সারা বাংলা

বাবা-মায়ের স্বপ্ন: মুগ্ধর নাম ছড়িয়ে যাবে দেশ-বিদেশে

রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার মুকিদুল ইসলাম মুগ্ধ। জাতীয় ক্রিকেট দলে ডাক পেয়েছেন। ছেলে জাতীয় ক্রিকেট দলে জায়গা করে নিয়েছেন। এমন সংবাদে সবচেয়ে উচ্ছ্বসিত হয়েছেন মুগ্ধর বাবা-মা।

মিঠাপুকুরের শীতলগাড়ি গ্রামের ব্যবসায়ী জাহিদুল ইসলাম ও মমতাজ বেগম বিথীর ছেলে মুগ্ধ। তাদের স্বপ্ন- দেশে বিদেশে ছড়িয়ে যাবে ছেলের সুনাম।

সপ্তম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় বিকেএসপিতে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। সেখান থেকে জেএসসি, এসএসসি ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছেন। বিকেএসপিতে খেলার পাশাপাশি অনূর্ধ্ব ১৭, ১৮ ও ১৯ দলে খেলেছেন। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু জাতীয় ক্রিকেট লিগে রংপুর বিভাগের হয়ে খেলছেন।

ঘরোয়া ক্রিকেটে নজরকাড়া পারফরম্যান্স করে প্রথমবারের মতো জাতীয় দলে ডাক পেয়েছেন দ্রুতগতির বোলার মুকিদুল ইসলাম মুগ্ধ। শ্রীলঙ্কা সিরিজের ২১ সদস্যের প্রাথমিক স্কোয়াডে তার নাম রয়েছে। ৯ এপ্রিল দল ঘোষণার পর বিষয়টি নিয়ে কথা হয় মুগ্ধর পরিবারের সঙ্গে। 

মুগ্ধর এ উঠে আসার পেছনে রয়েছে দুর্দান্ত লড়াকু মানসিকতা। জন্মের পর তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখতে হয় ৪০ দিন। তিন বছর বয়সে দুই পা বাঁকা হয়ে মুড়িয়ে যেতে শুরু করে। ডাক্তার পরিয়ে দেন লোহার জুতা। জানিয়ে দেন- শুধু হাঁটা যাবে, দৌড়াতে গেলে বরণ করতে হতে পারে পঙ্গুত্ব। সেই লোহার শিকল ভাঙা মুকিদুল ইসলাম মুগ্ধ এখন জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়। শ্রীলঙ্কা সফরের জন্য ডাক পেয়েছেন স্বপ্নের ঠিকানায়।

করোনা সংক্রমণের কারণে স্থগিত হয়ে যাওয়া চলতি জাতীয় লিগের শেষ ম্যাচে রংপুরের জয়ের নায়ক ছিলেন এই তরুণ। রংপুর ক্রিকেট গার্ডেনে দুই ইনিংসে ছয় উইকেট করে মোট ১২ উইকেট নিয়ে জয় এনে দিয়েছিলেন রংপুরকে।

জাতীয় দলে ডাক পাওয়া নিয়ে মুগ্ধ বলেন, ‘আল্লাহর রহমত। অনেক ভালো লাগছে। মা-বাবা, গ্রামবাসী, আমার সতীর্থরা সবাই খুশি। সবার কাছ থেকে আমি বিভিন্ন সময়ে সাহস পেয়েছি। পেসারদের আসল জিনিস হলো ফিটনেস ধরে রাখা। পেস বোলারের অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ফিটনেস। কিছুদিন আগে আমি এইচপি থেকে এসেছি। ওখানে ফিটনেস নিয়ে অনেক কাজ করেছি। খেলার মাঝে মাঝে জিম ও রানিং করেছি নিয়মিত। জাতীয় লিগেও চেষ্টা করেছি ভালো করার জন্য।’

এদিকে জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার খবরে মুগ্ধর গ্রামের বাড়িতে লোকজন ভিড় করছে। পরিবারসহ গ্রামের সবার মধ্যে একটা অন্যরকম অনুভূতি কাজ করছে। ছেলের জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পাওয়ায় মা-বাবা দুজনেই খুব আনন্দিত। 

একমাত্র ছেলের জাতীয় দলে ডাক পাওয়া নিয়ে জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, আমি আজ অনেক খুশি ও গর্বিত। দেশবাসীর কাছে ছেলের জন্য দোয়া চাই। কিছুদিন আগে ওর বোলিং সাফল্য দেখে প্রত্যাশা করেছিলাম মুগ্ধ জাতীয় দলে খেলবে। দেশ-বিদেশে তার নাম ছড়িয়ে পড়বে। আজ সেটা সত্যি হলো।’

মুগ্ধর মা মমতাজ বেগম বিথী বলেন, ‘আমার খুব ভালো লাগছে। ছেলে জাতীয় দলে চান্স পেয়েছে, আল্লাহর কাছে এটাই আমাদের চাওয়া ছিলো। তাকে নিয়ে আমাদের অনেক আশা। আমাদের মনে আজ অনেক আনন্দ। ছেলে জাতীয় দলে খেলবে।’ 

ছেলেকে পায়ে লোহার জুতা পরানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘ছোটবেলায় মুগ্ধর পায়ে সমস্যা ছিল। যখন ওর তিন বছর বয়স, তখন ঠিকমতো হাঁটতেও পারত না। দাঁড়ানোর চেষ্টা করলে দুই হাঁটু একসঙ্গে লেগে যেত। পরে ডা. খন্দকার হামিদুল হককে দেখালে তিনি মুগ্ধর পায়ে লোহার জুতা পরানোর পরামর্শ দেন। 

‘চিকিৎসকের পরামর্শে ছেলেকে দুই হাজার টাকা দিয়ে এক জোড়া লোহার জুতা কিনে দিয়েছিলাম। সেই জুতা পরে মুগ্ধ দাঁড়াত। হেঁটে বেড়ানোর চেষ্টা করত। এখন সেই সমস্যা নেই। গ্রামের সবাই ওকে ভালোবাসে।’’

উল্লেখ্য, গত এক সপ্তাহ আগেও রংপুর ক্রিকেট গার্ডেনে জাতীয় ক্রিকেট লিগের খেলায় ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন খুলনাকে হারানোর দৃশ্য দেখেছেন মুগ্ধর পরিবার। সেই ম্যাচে ১২ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরার পুরস্কার পেয়েছেন রংপুরের দ্রুতগতির বোলার মুগ্ধ। ছেলের বোলিং নৈপুণ্য থেকে পুরস্কার গ্রহণ সবই মাঠে বসে উপভোগ করেছেন তারা।

২০১৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন টুয়েন্টি-টুয়েন্টি ক্রিকেট লিগে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান-বিকেএসপি ক্রিকেট দলের হয়ে টি-টুয়েন্টিতে আত্মপ্রকাশ ঘটে তরুণ এই ক্রিকেটারের। একই বছরের ১২ মার্চ ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে বিকেএসপি ক্রিকেট দলের হয়ে লিস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে। 

ইনসেপ্টা রংপুর রেঞ্জার্সের হয়ে বিপিএলে ১৯ বছরের এ তরুণ পেস-স্লোয়ারে ছড়িয়ে চলেছেন মুগ্ধতা। শ্রীলঙ্কা সফর উপলক্ষে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) শুক্রবার (৯ মার্চ) ২১ সদস্যের দল ঘোষণা করে। মুকিদুল ইসলাম মুগ্ধ যেখানে নতুন মুখ হিসেবে দলে জায়গা করে নেন।