সারা বাংলা

চাঁদপুরের মুড়িভাজার কারিগররা অধিকাংশই পাল বংশের

মেশিনে তৈরি মুড়ির চেয়ে হাতে ভাজা মুড়ির প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ বেশি। তাই রমজানকে ঘিরে চাঁদপুরের হাতে ভাজা মুড়ির কারিগররা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন।

সরজমিনে দেখা যায়, চাঁদপুর পৌরসভার ১৩নং ওয়ার্ডের পালকান্দি, হাজীগঞ্জের উচঙ্গা, কচুয়ার কাদলা গ্রামসহ বেশ কিছু স্থানে হাতে ভাজা মুড়ি কারিগররা মুড়ি ভাজা নিয়ে খুবই ব্যস্ত রয়েছেন।

এ জেলার মুড়ি ভাজার কারিগররা বেশির ভাগই পাল বংশের। তারা বংশ পরম্পরায় এ ব্যবসায় রয়েছেন। তেমন লাভজনক না হলেও ঐতিহ্যবাহী এ ব্যবসা সমাজের প্রয়োজনেই যেন তারা টিকিয়ে রেখেছেন।  

রোববার (১৮ এপ্রিল) কথা হয় কচুয়া উপজেলার কয়েকজন মুড়ি কারিগরের সঙ্গে। কচুয়ার কাদলা গ্রামের পাল বাড়ির বিমল পাল, শ্যামল পাল, যুবরাজ, অমর পাল ও অজয় পাল এরা বললেন, আমরা বাপ-দাদার ঐতিহ্যগত পেশা হিসেবে মুড়ি ভাজার কাজে আছি।

তারা জানান, বালু লাগলেও এতে সহায়ক হিসেবে লবন, মাটির চুলা, লাকড়ি ও মাটির কড়াইয়ে মুড়ি ভাজা হয়। হাতে ভাজা মুড়ির কেজি ১শ ১০ থেকে ১শ ২০ টাকা। ধানের দাম বেশি হওয়ায় এবং আধুনিক মেশিনে মুড়ি ভাজায় তারা প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হিমশিম খাচ্ছেন। বংশগত এ পেশায় তাই টিকে থাকতে না পেরে অন্য পেশায় চলে গেছেন।

বেশ কয়েকজন হাতে ভাজা মুড়ি কারিগর জানালেন, অনেক গ্রাহক মুড়ি ভাজার চাউল নিয়ে আসেন। তাদের মুড়ি ভেজে তারা কেজি প্রতি ২০ টাকা করে পারিশ্রমিক নেন। প্রতিকেজি মুড়ি ভাজতে তাদের ১০-১৫ মিনিট সময় লাগে। সকালে ও সন্ধ্যার পর এমন গ্রাহকের বেশি সমাগম থাকে।

কাদলা পাল বাড়ির দিলিপ পাল, বিষ্ণু পদ পাল জানান, এখনো তারা মুড়ি ভাজার কাজ করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করছেন। বাপ-দাদার ঐতিহ্যগত এ পেশা বদল করতে চাইলেও তারা পারছেন না ।

তারা জানান, মুড়ি বিক্রির তেমন কোন আদর্শ বাজার সৃষ্টি না হওয়ায় আয় রোজগার ভাল হচ্ছে না। এক মন ধান ১৭শ টাকায় কিনতে হচ্ছে। কিন্তু এই ধানের হাতে ভাজা মুড়ির বাজার কেড়ে নিচ্ছে মেশিনে তৈরি মুড়ি। এজন্য এ পেশায় তাদের আর পোষাচ্ছে না।

তাদের ধারণা, তারা বাপ দাদার পেশা ধরে রাখলেও ভবিষ্যত প্রজন্ম অর্থাৎ তাদের ছেলে-মেয়েরা এ পেশায় থাকবে না। তবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ঋণ সহায়তা পেলে এ পেশাকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব বলেও মনে করছেন তারা।

এ ব্যপারে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, হাতে ভাজা মুড়ি কারিগররা যদি আমাদের সহায়তা চায়। তাহলে আমরা তাদের অবশ্যই সহযোগিতা করার চেষ্টা করবো।