চারের শেলসহ বেশকিছু বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়।