সারা বাংলা

দুর্ঘটনায় ১৭ মৃত‌্যু: মায়ের শোকে বাকরুদ্ধ মেহেদী

‘রাজশাহীতে যাওয়ার সময় মা বলেছিলেন রাতের মধ্যে ফিরে আসবেন। কিন্তু এটা কী হলো? এখন আমার মা কোথায়? আব্বার মতো মাও তো আমাকে ছেড়ে গেল। আমাকে এখন কে বলবে- তুই ভালো করে পড়ালেখা করিস। বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেতে হবে। আমার যে আর কেউ থাকলো না। খালা-খালুর সাথে বেড়াতে গিয়ে মা আমাকে ছেড়ে গেল।’ 

থেমে থেমে কথাগুলো বলে বাকরুদ্ধ হয়ে যান। তারপর চাপা কান্নায় হাহাকার করে ওঠেন মেহেদী হাসান তুবা। শুক্রবার (২৬ মার্চ) রাজশাহীর কাটাখালীতে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো কামরুন্নাহারের একমাত্র ছেলে তিনি।

মেহেদী হাসান তুবা (২০) এবার উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। শুক্রবার (২৬ মার্চ) ভোরে ঘুম থেকে উঠতে দেরি হওয়ায় মায়ের সঙ্গে রাজশাহী যাওয়া হয়নি তার। সেই কথা মনে করে বুকে চেপে ধরে বিলাপ করছেন।

মেহেদীর বাবা শাহজাহান মন্ডল তোতা ২০০০ সালে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। দুই দশক পর বাবার মতই সড়কে প্রাণ গেল তার বিধবা মা কামরুন্নাহারেরও। এখন বাবার পর মাকে হারিয়ে শোকে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন মেহেদী। শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে আশপাশে থাকা মানুষদের মুখের দিকে চেয়ে দেখছে। কান্নাটাও যেন ভুলে গেছেন।

মেহেদী বলেন, ‘আব্বার আদর স্নেহ ভালোবাসা বঞ্চিত হয়েছি। মা আমাকে আগলে রেখে বড় করেছেন। আমাকে নিয়ে তার অনেক স্বপ্ন ছিল। আমার খালা-খালুও আমাকে খুব ভালোবাসতেন। আজ তারা কেউই বেঁচে নেই। সবাই আমার আব্বার মতই সড়কে মারা গেল। ঘুম থেকে উঠতে দেরি হওয়ায় শুধু আমিই প্রাণে বেঁচে গেলাম। মায়ের সঙ্গে মাইক্রোবাসে গেলেই তো ভালো হতো।’

শুক্রবার বেলা পৌনে ২টার দিকে রাজশাহীর কাটাখালীতে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান কামরুন্নাহার। তিনি রংপুরের পীরগঞ্জের চৈত্রকোল ইউনিয়নের বড় রাজারামপুর গ্রামের আব্দুল করিম সরকারের মেয়ে। 

শুক্রবার মেহেদীর ছোট খালা শামসুন্নাহার (৩২) ও খালু সালাহউদ্দিনের (৩৮) সঙ্গে কামরুন্নাহারও রাজশাহীতে বেড়াতে গিয়েছিলেন। কাটাখালীতে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় কামরুন্নাহারসহ (৩৭) তার ছোট বোন, বোনের স্বামী এবং আট বছরের ছেলে সাজিদ ও আঠারো মাসের মেয়ে সাফা প্রাণ হারান।

নিহত কামরুন্নাহারের চাচাতো ভাই নুরুল ইসলাম জানান, শুক্রবার সকালে উপজেলা সদরের রফিকুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ীর কালো রংয়ের হায়েস মাইক্রোবাস নিয়ে কয়েকজন মিলে রাজশাহীতে বেড়ানোর উদ্দেশে রওনা দেন। মাইক্রোবাসটি রাজশাহীর কাটাখালী থানার সামনে পৌঁছলে বিপরীত দিক থেকে আসা হানিফ পরিবহনের একটি বাস সামনে থেকে ধাক্কা দেয়। এতে ওই মাইক্রোবাসের সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে আগুন ধরে যায়। মাইক্রোবাসে থাকা সবাই দগ্ধ হয়ে মারা যান। শুধু প্রাণে বেঁচে যান চালক হানিফ মিয়া। তবে তার অবস্থাও আশঙ্কাজনক।

পীরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরেস চন্দ্র বলেন, ‘রাজশাহীর ওই দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত সতেরো জনের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। নিহতদের লাশ দ্রুত পীরগঞ্জে আনার সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে। দুর্ঘটনার পর চালক হানিফ হোসেন পঁচাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাজশাহী মেডিক‌্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।’