সারা বাংলা

গাজীপুরে হঠাৎ কমেছে গ্যাসের চাপ, কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত

গাজীপুরে হঠাৎ করেই তিতাসের সরবরাহ করা গ্যাসের চাপ কমে গেছে। ফলে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে স্থানীয় পোশাক কারখানাগুলোতে। এতে সুতা ও কাপড় উৎপাদনে সক্ষমতা কমেছে শতকরা ৩০-৪০ ভাগ।

শনিবার (১৭ এপ্রিল) সকালে বিষয়টি জানিয়েছেন গাজীপুর শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুশান্ত সরকার।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, শিল্প অধ্যূষিত গাজীপুরে তিন হাজারের বেশি তৈরি পোশাক কারখানা রয়েছে। কারখানা গুলোর মধ্যে টেক্সটাইল, স্পিনিং, উইভিং ও ফ্যাব্রিক প্রসেসিং বা সুতা-কাপড় উৎপাদনকারী কারখানাগুলোয় বেশির ভাগেই গ্যাস নির্ভর উৎপাদন।  প্রতি বর্গফুটে ১৫ পিএসআই গ্যাসের চাপ থাকার কথা থাকলেও সম্প্রতি সেটি ওঠানামা করছে দুই থেকে আট-দশে।

মোশারফ স্পিনিং মিলস লিমিটেড জেনারেল ম্যানেজার মো. আরিফুর রহমান জানান, তাদের কারখানার উৎপাদন যন্ত্র পরিচালনায় জেনারেটর ব্যবহার হয়। যার অনুমোদিত গ্যাসের চাপ ১৫ পিএসআই। ৬ এপ্রিল রাত থেকে হঠাৎ করে গ্যাসের চাপ অনেক কমে যায়। যদিও এর আগে থেকেই নির্ধারিত চাপের গ্যাস সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন ছিল না। এ সমস্যার প্রভাবে উৎপাদন যন্ত্র ৪০-৫০ শতাংশ বন্ধ রেখেই কারখানা চালাতে হচ্ছিল। কিন্তু ৬ এপ্রিলের পর থেকে ৭৫ শতাংশের বেশি যন্ত্র বন্ধ রাখতে হচ্ছে। আর রপ্তানি আদেশ ঠিক রাখতে বিকল্প জ্বালানি ব্যবহার করছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। এতে বাড়ছে উৎপাদন ব্যয়, মান কমছে উৎপাদিত পণ্যের।

মো. আরিফুর রহমান আরও জানান, রপ্তানিমুখী কারখানাগুলোতে গ্যাসের চাপ কম থাকায় দিনে বেশির ভাগ মেশিনপত্র বন্ধ রাখতে হচ্ছে। আর বিকল্প জ্বালানি দিয়ে মেশিনপত্র চালালে দিতে হচ্ছে বাড়তি মাসুল। গ্যাসের তীব্র সংকট চললেও সমাধানের উদ্যোগ নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, এ সমস্যা শুধু মোশারফ কম্পোজিট নয় একই এলাকার ইসরাক স্পিনিং মিলস ও টেক্সটাইল মিলসসহ মহানগর এলাকার সুতা-কাপড় উৎপাদনকারী বহু কারখানায় গ্যাসের চাপ অতিমাত্রায় কম। ফলে দিনের বেশির ভাগ সময় প্রায় অর্ধেক উৎপাদন যন্ত্র বন্ধ রেখেই চালাতে হচ্ছে কারখানা।

কথা হয় একই এলাকার ইসরাক স্পিনিং মিলসের কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে। তারা জানান, গ্যাসের চাপ কম থাকায় মেশিনপত্র বন্ধ রেখে বেকার বসে থাকতে হচ্ছে। ফলে তারা উৎপাদন চুক্তিতে কাজ করেন বেতন ভাতা পাচ্ছেন কম। এছাড়া চাকরি হারানোর শঙ্কাও রয়েছে তাদের মাঝে।

মোশারফ কম্পোজিট টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী জানান, সুতা-কাপড় উৎপাদনকারী অত্যাধুনিক কারখানাগুলোর অধিকাংশই ২৪ ঘণ্টা চালু রাখার লক্ষ্যে ক্যাপটিভ পাওয়ার জেনারেশন চালু থাকে। এ প্রক্রিয়ায় জ্বালানি হিসেবে মূলত ব্যবহার হয় গ্যাস। কিন্তু গ্যাসের চাপ কমে যাওয়ায় কারখানার উৎপাদন যন্ত্র বন্ধ রাখতে হচ্ছে। তুলনামূলকভাবে সপ্তাহের শুক্র, শনিবার গ্যাসের চাপ খানিকটা ভালো পাওয়া গেলেও সপ্তাহের বাকি দিন গুলোতে গ্যাসের চাপ কমে যায় ১-২ পিএসআই। ফলে কারখানায় উৎপাদন কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় করতে না পেরে চিন্তার মধ্যে আছেন বলেও জানান তিনি।

গ্যাসের চাপের বিষয়ে গাজীপুর তিতাস গ্যাস অ‌্যান্ড ট্রান্সমিশন জেনারেল ম্যানেজার রাজীব কুমারের যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া কোনো বক্তব্য দেওয়া যাবে না। করোনা পরিস্থিতির অজুহাতে এসব বিষয়ে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান তিনি।

উল্লেখ‌্য, বিটিএমএ এর অন্তর্ভূক্ত গাজীপুরে ছোট-বড় মিলিয়ে শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে চার শতাধিক। তীব্র গ্যাস সঙ্কটের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে এসব কারখানায়। আর সমস্যা সমাধানে দ্রুত উদ্যোগের দাবি করছেন কারখানা মালিক, শ্রমিক ও পোশাক মালিকদের সংগঠনের নেতারা।