সারা বাংলা

ভালো নেই ভানু আক্তার 

নীলফামারির ডিমলা উপজেলায় বাড়ি ভানু আক্তারের (৩৪)। জন্ম থেকেই দুটি হাত নেই। শরীরের গড়নও ক্ষুদ্র। কিন্তু মানসিক শক্তি আকাশচুম্বী। সচল দুটি পা দিয়ে স্বপ্ন বুনে চলা সেই ভানু আক্তারের দিনকাল ভালো যাচ্ছে না। 

প্রতিবন্ধকতা দূর করে পা দিয়ে বুনে পুঁতি দিয়ে তৈরি করেন মেয়েদের ব্যাগ, নৌকা, আনারস, গলার মালা, নাক ফুল, কানের দুলসহ নানান জিনিস। তার পায়ের কাজে মুগ্ধ হয়নি এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর। 

কিন্তু চলমান করোনা মহামারীর কারণে তার পুঁতির তৈরি বাহারি জিনিসের তেমন চাহিদা নেই। বিক্রি কমে আসায় সংসার চালানো দুষ্কর হয়ে পড়ে। পরে একটি ছোট্ট দোকান করে সেখানে তিনটি কেরাম বোর্ড পেতেছেন। সেখান থেকে যা উপার্জন হয়, তাতে কোনোরকমে চলছে তার। 

গত বছর ঈদের সময় স্থানীয় কাউন্সিলর ও জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে সহযোগিতা পেয়েছিলেন। তবে এবার ঈদে কিছুই পাননি ভানু।

ভানু আক্তারের জীবন রোমাঞ্চকর ও কষ্টে মোড়ানো। গ্রামে থাকা অবস্থায় প্রণয় ঘটে পাশের গ্রামের মোরশেদ আলমের সঙ্গে। পাঁচ বছর সম্পর্কের পরে ভালোবাসার টানে বিয়ে করে দুজন বাড়ি ছেড়ে চলে আসেন গাজীপুর। 

বিয়ে করে গাজীপুর মহানগরের দক্ষিণ হরিণাচালায় ছোট্ট একটা ঘরে সুখেই কাটছিল জীবন। 

এ সময় ভানু স্থানীয় একটি জুট গোডাউনে দৈনিক ৫০ টাকা মজুরিতে কাজ করতেন। তার স্বামী পড়তেন কলেজে। তাদের ঘর আলো করে জন্ম নেয় একটি পুত্র সন্তান। এদিকে বিএ পাস করেন তার স্বামী মোরশেদ। 

প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে ভালোবাসার মানুষটিকে পড়িয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতায় হয়েছিল চাকরির ব্যবস্থাও। 

প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী চাকরি পেয়েছিলেন ভানু। সেই চাকরি তুলে দিয়েছিলেন স্বামীর হাতে। স্বয়ং মন্ত্রীকে অনুরোধ করে নিজের বদলে স্বামীকে চাকরি দেন তিনি। কিন্তু সরকারি চাকরি জুটে যাওয়ার পর সেই স্বামী ভানুকে ছেড়ে দুবছর আগে অন্য এক মেয়েকে বিয়ে করে আলাদা হয়ে গেছেন।

প্রতিকার চাইতে আদালতের স্মরণাপন্নও হয়েছেন অসহায় ভানু আক্তার। প্রতিকার পাননি। কবে পাবেন তাও জানেন না।

স্বামী নেই। এদিকে যে পুঁতি বিক্রি করে চলতেন, সেগুলোও আর চলে না আগের মতো। মাসে একটা-দুটো অর্ডার হয়।

এদিকে অভাবের তাড়নায় নিজের সন্তানকেও কাছে রাখতে পারেননি ভানু। স্বামীর প্রতারণা আর অভাবের কষাঘাতে জর্জরিত হয়ে ছেলে বেল্লালকে (৬) গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন। সেখানে স্বজনদের কাছে থাকলেও ছেলের জন্য মন কাঁদে ভানুর। মন কাঁদে হারানো সংসারের জন্যও।