সারা বাংলা

ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট সংক্রমণ ঝুঁকিতে সোনামসজিদ বন্দরের মানুষ

চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দর। এ বন্দরে ভারত থেকে আমদানি পণ্য নিয়ে আসা ট্রাকচালকদের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা না থাকায় করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট সংক্রমণের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

সোনামসজিদ স্থলবন্দরে বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত আছে সরকারি, বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও পণ্য খালাসের সঙ্গে জড়িত শ্রমিক, চালকসহ প্রায় ১০ হাজার কর্মজীবী মানুষ। যার মধ্যে নিবন্ধিত কর্মচারীর সংখ্যা ১ হাজার ২৬৬ জন। বাকি প্রায় ৮ হাজার ৭শ জন কর্মচারী ফলমূল, গম, ভুট্টা, মসলা, বিভিন্ন কৃষিপণ্য, পাথর, কয়লা, জ্বালানি তেলসহ বিভিন্ন পণ্য, ভারতীয় ও দেশীয় ট্রাকে ওঠা-নামার কাজ করেন।

সীমান্তের প্রবেশ দ্বারে ট্রাকে জীবাণুনাশক স্প্রে ও ট্রাকচালকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা কার্যক্রম চালু রয়েছে। তবে অনভিজ্ঞ স্বাস্থ্যকর্মীদের দিয়ে চলছে এসব ট্রাকচালকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা। এছাড়া বন্দর কর্তৃপক্ষের তেমন তদারকি না থাকায় সমাজিক দূরত্বের বালাই নেই বন্দরে পণ্য নিয়ে আসা ট্রাকচালক ও তাদের সহযোগীদের।

স্থানীয়রা বলছেন, ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে যেসব ট্রাকচালকরা বন্দরে আসছেন, তাদের মধ্যে সচেতনতা খুবই কম। 

সোনামসজিদ বন্দর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ভারত অংশে প্রতিরোধ ব্যবস্থা সচল থাকলেও, বাংলাদেশ অংশের পণ্য প্রবেশদ্বারে ট্রাকে জীবাণুনাশক স্প্রে ও চালকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। কাপড় কাঁচার জেটের সঙ্গে পানি মিশিয়ে হাতে ছিটিয়ে দায় সারছেন বন্দর কর্তৃপক্ষ। কারো মধ্যে কোনো সামাজিক দূরত্ব নেই। কর্তৃপক্ষের তদারকি না থাকায় অবাধে মাস্ক-পিপিই ছাড়া চলাফেরা করছেন ভারত ও বাংলাদেশি ট্রাকচালকেরা। আবার অনেকের কাছে মাস্ক থাকলেও তা ঠিক মত ব্যবহার করছেন না। কারো মুখে মাস্ক থাকলেও তা ঝুলছে থুতনিতে। এমনকি বন্দরের নিরাপত্তাকর্মীদের অনেকে দায়িত্ব পালন করছেন মাস্ক ছাড়া। এতে করোনা সংক্রমণ ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।

বন্দর এলাকায় বসবাসকারীরা জানান, ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে ট্রাকচালকেরা আমদানি পণ্য নিয়ে বেনাপোল বন্দরে আসছে। এ সময় ট্রাকচালকরা মাস্ক পরে বন্দরে আসলেও বন্দরে ভারতীয় ট্রাক টার্মিনালে পৌঁছানোর পর মাস্ক খুলে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে যত্রতত্র বন্দর এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এতে করে এসব ট্রাকচালকদের মাধ্যমে ভারতে করোনার নতুন ভেরিয়েন্ট সংক্রমণের ঝুঁকির মধ্যে পড়তে হচ্ছে তাদের। ট্রাকচালকেরা যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচল করে সেজন্য বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভারতে ভেরিয়েন্ট সংক্রমণে মৃত্যু হার বেড়ে যাওয়ায় প্রতিরোধ ব্যবস্থায় সরকার সোনামসজিদ চেকপোস্ট দিয়ে পাসপোর্টযাত্রী যাতায়াত বন্ধ করে দিয়েছিল। হঠাৎ করেই গত বুধবার বিকেলে (১৯ মে) ২৪ জন, বৃহস্পতিবার (২০ মে) ১১ জন মোট ৩৫ জন বাংলাদেশি এ চেকপোস্ট দিয়ে প্রবেশ করে। দেশের শিল্প কল-কারখানাগুলোতে উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থা সচল রাখতে এ বন্দর লকডাউনের আওতামুক্ত রেখে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম চালু রাখে সরকার। এ বন্দরটিতে স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষের তদারকি না থাকায় করোনা সংক্রমণ ঝুঁকি বেড়েই চলেছে।

প্রতিদিন প্রায় পাঁচশ থেকে হাজারখানেক ভারতীয় পণ‌্যবাহী ট্রাক যাতায়াত করে। যেহেতু ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে ট্রাকচালকেরা বন্দরে আসছেন। এসব ট্রাকচালকদের স্বাস্থ্য সচেতনতা না বাড়ালে এদের মাধ্যমে ভারতের করোনা ভ্যারিয়েন্ট সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার সম্ভবনা বেশি। তাই বন্দরের কর্মকর্তাদের দ্রুত সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার বলে জানান ওই এলাকার সচেতন বাসিন্দারা।

সোনামসজিদ বন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবদুল আওয়াল বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে এসব ট্রাকচালক ও বন্দরের শ্রমিকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সকলকে সুরক্ষা সরঞ্জাম দেওয়া হয়েছে।’ বিষয়টি তারা তদারকি করছেন বলে জানান তিনি।

জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহিদ নজরুল চৌধুরী জানান, সোনামসজিদ বন্দরে একটি মেডিক‌্যাল টিম আছে। তারা বন্দরের কর্মচারীদের স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করছেন। ভারতে আটকে পড়া বাংলাদেশি যারা এ বন্দর দিয়ে প্রবেশ করছে তাদের জন্য কোয়ারেন্টাইনের জন‌্য ৮ জায়গায় ব্যবস্থা করা হয়েছে। জেলায় করোনা শনাক্তের হার ৬৭ শতাংশ। সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য অনুরোধ করেন তিনি।