সারা বাংলা

সড়কের পাশে সারি সারি ইফতার প্যাকেট

পটুয়াখালী পৌর শহরের মুসলিম পাড়ার মোহাম্মদ মৌজে আলী (৬২)। পরিবারের সাত সদস্যের খাবারের যোগান দিতে রোজা রেখে লকডাউনের মধ্যে রিকশা নিয়ে রাস্তায় নামতে হয়েছে তাকে। মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) সারা দিনে আয়ে হয়েছে মাত্র ২০০ টাকা। রোজা রাখার কারণে বিকেলে একজন যাত্রী নিয়ে সার্কিট হাউজের সামনে থেকে বাসার দিকে ফিরছিলেন। এমন সময় দুইজন যুবক ডেকে ইফতারি নিয়ে যেতে বলেন।

সড়কের পাশে সাজানো ইফতারির প্যাকেট থেকে মৌজে আলী একটি নিয়ে ছলছল চোখে দোয়া করলেন, ‘আল্লাহ তুমি এই ছেলেদের গুনা মাফ করে দিও।’

অটোরিকশার চালক জাহাঙ্গীর (৫৭)। গলাচিপা উপজেলার আমখোলা ইউনিয়নে কালাইকসোর গ্রামে তার বাড়ি। কিছু মুদি মাল নেওয়ার জন্য জেলাশহরে আসেন। বাড়ি ফেরার সময় তিনিও এক প্যাকেট ইফতারি নিয়ে যান।

শুধু মৌজে আলী কিংবা জাহাঙ্গীর নয়, এভাবে অর্ধশতাধিক দিনমজুর ও রিকশা চালকের জন্য প্রতিনিয়ত ইফতারের প্যাকেট দিচ্ছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন পটুয়াখালীবাসী। বিকেল ৫টার দিকে পৌরশহরের সার্কিট হাউজ সংলগ্ন সড়কের পাশে সারি সারি সাজিয়ে রাখা হয় প্যাকেট। পাশে দাঁড়িয়ে সংগঠনের দু’-তিনজন সদস্য রোজাদারদের প্যাকেট নিয়ে যেতে আহ্বান করে।

ইফতারির প্যাকেটে থাকে বুট, মুড়ি, পিয়াজু, বেগুনি, আলুর চপ, খেজুর, জিলাপি ও একটি পানির বোতল।

সদর উপজেলার জৈনকাঠী ইউনিয়নের রিকশাচালক এসাহাক জানান, তিনি বিগত বছরে বিভিন্ন মসজিদে ইফতার করতেন। এ বছর মহামারি কারণে মসজিদে  ইফতারি দেয় না। আবার লকডাউনে আয় নেই বললেই চলে। তাই প্রতিদিন এখান থেকে ইফতারি নিয়ে যান।

পটুয়াখালীবাসী সংগঠনের সভাপতি রায়হান আহমেদ বলেন, করোনার কারণে দিনমজুর মানুষের আয় নেই। তাছাড়া শহরের বেশিরভাগ হোটেলও বন্ধ। নিম্নআয়ের মানুষ, দিনমজুর, রিকশাচালক কোথায় ইফতার করবে, একথা ভেবে এই আয়োজন করা হয়েছে।

রায়হান আহমেদ বলেন, ‘প্রতিদিন ছয়জন স্বেচ্ছাসেবক মিলে ৫০টি ইফতারের প্যাকেট তৈরি করে সার্কিট হাউজের সামনে রাস্তার পাশে সারি সারি সাজিয়ে রাখি। রিকশা চালক ও দিনমজুর ছাড়া অন্য কাউকে প্যাকেট নিতে নিরুৎসাহিত করি। আমাদের সামর্থ কম। তাই সবাইকে প্যাকেট দিতে পারি না। আমরা চেষ্টা করি, অসহায় মানুষগুলো যেন একটু তৃপ্তিতে ইফতার করতে পারে।’

এ কার্যক্রম মাসব্যাপি চালু রাখার জন্য প্রয়োজন বিত্তবানদের সহযোগিতা। সহায়তা পেলে কার্যক্রম চালু রাখবেন বলে জানান সংগঠনের সভাপতি।