সারা বাংলা

ময়মনসিংহে ধ্বংসের পথে দেড়শ বছরের ‘লোহার কুঠি’

ময়মনসিংহের ঐতিহ্যবাহী বাগানবাড়ির ‘লোহার কুঠি’ সংরক্ষণের অভাবে ধ্বংস হতে চলেছে। কর্তৃপক্ষের যথাযথ দৃষ্টি না থাকায় অরক্ষিত হয়ে পড়েছে প্রায় দেড়শ বছরের এই স্থাপনা।

ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, ১৮৭৯ সালে ময়মনসিংহ জেলার শতবর্ষ উপলক্ষে আমন্ত্রণ জানানো হয় তৎকালীন সপ্তম এডওয়ার্ড পত্নী আলেকজান্ডারকে। তার নামেই এর নামকরণ হয় ‘আলেকজান্ডার ক্যাসেল’। এর নির্মাতা মুক্তাগাছার জমিদার মহারাজা সুকান্ত সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরী। তিনি ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে প্রায় ২৭ একর জমিতে অবস্থিত বাগানবাড়িতে ক্যাসলটি নির্মাণ করেন। এটি তৈরিতে লোহার ব্যবহার বেশি হওয়ায় স্থানীয়দের কাছে এটি ‘লোহার কুঠি’ নামে পরিচিত।

ইতিহাসখ্যাত অনেক বরেণ্য ব্যক্তির স্মৃতিধন্য আলেকজান্ডার ক্যাসেল। ময়মনসিংহ সফরকালে ১৯২৬ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এখানে থেকেছেন। একই বছর আসেন মহাত্মা গান্ধী। আরো এসেছেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, নওয়াব স্যার সলিমুল্লাহ, কামাল পাশা, লর্ড কার্জন, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু, মৌলভী ওয়াজেদ আলী খান পন্নীসহ অনেক গুণী ব্যক্তিত্ব।

বর্তমান নগরীর আদালত পাড়ায় অবস্থিত ক্যাসেলটি অনেকটাই অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় বাগানবাড়ির চারপাশে নেই কোনো প্রাচীর। মূল গেইটে একটি সাইনবোর্ড টানিয়ে লোহার কুঠি ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে সাধারণ মানুষকে সতর্কবার্তা দিয়েই দায় সেরেছে কর্তৃপক্ষ।

অথচ বাগানবাড়ির ভেতরে নির্মিত হচ্ছে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ভবন। ফলে নষ্ট হচ্ছে ইতিহাসখ্যাত বহু বরেণ্য ব্যক্তিদের স্মৃতিবিজড়িত জায়গাটি। সাহিত্যিক ও গবেষক ফরিদ আহমদ দুলাল বলেন, ‘এসব ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা সংরক্ষণ না করলে আমাদের সংস্কৃতির বিকাশ ঘটবে না। সংস্কৃতির বিকাশ ছাড়া কোনো দেশ উন্নত হতে পারে না। আলেকজান্ডার ক্যাসেলের সীমায় বড় বড় সরকারি স্থাপনা হচ্ছে। অথচ জেলার ঐতিহ্যে জড়িয়ে থাকা ক্যাসেলটি রক্ষায় দৃশ্যত কোনো উদ্যোগ নেই।’ 

আলেকজান্ডার ক্যাসেল প্রত্মতত্ত্ব অধিদপ্তর পূরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করলেও সংস্কারের কাজ এখনও কেন শুরু করেনি- এই প্রশ্ন তুলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এই সংস্কৃতিকর্মী।

শিক্ষক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব উত্তম কুমার মজুমদার একইভাবে বিস্মিত কণ্ঠে বলেন, ‘আলেকজান্ডার ক্যাসেলের সদর দরজার দুই পাশে দুটি ভাস্কর্য ছিল। এগুলোর হাতসহ বিভিন্ন অঙ্গ-পতঙ্গ নিশ্চি‎হ্ন হয়ে গেছে! এগুলো দেখার কেউ নেই। চারপাশের লোহার শৈল্পিক কারুকাজগুলো রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হচ্ছে।’

‘সংস্কৃতিকর্মী হিসেবে আমাদের খুব বেশি কিছু সরকারের কাছে চাওয়ার নেই। আমরা চাই আগামী প্রজন্মের কাছে ইতিহাস ঐতিহ্য বেঁচে থাকুক।’ বলেন উত্তম কুমার।

প্রত্মতত্ত্ব অধিদপ্তরের কর্মকর্তা সাবিনা ইয়াসমিন আশাপ্রকাশ করে বলেন, ‘ময়মনসিংহের আলেকজান্ডার ক্যাসেলসহ ঐতিহ্যবাহী বেশ কয়েকটি স্থাপনা প্রত্মতত্ত্ব অধিদপ্তরের গেজেটে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এটি সংরক্ষিত পুরাকীর্তি। দর্শনীয় হিসেবে গড়ে তোলার কাজ শুরু করার কথা থাকলেও করোনার জন্য সম্ভব হচ্ছে না। পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলে সংশ্লিষ্ট কমিটি সংস্কার কাজ শুরুর উদ্যোগ নেবে।’