সারা বাংলা

টঙ্গী-গাজীপুর চৌরাস্তা: ১২ কিলোমিটার সড়ক নিয়ে দুশ্চিন্তা

আসন্ন বর্ষা মৌসুম ও ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে টঙ্গী থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ১২ কিলোমিটার অংশ নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে। 

সড়কটিতে চলাচলকারীরা বলছেন, ‘উন্নয়ন কাজের জন্য এখনই চলাচল করতে নানা সমস্যা হচ্ছে। বৃষ্টি শুরু হলে মানুষের ভোগান্তি বাড়বে। ঈদে ঘরে ফেরা মানুষের চাপ সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।’

তবে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘সড়ক সচলে পুরোদমে কাজ চলছে। ঈদের আগেই যানজট মুক্ত পরিবেশে যাত্রীরা এই ১২ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে পারবেন।’

সংশ্লিষ্টরা জানান, টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার সড়কের বিভিন্ন স্থানে ফ্লাইওভার, ওভারপাস, বিআরটি, সাধারণ যান চলাচলের পৃথক লেন নির্মাণ ও পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেনের নির্মাণকাজ একসঙ্গে চলছে। যার কোনোটিই শেষ হয়নি। আগামী দেড়-দুই মাসেও এগুলো শেষ সম্ভব হবে না। বর্ষা শুরু হলে বর্তমানে যে গতিতে কাজ চলছে, তাতে ছেদ পড়বে। 

ফলে ঈদুল ফিতর ও বর্ষা মৌসুম নিয়ে বিআরটি কর্র্তৃপক্ষকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়তে হবে। ঈদে ঘরমুখো লাখ লাখ যাত্রীর গন্তব্যে পৌঁছানোর চাপ থাকবে যেমন, তেমনি বর্ষায় সড়কের অবস্থা আরও নাজুক হতে পারে।

২০১২ সালে গাজীপুর থেকে রাজধানীর বিমানবন্দর পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার সড়কে গ্রেটার ঢাকা সাসটেইনেবল আরবান প্রজেক্টের আওতায় দেশের প্রথম বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্প শুরু হয়। ২ হাজার ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্প ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। পরে মেয়াদ ২০১৮ সালের ডিসেম্বর করা হয় এবং ব্যয় দ্বিগুণ বেড়ে দাঁড়ায় ৪ হাজার ২৬৪ কোটি ৮২ লাখ ১৪ টাকা। 

এরপর আরও দুই দফা প্রকল্পের সময় বাড়িয়ে ২০২২ সালের জুনে শেষ করার কথা রয়েছে। ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ২৬৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা। সরকারের পাশাপাশি এডিবি, ফরাসি উন্নয়ন সংস্থা (এএফডি) ও গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট ফ্যাসিলিটির (ডিইএফ) অর্থায়ন করছে।

বিআরটি প্রকল্পের পরিচালক ও সড়ক বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী এ.এস.এম. ইলিয়াস শাহ জানান, গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সড়ক বিভাগের ৫১ শতাংশ ও প্রকল্পের ৫২ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ বিআরটি সড়কে সাতটি ফ্লাইওভার, ২০টি বিআরটি স্টেশন নির্মাণ করা হবে। সাতটি ফ্লাইওভারের কোনোটির ওপর আবার কোনোটির নিচ দিয়ে বিআরটি বাস চলাচল করবে। আবার কোনো ফ্লাইওভারের ওপর দিয়ে বিআরটি ও গণপরিবহন একসঙ্গে চলবে। ধীরগতির যান চলাচলে আলাদা আড়াই মিটার প্রস্থের লেন ও সাড়ে চার মিটার ফুটপাত থাকবে বলে জানান তিনি।

এদিকে দীর্ঘ সময় নির্মাণকাজ চলার কারণে টঙ্গী থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার সড়কে বেড়েছে যানজট ও জনদুর্ভোগ। পুরনো পিচঢালা সড়ক ভেঙে নতুন প্রকল্পের কাজ চলার কারণে তৈরি হয়েছে ছোট-বড় গর্ত। সেগুলো ভরাট করা হয়েছে ইট-সুরকি ফেলে, যা যানবাহনের চাপে উঠে পুরো এলাকা ধুলোয় ছেয়ে যাচ্ছে। দিনে কয়েকবার পানি ছিটানো হলেও তা খুব একটা কাজে আসছে না। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর ধুলোর কারণে ওই ১২ কিলোমিটার পথে চলাচল করা দুষ্কর হয়ে পড়ে।

বিআরটি কর্তৃপক্ষ জানায়, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রকল্পের বাস্তবায়নকাজ এখন পুরোদমে চলছে। ২০২২ সালের জুনে গাজীপুর-বিমানবন্দর অংশটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা সম্ভব হবে। এ রুটটি চালু হলে গণপরিবহন ব্যবস্থায় নতুন মাত্রা যোগ হবে। সাড়ে ২০ কিলোমিটার পথ যেতে সর্বোচ্চ আধা-ঘণ্টা লাগবে। ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে যাতায়াতে স্বাচ্ছন্দ্য ফিরে আসবে। যাত্রীরা দ্রুত কর্মস্থলে পৌঁছতে পারবেন।

এ প্রকল্পের আওতায় ১৬ কিলোমিটার অ্যাট গ্রেড ও সাড়ে ৪ কিলোমিটার এলিভেটেড মেইন করিডোর নির্মাণ করা হবে। মেইন করিডোরসংলগ্ন ১১৩টি বা ৫৬ কিলোমিটার সংযোগ সড়কের উন্নয়ন করা হবে। বিআরটি বাস ডিপোসহ বিভিন্ন স্থানে ২০টি স্টপেজ থাকবে। 

জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রকল্পের আওতায় টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ড্রেন নির্মাণের কাজ চলছে। টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত মোট ২৮ কিলোমিটার ড্রেন ও ১০টি কাঁচাবাজার নির্মাণ করা হবে। এছাড়া ১৪০টি আর্টিকুলেটেড বাস ক্রয় করা হবে। 

এই রুটে ধীরগতির যানবাহন চলাচল করবে পৃথক লেনে। দ্রুতগতির যান চলাচলের জন্য সড়কের মাঝ বরাবর দুই লেন পৃথক করা হবে। সেখানে দ্রুত, নিরাপদ, সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব পরিবহন ব্যবস্থায় ঘণ্টায় ৪০ হাজার যাত্রী চলাচল করতে পারবে।