সারা বাংলা

ঈদেও ফাঁকা থাকছে কক্সবাজার সৈকত

ঈদের টানা ছুটিতে লাখো মানুষের ঢল নামে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে। কিন্তু এবারের ঈদেও ফাঁকা থাকছে কক্সবাজার সৈকত।  করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দিতে গত বছরের ঈদের সময়ের মতো এবারও বন্ধ থাকছে কক্সবাজারের সব পর্যটনকেন্দ্র। 

সৈকতের প্রতিটি প্রবেশদ্বারে থাকছে ট্যুরিস্ট পুলিশের কড়া পাহারা। তবে করোনার সংক্রমণ কমে গেলে সরকার পর্যটন স্পটগুলো খুলে দেবে বলে প্রত্যাশা করছেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা। 

প্রতিবছর ঈদের ছুটিতে কক্সবাজার সৈকতে ছুটে আসে হাজার হাজার মানুষ। কিন্তু গত বছরের মার্চে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দিলে সরকার লকডাউনের ঘোষণা দিয়ে বন্ধ করে দেয় পর্যটনকেন্দ্রগুলো। পরে সংক্রমণ কমলে সরকার বিধি-নিষেধ শিথিল করে আবার খুলে দেয় সৈকত।

চলতি বছর সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে পয়লা এপ্রিলে ফের লকডাউন আসে। আবার বন্ধ হয়ে যায় সমুদ্র সৈকতসহ কক্সবাজারের পর্যটনকেন্দ্রগুলো। যা এখনো জারি আছে। সংক্রমণ না কমায় ঈদের ছুটিতেও খুলছে না সৈকত। সৈকতের প্রবেশদ্বারে কড়া পাহারা থাকবে বলে জানিয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।

কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক মো. সোহেল রানা বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে দেশের সব পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ রয়েছে। সেক্ষেত্রে কক্সবাজারের সব পর্যটন স্পট বন্ধ থাকবে। কাউকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। সৈকতের প্রবেশদ্বারের প্রতিটি পয়েন্টে ট্যুরিস্ট পুলিশ রয়েছে। একই সঙ্গে চেকপোস্ট বসা হয়েছে। এছাড়াও সর্বাক্ষনিক টহলে থাকবে ট্যুরিস্ট পুলিশ।’

এদিকে কক্সবাজার চেম্বাব অফ কর্মাসের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, ‘কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত লক্ষাধিক মানুষ এখন বেকার বসে আছে। করোনার কারণে এবারের ঈদেও কক্সবাজারের পর্যটনকেন্দ্রগুলো বন্ধ থাকছে। এতে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার ক্ষতি হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঈদের পরে কখন, কবে পর্যটন শিল্প আবার খুলবে— তা এখনও অনিশ্চিত। এই অবস্থায় কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পকে সচল করতে সরকারের সহায়তা প্রয়োজন।’

এদিকে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় আপাতত কক্সবাজারের পর্যটনকেন্দ্রগুলো খুলে দেওয়ার কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। ঈদেও পর্যটক এবং স্থানীয় দর্শনার্থীদের জন্য সৈকত প্রবেশও বন্ধ থাকবে।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আল আমিন পারভেজ বলেন, ‘করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকার যে বিধি-নিষেধগুলো আরোপ করেছে, তার অংশ হিসেবে কক্সবাজারের সব পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ করেছি। যেহেতু কক্সবাজারের এখনও পর্যন্ত করোনার সংক্রমণ নিম্নমুখী দেখা যাচ্ছে না, তাই এখনও পর্যটনকেন্দ্রগুলো বন্ধের সিদ্ধান্ত বলবৎ রয়েছে।’ 

মো. আল আমিন পারভেজ আরও বলেন, ‘স্থানীয় এবং বহিরাগত সব পর্যটকদের জন্য সৈকতে প্রবেশ বন্ধ থাকবে। কারণ, সৈকতের পয়েন্টগুলোতে বিপুল সংখ্যক মানুষের সমাগম হয়। যে কারণে করোনার হট স্পটে পরিণত হতে পারে। তাই ঈদেও বন্ধ রাখার এই সিদ্ধান্ত।’

পর্যটন শিল্পকে কেন্দ্র করে কক্সবাজারে রয়েছে সাড়ে চার শতাধিক হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, গেস্ট হাউস ও কটেজ। রয়েছে চার শতাধিক রেস্তোরাঁ ও সহস্রাধিক বার্মিজ দোকান। পর্যটনকেন্দ্রগুলো বন্ধ থাকায় বন্ধ রয়েছে এসব প্রতিষ্ঠানগুলোও।

কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কলিম উল্লাহ বলেন, ‘‘ঈদের পরে কখন-কবে পর্যটনকেন্দ্রগুলো খুলবে, তা এখনও অনিশ্চিত। ঈদের পরপরই পরিস্থিতির উন্নতি হবে, তার কোনো ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে না।

‘ইতোমধ্যে হোটেল মোটেল, রিসোর্ট, গেস্ট হাউস, কটেজ, রেস্তোরাঁ ও বার্মিজ দোকানের কর্মীরা কর্মহীন হয়ে পড়েছে। সামান্য কিছু হোটেল তাদের কর্মীদের সহযোগিতা করলেও অধিকাংশ হোটেল তাও করেনি। সুতরাং এখন করোনার সংক্রমণ কমলে সরকার পর্যটন স্পটগুলো খুলে দেবে এমন প্রত্যাশা।”