হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ দাউদনগর রেলওয়ে গেইট ঘরের পেছনে বধ্যভূমি। দেশ স্বাধীনের পর থেকেই এ বধ্যভূমি পাহারা দিয়ে আসছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহতাব আলী। কয়েক বছর আগে তিনি মারা গেছেন।
মুক্তিযোদ্ধা মাহতাব আলীর তিন মেয়ে। তাদের সবার বিয়ে হয়েছে। এরমধ্যে এক মেয়ে স্বামীর সংসারে মোটামুটি ভালো আছেন। তবে অপর দুই মেয়ে রোকেয়া খাতুন (২৮) ও সমতা আক্তার (২৫) মানবেতর জীবন করছেন। বাবার বাড়িতেই তারা বাস করছেন।
রোকেয়া খাতুন জানান, তার বিয়ে হয়েছিল চুনারুঘাটের পঞ্চাশের আব্দুস ছালামের সঙ্গে। বিয়ের পর থেকেই নানা কারণে স্বামী তাকে নির্যাতন করত। নির্যাতন সহ্য করে প্রায় ১০ বছর স্বামীর ঘর করেছেন। তাদের সংসারে দুই ছেলে ও এক মেয়ের জন্ম হয়েছে। স্বামী আরেকটি বিয়ে করে তাকে ছেড়ে চলে গেছেন। বাধ্য হয়ে রেলওয়ের সরকারি জমিতে বাবার ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করতে হচ্ছে।
ওই ঝুপড়ির অপর একটি কক্ষে বাস করেন রোকেয়ার ছোট বোন সমতা আক্তার। রোকেয়ার মতো একই অবস্থা তারও। বিয়ের প্রায় ৯ বছর পর স্বামী ফরহাদ মিয়া আরেকটি বিয়ে করে তাকে ছেড়ে চলে গেছেন। এক ছেলে-এক মেয়ের মা সমতা আক্তার।
ঘর নেই, সংসার নেই। দারিদ্রতাকে সঙ্গী করে সন্তানদের নিয়ে চরম মানবেতর জীবন যাপন করছেন দুই বোন। খেয়ে না খেয়ে থাকতে হচ্ছে। টাকার অভাবে সন্তানদের লেখাপড়া এবং চিকিৎসাও করাতে পারছেন না। সন্তানদের নিয়ে দুই বোন অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এগুচ্ছেন।
এ অবস্থায় বসবাসের জন্য জমিসহ ঘর, আর্থিক সহযোগীতা ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে যোগ্যতা সাপেক্ষে কোটা ভিত্তিক চাকরি দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন তারা।
সমাজসেবক সৈয়দ আখলাক উদ্দিন মনসুর বলেন, ‘স্বাধীনতা যুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহতাব আলীর অবদান অস্বীকার করা যাবে না। স্বাধীন দেশে এ বীরের সন্তানরা মানবেতর জীবন যাপন করবে, এটা মেনে নিতে পারছি না।’
উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ গাজীউর রহমান ইমরান বলেন, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধার দুই মেয়ের কথা শুনে অনেক খারাপ লাগছে। উপজেলা প্রশাসন থেকে তাদেরকে সহায়তা করার জন্য চেয়ারম্যান ও ইউএনও মহোদয়কে অনুরোধ করব।’
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. মিনহাজুল ইসলাম বলেন, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহতাব আলীর দুই মেয়ের অবস্থা জেনে ইতোমধ্যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তাদেরকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার ঘর দেওয়ার চেষ্টা চলছে। পরবর্তীতে আর্থিক সহযোগীতার চেষ্টা করা হবে।’