সারা বাংলা

কবে মিলবে যানজটমুক্ত হিলি স্থলবন্দর? 

যানজট এখন দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরের নিত্যসঙ্গী।  রাস্তায় নামলেই যানজট।  বন্দরের চারমাথা মোড় থেকে দক্ষিণে মহিলা কলেজ, পশ্চিমে চেকপোস্ট বন্দরে প্রবেশ পথ, পূর্ব দিকে বড় ডাঙ্গাপাড় আর উত্তরে হাসপাতাল সড়কপুরো এলাকাই ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে স্থবির হয়ে থাকে। ৫ মিনিটের রাস্তা যেতে সময় লাগে দেড় ঘণ্টা। স্থানীয়রা বলছেন, এই চিত্র রাজধানীর ঢাকার যানজটকেও হার মানায়। তাদের প্রশ্ন, কবে নাগাদ এই যানজট থেকে  মুক্তি মিলবে?   সরেজমিনে বৃহস্পতিবার (১৮ মার্চ) দেখা গেছে, সারাদিনে বন্দরে প্রবেশ করেছে দেশি ট্রাক প্রায় ৬০০। আর ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাক এসেছে ৪০০ শতাধিক। এছাড়া শত শত ভারতীয় ও দেশি ট্রাক রাস্তার দুই পাশে বন্দরে প্রবেশের অপেক্ষায় ছিল। 

স্থানীয়রা বলছেন, দিনাজপুর থেকে ছেড়ে আসা বাস, ঢাকার কোচ, ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন হিলিতে আসে। আবার হিলি থেকে জয়পুরহাট, ঘোড়াঘাট দিয়ে দেশে দক্ষিণ অঞ্চলে বাস, কোচ ও পণ্যবাহী ট্রাকসহ অন‌্যান‌্য যানবাহন যাতায়াত করে। হিলি শহর যেন একটি যানজটপুরী। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লেগে থাকে এই যানজট।  আর এই যানজটের জাঁতাকলে পুলিশের গাড়ি, অ‌্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন ভ্যান, রিকশা, বাইসাইকেল, মোটরসাইকেল ও পথচারীরা।  

কথা হয় যানজটে আটকাপড়া অ‌্যাম্বুলেন্স-চালক মজিবর রহমানের সঙ্গে। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘যানজটে পড়ে প্রায় পৌনে এক ঘণ্ট দাঁড়িয়ে আছি। যেতে পারছি না। গাড়িতে রোগী আছে। দিনাজপুর মেডিক্যালে নিয়ে যেতে হবে।’

প্রায় একই ধরনের ক্ষোভের কথা জানালেন দিনাজপুরগামী বাসচালক আতিকুর রহমান। তিনি  বলেন, ‘এই যানজট আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। নতুন কিছু না! সময়মতো পৌঁছাতে না পারলে জরিমানা দিতে হয়।’

আধাঘণ্টা আগে বন্দর থেকে বের হয়েছেন বলে জানালেন পণ্যবাহী ট্রাকচালক রুবেল হোসেন। তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত হিলি ছাড়তে পারলাম না।’

একজন মোটরসাইকেল আরোহী জানান, ‘আমার ছোট গাড়ি। তারপরও সামনে এগুনোর কোনো উপায় নেই। যাব বহুদূর। এখানেই হয় সন্ধ্যা নেমে আসবে।’

যানজটে আটকাপড়া ভ্যানচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘হিলি বাজারে যাত্রী তুলেছি। বন্দরে যাবো, সিপিতে আটকা পড়ে আছি। যে অবস্থা, কতক্ষণ যে লাগবে যেতে? ভাড়া গাড়ি চালাই। যানজটের কারণে বর্তমান যা কামাই হয়, তা দিয়ে ভাড়া দেবো। আয় কম হলে সংসারের চাহিদা মেটাবো কী দিয়ে?’

দিনাজপুরেগামী বাসে বসে থাকা এক যাত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘জরুরি কাজে জেলায় যাচ্ছি, যে রাস্তায় ভিড়, কখন যে পৌঁছাবো, তা নিয়ে আশঙ্কায় আছি। সময়মতো যেতে না পারলে অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে।’

পথচারী লুৎফর রহমান বলেন, ‘এই শহরের রাস্তা-ঘাটের বেহাল দশা। প্রতিদিন হাজার হাজার ভারতীয় ও দেশি ট্রাক এই বন্দরে আসে। কয়েকদিন ধরে যানজট লেগেই আছে। আমরা হেটে বাজার বা কোনো কাজে সময়মতো যেতে পারছি না। হিলিতে যদি একটা ট্রাক টার্মিনাল তৈরি হয়, তাহলেই মনে হয় যানজট কমে যাবে।’

হিলি স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানি কারক গ্রুপের সভাপতি ও হাকিমপুর (হিলি) উপজেলা চেয়ারম্যান হারুন উর রশিদ হারুন রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘হিলিতে যানজট একটি মরণ ফাঁদ। এর প্রভাবে স্থানীয়দের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। হিলি স্থলবন্দরের পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় এমন পরিণতি হয়েছে। ইতোমধ্যে হাকিমপুর পৌরমেয়র ও দিনাজপুর ৬ আসনের সংসদ সদস‌্যের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা আশ্বস্ত করেছেন, দুই চারের মধ্যে হিলিতে একটা অস্থায়ী ট্রাক টার্মিনাল তৈরি করা হবে।’