সারা বাংলা

ভিসি কলিমুল্লাহকে বেরোবিতে অবাঞ্ছিত ঘোষণা

বেগম রোকেয়ো বিশ্ববিদ‌্যালয়ের (বেরোবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। 

বৃহস্পতিবার (৪ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন ও শিক্ষামন্ত্রীকে নিয়ে মিথ্যাচার করায় উপাচার্যকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে শিক্ষকদের সংগঠন বঙ্গবন্ধু পরিষদ।

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে মিথ্যাচার করার প্রতিবাদে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘোষণা দেয় সংগঠনটি।

বৃহস্পতিবার বেলা আড়াইটার দিকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় প্রশাসনিক ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে এ ঘোষণা দেন বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মশিউর রহমান।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে ইউজিসির তদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখান করে শিক্ষামন্ত্রীসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিয়ে নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন। এর প্রতিবাদে রংপুরে তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলন করে বঙ্গবন্ধু পরিষদ। ক্যাম্পাসে না গিয়ে ঢাকায় বসে মিথ্যাচার করায় উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহকে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে আহ্বান জানান সংগঠনটির নেতারা।

সংবাদ সম্মেলনে মশিউর রহমান বলেন, ‘উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ মহামান্য রাষ্ট্রপতির নির্দেশনা অমান্য করে ক্যাম্পাসে ধারাবাহিকভাবে অনুপস্থিত থেকে রেকর্ড করেছেন। উপাচার্য হিসেবে যোগদান করার পর থেকে আজকে ১৩৫৬ দিন অতিবাহিত হয়েছে। এরমধ্যে তিনি ১১১৯ দিনই ক্যাম্পাসে না থেকে ঢাকায় ছিলেন। অথচ উপাচার্য ঢাকায় বসে সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ২০-২২ ঘণ্টা কাজ করেন বলে মিথ্যাচার করেছেন।’ 

বঙ্গবন্ধু পরিষদ নেতা আরও বলেন, ‘‘বিভিন্ন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া, ইউজিসির নির্দেশনা অমান্য করে জনবল নিয়োগ, শিক্ষক ও জনবল নিয়োগে দুর্নীতি ও অনিয়ম, নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি হয়েও বিশ্ববিদ‌্যালয়ে অনুপস্থিতি থাকা, নিরাপত্তাহীন ক্যাম্পাস, ইচ্ছেমত পদোন্নতি, আইন লঙ্ঘন করে অ‌্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক পদ দখল করা, ক্রয় প্রক্রিয়ায় নীতিমালা লঙ্ঘন, অনুমোদিত ও অনিয়মতান্ত্রিক ফাউন্ডেশন ট্রেইনিং, ঢাকায় লিয়াজো অফিসে অতিরিক্ত খরচ, অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা, চরম শিক্ষক সংকটসহ নানান অনিয়ম দুর্নীতির সঙ্গে উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ সরাসরি জড়িত।

‘সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্য মহোদয় শিক্ষামন্ত্রীকে আক্রমণ করে কথা বলেছেন। সরকারের দায়িত্বশীল কর্তাদের বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন। এমনকি ইউজিসি বিষয়েও বাজে মন্তব্য করেছেন। সরকারের উন্নয়নসহ সবকিছু বিষয়েই বিভ্রান্তিমূলক মন্তব্য করেছেন। আমরা তাকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবাঞ্চিত ঘোষণা করছি। মিথ্যাচারের জন্য তাকে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে এবং তার দাবিগুলো সত্য প্রমাণিত করতে হবে। নইলে তাকে ক্যাম্পাসে ঢুকতে দেওয়া হবে না।’’

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু পরিষদের সহ সভাপতি এইচ এম তরিকুল ইসলাম, রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. আব্দুল লতিফসহ পরিষদের অন্য সদস্যরা।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি বেরোবি উপাচার্যের দুর্নীতিতে জড়িত থাকার প্রমাণ ইউজিসির তদন্ত কমিটি পেয়েছে বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। এটিকে মিথ্যা সংবাদ আখ্যা দিয়ে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করতেই ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে গিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ।

এর আগে বেরোবির শেখ হাসিনা হল এবং ড. ওয়াজেদ গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট নির্মাণে একাধিক অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ইউজিসিকে নির্দেশ দেওয়া হয়। নির্দেশনা পেয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তদন্তে নামে ইউজিসি। 

আগামী ১৪ মার্চ ভিসির দুর্নীতির ৪৫টি অভিযোগের প্রেক্ষিতে ইউজিসির একটি তদন্ত টিম তদন্ত করতে বেরোবিতে যাওয়ার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছে বঙ্গবন্ধু পরিষদ।