সারা বাংলা

গরু নেই, দুই ছেলেকে নিয়েই হালচাষ

কৃষিক্ষেত্রে যথেষ্ট উন্নতি করেছে বাংলাদেশ। জমি চাষ থেকে শুরু করে বীজ রোপণ, ফসল কাটা ও মাড়াইয়ের কাজে যুক্ত হয়েছে অনেক আধুনিক যন্ত্রপাতি। এসব আধুনিক যন্ত্রপাতি যেমন কৃষকের হাড়ভাঙা খাটুনি কমিয়েছে, তেমনি কমিয়েছে চাষাবাদের ব্যয়ও।

কিন্তু এমন সময়েও এক জোড়া গরুর অভাবে বাপ-ছেলের কাঁধে উঠেছে জোয়াল! অন্য ছেলে ধরেছেন হাল। সম্প্রতি হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার শিবপাশা গ্রামে এমন দৃশ্যই দেখা গেছে। গরুর অভাবে একটি ফসলি জমিতে বাবা আর দুই পুত্র মিলে হালচাষ করছেন। কখনো বাপ-ছেলে জোয়াল বইছেন, অন্য ছেলে ধরছেন হাল। আবার কখনো বাবা ধরছেন হাল, দুই পুত্রের কাঁধে উঠছে জোয়াল।

জানা গেছে, এ গ্রামের দরিদ্র বাসিন্দা আজগর আলীর (৫০) গরু নেই। তাই বাধ্য হয়ে তিনি দুই ছেলেকে নিয়ে হালচাষ করছেন।

কাজের ফাঁকে আজগর আলী জানান, তিনি পেশায় একজন কৃষক হলেও নিজের জমিজমা নেই। আছে শুধু বসতভিটের ঝুপড়ি ঘর। লোকজনের জমি বর্গা নিয়ে ফসল চাষ করে আয় রোজগার করেন। কিন্তু চাষাবাদে নেই গরু বা মহিষ। তাই দুই ছেলেকে নিয়ে তিনি হালচাষ করে জমি প্রস্তুত করেন। পরে চাষ করেন নানা ধরণের ফসল। বছরজুড়ে একইভাবে তিনি ফসল উৎপাদন করেন।

তার ১১ সদস্যের সংসারে রয়েছেন স্ত্রী, ৬ মেয়ে ও ৩ ছেলে। এরমধ্যে শুধু এক মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। বাকি সন্তানদের ভরণপোষণের জন্য তাকে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করতে হয়। উৎপাদিত ফসল বিক্রির অর্থেই চলছে তার পুরো সংসার। বর্তমান করোনাভাইরাস পরিস্থিতে তিনি সরকারিভাবে তেমন কোনো সহায়তা পাননি। এ কারণে তার মনে অনেক কষ্ট। সরকারের কাছে তার বেশি কিছু চাওয়া নেই, হালচাষের জন্য এক জোড়া গরু ও আর্থিক কিছু অনুদান হলেই চলবে তার।

গ্রামের লোকজন বলেন, আজগর আলী কঠোর পরিশ্রমী। খাওয়া ও ঘুম ছাড়া বাকি সময়টুকু ফসল উৎপাদনে ব্যয় করেন। সরকারিভাবে সহযোগিতা করা হলে তার উপকার হবে।

যোগাযোগ করা হলে বাহুবল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আবদুল আউয়াল বলেন, ‘আপনার কাছ এ কৃষকের কথা জানলাম। তার ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিয়ে দ্রুত কিছু একটা করার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে আপ্রাণ চেষ্টা করা হবে। আর আপানারা জেনে থাকবেন আমরা পুরো উপজেলা জুড়ে কৃষকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সফল চাষাবাদের পরামর্শসহ সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে আসছি।’