সারা বাংলা

বাঁধ ভাঙার আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কেটেছে উপকূলের অধিবাসীদের

ঘূর্ণিঝড় সিডর, আইলা ও আম্ফানের পর ভেঙে যাওয়া বাঁধ সংস্কার হলেও তা স্থায়ী হয়নি। এর মধ্যে আবারও ঝড়ের পূর্বাভাস। আবারও বাঁধ ভাঙার আতঙ্ক। ফলে রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে খুলনা উপকূলীয় জনপদের অধিবাসীদের।

রোববার (২৩ মে) রাত জেগেই পার করেছেন অধিকাংশ মানুষ। তাদের কপালে এখন চিন্তার ভাজ। এদিকে, রোববার রাত ২টার দিকে খুলনায় মুষলধারে বৃষ্টিপাত ও বিদ্যুৎ চমকানোয় আতঙ্ক সৃষ্টি হয়।

খুলনা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ সোমবার (২৪ মে)  সকাল ৮টায় রাইজিংবিডিকে এসব তথ‌্য জানিয়েছেন।

আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ জানান, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে আকাশে মেঘ জমে। এ কারণে রোববার রাত ২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত খুলনা অঞ্চলে ভারি বৃষ্টিপাত হয়। এক ঘণ্টায় ১৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

আমিরুল আজাদ জানান, আবহওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী আজ সোমবার দিনের বেলা তেমন বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। তবে, সন্ধ্যার পর থেকে খুলনা অঞ্চলের আকাশ মেঘে ঢেকে যেতে পারে এবং বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।

স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে ঝুঁকির মুখে রয়েছে খুলনার কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের আংটিহারা, খাসিটানা, জোড়শিং, মাটিয়াভাঙ্গা, উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের গাতিরঘেরি, গাববুনিয়া, গাজিপাড়া, কাটকাটা, কয়রা সদর ইউনিয়নের ৬ নম্বর কয়রা, ৪ নম্বর কয়রার পুরাতন লঞ্চঘাট সংলগ্ন এলাকা, মদিনাবাদ লঞ্চ ঘাট, ঘাটাখালি, হরিণখোলা, মহারাজপুর ইউনিয়নের উত্তর মঠবাড়ি, দশালিয়া, লোকা এবং মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের কালিবাড়ি, নয়ানি, শেখেরটেক এলাকা।

সূত্র আরও জানায়, কয়রা উপজেলার চারদিকে নদী বেষ্টিত। শুধুমাত্র পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ দু’টি জনপদকে ঘিরে রেখেছে। দুর্বল বেড়িবাঁধের কারণে বর্ষা মৌসুমে আবহাওয়া বিরূপ হলে পানির চাপে কোথাও কোথাও ভেঙে পানি প্রবেশ করে লোকালয়ে। উপকূলীয় জনপদের বেশ কিছু জায়গা রূপ নেয় স্থায়ী জলাবদ্ধতায়। মাঝে মধ্যে গ্রীষ্ম মৌসুমেও বাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে।

কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ উদ্দিন জানান, দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে কয়রার ২৫ কিলোমিটারের মতো বেড়িবাঁধ দুর্বল হয়ে পড়েছে। বেড়িবাঁধের কোথাও কোথাও মাত্র দেড় থেকে দুই হাত মাটি অবশিষ্ট রয়েছে। অবস্থা এতটাই খারাপ যে, বাঁধের অনেক জায়গা দিয়ে চুইয়ে চুইয়ে (লিকেজ) পানি প্রবেশ করছে। জোড়াতালির বেড়িবাঁধ, দীর্ঘমেয়াদি ও সুপরিকল্পিত কার্যক্রমের অভাব এখনও দৃশ্যমান। এর মধ্যে আসছে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। এতে আতঙ্ক বেড়ে গেছে এসব এলাকার মানুষের। ফলে ভাঙন আতঙ্কে এলাকাবাসী রাতে ঠিকমত ঘুমাতেও পারছেন না। 

এদিকে, কয়রা উপজেলা প্রশাসন বলছে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবেলায় তারা ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে আনতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম, প্রস্তুত রাখা হয়েছে মেডিক‌্যাল টিম। এরই মধ্যে কয়রাবাসীকে সতর্ক করতে মাইকিং শুরু হয়েছে।

উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম জানান, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস খুলনা উপকূলে আঘাত হানতে পারে। এ অবস্থায় ঘূর্ণিঝড়কে কেন্দ্র করে ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বরদেরকে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ১১৮টি আশ্রয় কেন্দ্রের পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে কাজে লাগানো হবে। কাজ করছেন স্বেচ্ছাসেবকরা।