সারা বাংলা

লকডাউন শুনলেই আঁতকে ওঠেন খেটে খাওয়া মানুষ

‘লকডাউন’ শব্দটা শুনলেই আঁতকে ওঠেন খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষ। বিশেষ করে হতদরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষের মনের মধ্যে নেমে আসে হাহাকার। লকডাউনে দিন এনে দিন খাওয়া মেহনতি মানুষগুলোর শ্রম বন্ধ থাকায় শুরু হয়ে যায় নিদারুণ কষ্ট।

মহামারি করেনায় টানা ৭ দিনের লকডাউনে শ্রম বিক্রির ক্ষেত্রগুলো বন্ধ থাকায় রংপুর অঞ্চলের প্রায় ৮০ লাখ ক্ষেতমজুর-দিনমজুর ও শ্রমজীবী আয় বঞ্চিত হয়েছেন। ফের ১৪ এপ্রিল থেকে কঠোর লকডাউনের ঘোষণায় হতাশায় পড়েছেন তারা।

মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) সকালে নগরীর শাপলা চত্বর এলাকায় এমন অসংখ‌্য মানুষকে কাজের জন‌্য কোদাল ও ডালি নিয়ে বসে থাকতে দেখা যায়।

কথা হয় রাজমিস্ত্রী (শ্রমিক) আবু বক্করে সঙ্গে। কাজ না পাওয়াতে তার চোখেমুখে চিন্তার ভাঁজ। কাজ না পেলে ৭ জনের সংসার কীভাবে চলবে এই চিন্তায় তিনি অস্থির। এই লকডাউন আর কতোদিন থাকবে? এমন প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে তিনি করে  রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘গত কয়েক দিনের লকডাউনে এখানে ভোর থেকে দুপুর অবধি বসে থেকেছি। কেউ কাজের জন‌্য ডাকে নাই। এক সময় বাড়িতে ফিরে গিয়েছি।  যে বাসা বাড়িতে কাজ করতাম, করোনার কারণে সেখানে বাহিরের লোক ঢোকা নিষেধ। তাই আর কাজ হচ্ছে না। এখানে (শাপলা চত্বর) ভ্রাম্যমাণ শ্রম বিক্রি করতে এসে ফিরে যেতে হচ্ছে দিনের পর দিন। কিন্তু এভাবে আর কতোদিন?  বসে থাকলে তো আমাদের আর কেউ খাবার দিবে না। এখন আর কেউ ধার-কর্জও দিতে চায় না। কী করবো বুঝতেছি না।’

‘গতবার লকডাউনে কিছুটা হলেও ত্রাণ পেয়েছিলাম এবার তারও আর কোনো আনাগোনা দেখছি না। কাজও হচ্ছে না। বউ-বাচ্চা নিয়ে কিভাবে রোজার মাস পার করবো বুঝতেছি না। তার উপর সরকার বার বার লকডাউন দিচ্ছে কিন্তু আমাদের মতো গরিব মানুষের কথা কি সরকার ভুলে গেছে?’ রাইজিংবিডির সঙ্গে কথা হলে শ্রমজীবী ফারুক হোসেন এমন কষ্টের কথা ব্যক্ত করেন।

কাজ না পেয়ে হত দরিদ্র  বৃদ্ধ মকবুল শেখ বলেন,  ‘বারে হামার বয়স হইচে। এই বয়সে রুজি করে তুমার চাচিরে নিয়া কোনো রকমে বাঁচি আছি। রোজগার না থাকিলে হামরা বাঁচমু কী করে? করোনা হওয়ার আগেই হামরা না খায়ে মরি যামো।’

রংপুর কৃষক-শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের সমন্বয়ক পলাশ কান্তি নাগ জানান, জেলায় করোনার  কারণে অচল অবস্থার তৈরি হয়েছে।  লকডাউন দীর্ঘ হওয়ায় দিন এনে দিন খাওয়া মানুষের জীবন ব্যবস্থা খুবই করুণ। লকডাউন কার্যকর করার আগে এসব মানুষের খাদ্য সহায়তা নিশ্চিত করা দরকার।

জেলা প্রশাসক আসিব আহসান জানান, শ্রমজীবী কর্মক্ষম মানুষের ব্যাপারে সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে। সিদ্ধান্ত আসলেই যথাযথভাবে সেই পদক্ষেপও নেওয়া হবে।