সারা বাংলা

ঈদে সাতছড়ি-কালেঙ্গা বন্ধ থাকায় হতাশ দর্শনার্থীরা

করোনাভাইরাসের কারণে হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান ও রেমা-কালেঙ্গা বন্যপ্রাণি অভয়ারণ্য সাময়িক বন্ধ রয়েছে। তাই হতাশায় রয়েছেন ঈদে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা। আর এসব স্থানে দর্শনার্থীদের প্রবেশ বন্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে কর্তৃপক্ষ।

শুক্রবার (১৪ মে) রাত ১০টায় সাতছড়ি বন্যপ্রাণি রেঞ্জ কর্মকর্তা মাহমুদ হোসেন জানান, করোনার কারণে উদ্যানে প্রবেশ বন্ধ রাখা হয়েছে। এর আগে (২ এপ্রিল) সকালে এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছিল। পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত উদ্যান বন্ধ থাকবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কর্তৃপক্ষের অনুমতিক্রমে উদ্যান খুলে দেওয়া হবে।

তিনি জানান, এর আগে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে ২০২০ সালের ১৯ মার্চ এ পর্যটন স্পটটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে প্রায় ৮ মাস বন্ধ থাকার পরে ১ নভেম্বর এ উদ্যান খুলে দেয়া হয়েছিল। করোনার প্রভাব বাড়ায় দ্বিতীয় দফায় উদ্যানটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

তারপরও এ ঈদে নানা স্থান থেকে একশ্রেণির দর্শনার্থী ঘুরতে আসছে। আমরা তাদেরকে প্রবেশ করতে দিচ্ছি না। কড়া পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’

উদ্যান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, খোলা থাকলে সাতছড়িতে প্রতিদিন আড়াই থেকে পাঁচ হাজার পর্যটক আসেন। বয়স্কদের টিকিট বিক্রি হতো ৩০ টাকা এবং অপ্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ২৫ টাকা।

উল্লেখ্য, সাতছড়ি উদ্যানের ইতিহাস জানতে হলে ফিরে যেতে হবে ১৯১২ সালে। ওই বছর প্রায় ১০ হাজার একর দুর্গম পাহাড়ি জমি নিয়ে গঠিত রঘুনন্দন হিলস্ রিজার্ভই কালের পরিক্রমায় আজকের উদ্যান। অবশ্য জাতীয় উদ্যান হওয়ার ইতিহাস বেশি দিনের নয়। ২০০৫ সালে ৬০০ একর জমিতে জাতীয় উদ্যান করা হয়। এ উদ্যানের ভেতরে রয়েছে অন্তত ২৪টি আদিবাসী পরিবারের বসবাস। রয়েছে বন বিভাগের লোকজন।

পর্যটকদের জন্য চালু করা প্রজাপতি বাগান, ওয়াচ টাওয়ার, হাঁটার ট্রেইল, খাবার হোটেল, রেস্ট হাউস, মসজিদ, রাত যাপনে স্টুডেন্ট ডরমিটরি সবই এখন নিস্তব্ধ।

উদ্যানে দুই শতাধিক প্রজাতির উদ্ভিদের মধ্যে শাল, সেগুন, আগর, গর্জন, চাপালিশ, পাম, মেহগনি, কৃষ্ণচূড়া, ডুমুর, জাম, জামরুল, সিধা জারুল, আওয়াল, মালেকাস, আকাশমনি, বাঁশ, বেত ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

১৯৭ প্রজাতির জীবজন্তুর মধ্যে প্রায় ২৪ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ১৮ প্রজাতির সরীসৃপ, ৬ প্রজাতির উভচর। আরো আছে প্রায় ২০০ প্রজাতির পাখি। রয়েছে লজ্জাবতী বানর, উল্লুক, চশমা পরা হনুমান, শিয়াল, কুলু বানর, মেছো বাঘ, মায়া হরিণের বিচরণ।

সরীসৃপের মধ্যে আছে কয়েক জাতের সাপ। কাও ধনেশ, বন মোরগ, লাল মাথা ট্রগন, কাঠঠোকরা, ময়না, ভিমরাজ, শ্যামা, ঝুটিপাঙ্গা, শালিক, হলদে পাখি, টিয়া প্রভৃতির আবাসস্থল এই উদ্যান।

সাতছড়ির ন্যায় রেমা-কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য সাময়িক বন্ধ থাকায় দর্শনার্থীদেরকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।

এ ব্যাপারে কালেঙ্গা বিট কর্মকর্তা শ্যামাপদ মিশ্র বলেন, কারোনার কারণে সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক এ অভয়ারণ্যে ঘুরার জন্য কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন দর্শনার্থী বলেন, হবিগঞ্জে করোনা তেমন একটা নেই। তাই ঘুরতে আসা। শহরে ঘুরে আনন্দ নেই। বনে ঘুরে বেড়ানোর আনন্দ বেশি। তাই দ্রুত সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান ও রেমা-কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য খুলে দেওয়ার দাবি জানাই।  

এদিকে বৃহস্পতিবার (১ এপ্রিল) সন্ধ্যায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান একটি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেন।

এতে অন্যন্য নির্দেশনার সাথে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান, রেমা-কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যসহ হবিগঞ্জের সকল পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করা হয়।