সারা বাংলা

মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামের ‘মঙ্গলবাড়িয়া লিচু’

লিচু চাষ করে দেশে পরিচিতি পেয়েছে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার মঙ্গলবাড়িয়া গ্রাম। চলতি মৌসুমে এই গ্রামের হাজার হাজার গাছে লিচুর ভালো ফলন হয়েছে। সুমিষ্ট স্বাদ, সুন্দর গন্ধ, টসটসে রসালো ও গাঢ় লাল রঙের মঙ্গলবাড়িয়ার লিচু।

জেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে মঙ্গলবাড়িয়া গ্রাম। এই গ্রামে লিচু চাষের প্রচলন ঠিক কত বছর আগে এবং কীভাবে শুরু হয়, এর সঠিক তথ্য নেই। স্থানীয়দের ধারণা, অন্তত শত বছর আগে এখানে লিচু চাষ শুরু হয়। আর এখানকার লিচু আসলে কোন জাতের তাও কেউ জানে না। গ্রামের নাম অনুসারে নামকরণ হয়েছে ‘মঙ্গলবাড়িয়া লিচু’।

এই গ্রামের অনেক চাষি লিচু বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা আয় করছেন। জেলা ‍কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. ছাইফুল আলম জানান, গত বছর দাম না পেলেও চলতি মৌসুমে এই গ্রামের ৩০ হাজার গাছ থেকে ১০ কোটি টাকা আয় হবে। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসছে শত শত পাইকার ও খুচরা ক্রেতারা।

মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামের লিচু চাষি হারুন-অর-রশিদ। তিনি জানান, এ বছর তার ২০০ গাছ থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকার লিচু বিক্রি করেছেন। প্রতি একশত লিচু ৪০০-৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গাছের সব লিচু বিক্রি শেষ হওয়ার পর আবার গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত হতে হবে। তার বাগানে ১৫ জন শ্রমিক কাজ করে। তাদেরও সারা বছর সংসার চলে এই লিচুর আয় দিয়ে।

স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নাদিরা বেগম রাইজিংবিডিকে, মঙ্গলবাড়িয়া গ্রাম থেকে ইতোমধ্যে সাড়ে ৭ কোটি টাকার লিচু বিক্রি হয়েছে। এখনো যা লিচু রয়েছে, ধারণা করা হচ্ছে সব মিলিয়ে ৯-১০ কোটি টাকার বিক্রি হবে। গ্রামের বেশিরভাগ চাষি লিচু চাষে সম্পৃক্ত।  

লিচু চাষি শামীম মিয়া জানান, বংশানুক্রমে গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ লিচু চাষে জড়িত। লিচু চাষ করে তারা ভালো লাভ পাচ্ছে। সংসারে স্বচ্ছলতা এসেছে। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হয়েছে।

লিচুর পাইকার ব্যবসায়ী এবং চাষি তৌহিদ মিয়া রাইজিংবিডিকে বলেন, তার শতাধিক গাছ রয়েছে। এছাড়াও তিনি বাগান কিনে থাকেন। ৪২ বছর ধরে এখানে লিচুর চাষ করছেন। এ বছর লিচু চাষে তার ২০ লাখ টাকার বেশি খরচ হয়েছে। এ পর্যন্ত বিক্রিও ভালোই হয়েছে। তিনি আশা করছেন, শেষ পর্যন্ত ভালো অংকের টাকা লাভ গুনতে পারবেন। এখানকার লিচু সুস্বাদু। বেশিরভাগ লিচু অন্যান্য জেলার ব্যবসায়ীরা এসে কিনে নিয়ে যায়।

জেলা ‍কৃষি সম্প্রসারণ উপপরিচালক মো. ছাইফুল আলম রাইজিংবিডিকে বলেন, মঙ্গলবাড়িয়া জাতের লিচুর মানে ভালো। গ্রামের কৃষকরা এই জাতের লিচু চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর লিচুর ফলন ভালো হয়েছে, চাষিরাও লাভবান হচ্ছে।