সারা বাংলা

শ্রমিকবাহী ট্রাক আটকে চাঁদাদাবির অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে

চাহিদা মতো টাকা না দেওয়া টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়ক থেকে শতাধিক ধানকাটা শ্রমিকবাহী দুটি ট্রাক আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। শুক্রবার (১৬ এপ্রিল) দিবাগত রাত ১২ টার দিকে মহাসড়কের এলেঙ্গা থেকে ট্রাক দুটি আটক করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী শ্রমিকরা। তারা বলছেন, সড়কে চলাচলের অনুমতিপত্রও পুলিশ জব্দ করেছে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর তাদের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা করেছে পুলিশ।

ধান কাটার শ্রমিকরা জানান, কৃষি অফিসারের অনুমতি নিয়ে পাবনা থেকে দুটি ট্রাকযোগে মুন্সীগঞ্জ ও হবিগঞ্জের উদ্দেশে তারা যাচ্ছিলেন।  তাদের অনেকেই রোজা রেখেছিলেন। এলেঙ্গা পর্যন্ত এলে পুলিশ তাদের ট্রাক দুটি থামায়। এসময় তাদের চাঁদা দাবি করে পুলিশ। তারা  দিতে অস্বীকার করলে ট্রাক জব্দ করে এলেঙ্গা ফাঁড়িতে নিয়ে যায়। সারারাত তাদের ফাঁড়িতে আটকে রাখে। তারা সেহরিও খেতে পারেননি। পুলিশ তাদের জন‌্য বাসের ব্যবস্থা করে দেবে বলেও শনিবার (১৭ এপ্রিল) বেলা ১২ টা পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা করে দেয়নি। 

শ্রমিক ইদ্রিস আলী বলেন, ‘পাবনা থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত এলে পুলিশ টাকা দাবি করে। না দেওয়ায় ট্রাক দুটি আটকে দেয়।  রাতে গুঁড়ি-গুঁড়ি বৃষ্টিতে ভিজতে হয়েছে। না খেয়ে রাত থেকে কষ্ট করতে হচ্ছে। পায়খানা-প্রসাবের জায়গা না থাকায় কষ্ট আরও কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। আমরা এখন কী করবো, কিছুই বুঝতি পারছি না।’

রমজান নামের আরেক শ্রমিক বলেন, ‘কাজ না থাকায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে খুব কষ্টে দিন পার করছিলাম। তাই আমাদের উপজেলা কৃষি অফিসার ও চেয়ারম্যানের প্রত্যায়নপত্র নিয়ে ধান কাটতে হবিগঞ্জের দিকে যাচ্ছিলাম। পুলিশ আমাদের আটকে দেওয়ায় খুব কষ্ট হচ্ছে। রাত থেকে না খেয়ে আছি। আমাদের অনুমতিপত্র পুলিশ জব্দ করে রেখেছে।’    

ট্রাকচালক উজ্জল মিয়া বলেন, ‘গতকাল বিকেলে পাবনা থেকে রওনা দিয়েছি। রাত ১২ টার দিকে এলেঙ্গা এলে পুলিশ টাকা দাবি করে। টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় তারা ট্রাকের সব শ্রমিককে নামিয়ে দিতে বলে। শ্রমিকদের বাসে যেতে বলে। পরে অন‌্য এক পুলিশ অফিসার এসে শ্রমিকসহ ট্রাক ফাঁড়িতে নিয়ে আসেন। গাড়ির কাগজপত্র  জব্দ করে পুলিশ। গতকাল দুপুরে খেয়েছিলাম। তারপর থেকে আমরা না খেয়ে সময় পার করছি।’      

পাবনা সদরের কৃষি অফিসার হাসান রশিদ হোসাইনী বলেন, ‘শ্রমিকদের অনুমতিপত্র দিয়েছি। তাদের ছেড়ে দেওয়ার জন্য পুলিশকে রিকোয়েস্ট করেছি। পুলিশ যা করেছে, মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে কাজটি  ভালো হয়নি।’ 

এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইয়াসির আরাফাত বলেন, ‘শ্রমিকরা দুটি ট্রাকের একটি ৪৮ জন, আরেকটিতে ৭২ জন শ্রমিক স্বাস্থ্যবিধি না মেনে তাদের গন্তব্যে যাচ্ছিলেন।’

শ্রমিকদের কাছে টাকা চাওয়ার অভিযোগকে মিথ্যা দাবি করে বলেন এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘শ্রমিকরা একটি ট্রাকে ৪৮ ও অন‌্য ট্রাকে ৭২ জন শ্রমিক বহন করছিল। স্বাস্থ্যবিধি না মেনে তারা গন্তব্যে যাচ্ছিলেন। এছাড়া গতকাল মহাড়কে পণ্যবাহী ট্রাক দুর্ঘটনায় পাঁচ জন নিহত হয়েছেন। সবকিছু মিলিয়ে সরকারি কঠোর ববিধিনিষেধ আদেশ পরিপন্থী কাজ করায় তাদের ট্রাক আটক করা হয়েছে। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বাসের ব্যবস্থা করে দিতে চাইলে তারা রাজি হয়নি। পুলিশের নিজস্ব অর্থায়নে গন্তব্যে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’