সারা বাংলা

হারিয়ে যাচ্ছে ঈদকার্ড

এখন ডিজিটাল যুগ। সেকেলে হয়ে গেছে ঈদকার্ডের ব্যবহার। আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারাতে বসে চিঠি আর ঈদকার্ড দিয়ে ঈদের শুভেচ্ছা ও আমন্ত্রণ-নিমন্ত্রণের প্রথা। তবে বিয়েতে এখনও দেখা যায় কার্ড দিয়ে নিমন্ত্রণের নিয়ম-নীতি।

এক সময় ছিল প্রিয়-অপ্রিয় সবাই সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা ও দাওয়াত দিতেন ঈদকার্ড দিয়ে।  আধুনিক যুগে প্রযুক্তির ব্যবহারে আজ তা বিলিন হয়ে যাচ্ছে। এখন মানুষ আর কার্ড দিয়ে আমন্ত্রণ জানায় না। এখন মোবাইল ফোনের ব্যবহার শুরু হয়েছে।  মেসেঞ্জার, ইমুসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রিয় মানুষদের শুভেচ্ছা দিচ্ছেন সবাই।

ঈদ আসলেই ডাক পিয়ন আর প্রিয় মানুষের হাতের লেখা একটা কার্ডের অপেক্ষায় থাকতো সবাই। স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীসহ অনেকেই পেয়ে থাকতো ঈদকার্ড।  ঈদ আসলে শহর-গ্রামের মোড়ে আর রাস্তার পাশে গড়ে উঠতো ছোট বড় কার্ডের দোকান।  ৫ টাকা থেকে ৫০ টাকা দামের নানান ডিজাইনের কার্ড পাওয়া যেত।

দিনাজপুরের বিরামপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে ১৯৯৭ সালের এসএসসি ব্যাচের সে সময়ের তুখোড় মেধাবী ছাত্র হারুন উর রশিদ হারুন (হিরা) রাইজিংবিডিকে বলেন, দিন যায় কথা আর স্মৃতি পড়ে রয়।  সবকিছুর পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু স্মৃতির কোনো পরিবর্তন হয়নি। স্মৃতিগুলো আগের মতোই রয়ে গেছে। ঈদ মৌসুমে কার্ডের ছড়াছড়ি, ডাকযোগের কার্ড আর বন্ধু-বান্ধবীদের কার্ড। প্রতিটি কার্ডের মধ্যে লুকিয়ে থাকে কত না আনন্দ-বেদনা এবং অনেক মান-অভিমান। 

৯৭ সালের এসএসসি ব্যাচের ছাত্রী শিলা আহমেদ রাইজিংবিডিকে বলেন, পুরনো দিনের কথা প্রায় ভুলতে বসেছি। এখন সংসার, সন্তান আর স্বামীর পরিচর্যা করতে গিয়ে অতিথি আর মনে পড়ে না।  তবে মাঝে মধ্যে পুরনো দিনের মানুষদের কথা স্মরণ হলে, পুরনো দিনের কথা আর স্মৃতি চোখের সামনে ভেসে ওঠে। সেদিনগুলো আসলেই অনেক মধুর ছিল। অশ্লীলতা ছিল না, বন্ধু-বান্ধবীরা সবাই ছিলাম আপন ভাই-বোনের মতো।  পবিত্র ঈদুল ফিতর আর ঈদুল আজহা আসলেই সবাই মেতে উঠতাম কার্ড কেনার প্রতিযোগিতা।  সবাইকে দিতাম আবার পেতামও অনেক।  মাঝে মধ্যে মনে হয় আবার যদি ফিরে পেতাম আবার আগের সেই দিনগুলোকে।

ঈদ কার্ডের ব্যবহার নিয়ে কথা হয় হাকিমপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বুলুর সঙ্গে। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, কালের স্রোতে বিলুপ্তের পথে ঈদকার্ড।  এখন আর চোখেই পড়ে না সেই ঈদকার্ড।

স্মৃতিচারণে তার মনে পড়ে যায় ১৯৮৮ সাল থেকে ৯৫ সাল পর্যন্ত দেখা কার্ডের স্মৃতিবিজড়িত মুহূর্তের কত না কত কথা। বাজারে তো বর্তমান কোনো ঈদকার্ডের দোকান দেওয়া হয় না। আগের দিনে ঈদে দুই থেকে তিন সপ্তাহ আগে থেকে কার্ড ব্যবসায়ীরা তারা দোকানে বিভিন্ন রঙ-বেরঙের আকর্ষণীয় কার্ড ঝুলিয়ে রাখতো।  আবার অনেকেই বিভিন্ন ডিজাইনের কার্ডের অর্ডার দিতো। ঈদ আসায় সবাই ব্যস্ত সময় পার করতো, প্রিয় জনদের কার্ড দিতে এবং লিখতে।  আমারও অনেক বন্ধু-বান্ধবী ছিলেন, তারা আমাকে কার্ডের মাধ্যম দাওয়াত দিতো।  আর আমিও তাদের কার্ড দিয়ে ঈদের আমন্ত্রণ জানাতাম।  সেই দিনগুলো আজ কোথায় যেন হারিয়ে গেছে, সবই যেন এখন স্মৃতি।