সারা বাংলা

পারাপারের অপেক্ষায় হাজারো অসহায় যাত্রী

বিজিবি টহল ও ফেরি বন্ধের ঘোষণার পরও ঈদ উপলক্ষে ঘরমুখো যাত্রীদের ঢল নেমেছে শিমুলিয়া ঘাটে। শত ভোগান্তি সয়েও সকাল থেকে বিজিবি’র চোখ ফাঁকি দিয়ে হাজার হাজার যাত্রী শিমুলিয়া ঘাটে এসে হাজির হয়েছেন।

রোববার (৯ মে) সকাল থেকে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়াঘাট থেকে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটে ৪টি ফেরি চলাচল করেছে। লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে ফেরিগুলো ছাড়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ঘাট কর্তৃপক্ষ।

বিআইডব্লিউটিসির শিমুলিয়াঘাটের ব্যবস্থাপক (বানিজ্য) সাফায়েত আহমেদ জানান, অ্যাম্বুলেন্স পারাপারের জন্য ফেরি ছাড়া হলেও অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গে যাত্রীরা ফেরিতে উঠছে। তাদের আটকে রাখা যাচ্ছে না। লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গে ফেরিতে অসংখ্য যাত্রী উঠে পদ্মা পাড়ি দিয়েছেন।

তারপরও পারাপারের অপেক্ষায় থাকা বেশিসংখ্যক মানুষই ঘাটে আটকে আছেন। কারণ, ফেরি ছাড়া পারাপারে বিকল্প কোনো উপায় নেই। লঞ্চ স্পিডবোট ট্রলার চলাচলও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবু যদি কোনো উপায় হয়, এমন আশায় ফেরিঘাট পর্যন্ত ছুটে এসেছেন নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা মানুষ।

এদিকে, রাজধানী ঢাকা থেকে সিএনজি, পিকআপ ভ্যান আর অটোরিকশায় চেপে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার শিমুলিয়াঘাটে ছুটে আসছেন ঘরমুখো হাজার হাজার যাত্রী সাধারণ। সড়কে ভেঙে ভেঙে এমনই বিভিন্ন যানবাহনে চড়ে শিমুলিয়া ঘাটে পৌঁছাতে যাত্রীদের পড়তে হচ্ছে নানা ভোগান্তিতে। গুনতে হচ্ছে দ্বিগুণ-তিনগুণ খরচা।  

রোববার সকাল থেকে শিমুলিয়া ঘাটে ফেরি পারাপারের অপেক্ষায় থাকা যাত্রীদের সঙ্গে কথা হলে তাদের দুঃখ আর কষ্টের কথা উঠে আসে।

নড়াইলের রাজু বিশ্বাস রাজধানীর মেডিল্যাবে চাকরি করতেন। সেখানকার করোনা ইউনিটে কাজ করতে গিয়ে গেল বছর করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন। কিছুদিন আগে দ্বিতীয় বার করোনা আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে চাকরি ছেড়ে দেন তিনি। মাসের বেতন পেতে বিলম্ব হওয়ায় রোববার স্ত্রী ও একমাত্র সন্তান নিয়ে গ্রামের বাড়ি ফিরতে গিয়ে শিমুলিয়ায় ফেরি বন্ধ থাকায় বিড়ম্বনার কবলে পড়েন।

তিনি জানান, চাকরি ছেড়ে দেওয়ার পর ঢাকার বাসা ভাড়া পরিশোধ করেছেন অনেক কষ্টে। এরপর গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার আগে বাসার চৌকি ও আসবাপত্র বিক্রি করেছেন ১৩শ টাকায়। ওই টাকা পুঁজি করেই গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন সকালে। প্রথমে সিএনজিতে করে কিছু দুর আসেন। এরপর অটোরিকশায় চেপে ভেঙে ভেঙে শিমুলিয়া ঘাটে পৌঁছতে পকেটের ৮০০ টাকা খরচ হয়ে যায় তার। কিন্তু শিমুলিয়ায় এসে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েন তিনি। বেলা সাড়ে ১১ টা পর্যন্ত তিনি ঢাকায় ফিরে যেতে পারছেন না, আবার গ্রামের বাড়ি যাবেন-তার জন্যও ফেরি মিলছে না।

দক্ষিণবঙ্গের যাত্রী আলী আজগর বলেন, সেহরি খেয়ে ঢাকা থেকে শিমুলিয়া ঘাটের উদ্দেশ্যে রওনা দেই। এরপর তিন কিলোমিটার পায়ে হেঁটে আসার পর দেখি বিজিবির টহল। পরে গোপনে অন্য রাস্তা দিয়ে ঘাটে পৌঁছে দেখি ফেরি বন্ধ।

যাত্রী জোনায়ের আহম্মেদ বলেন, ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকার ভাড়া বাসা থেকে বেরিয়ে মা-বাবাকে নিয়ে ঈদ করতে শরিয়তপুরে যাচ্ছিলাম। ঘাটে এসে দেখি ফেরি বন্ধ। এখন আর ফিরে যাবার কোন উপায় নাই। তাই অপেক্ষা করছি যদি ফেরি চালু হয়। তাহলে মা-বাবাকে নিয়ে ঈদ করতে গ্রামের বাড়ি যেতে পারবো।