সারা বাংলা

সিলেটের নতুন কারাগারে প্রথম ফাঁসি সিরাজের, জল্লাদ শাহজাহান

সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার-১ এ স্ত্রী হত্যায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সিরাজুল ইসলাম সিরাজের (৫৫) ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। এ দণ্ড কার্যকরের মধ্য দিয়ে নতুন নির্মিত ওই কারাগারের ফাঁসির মঞ্চে প্রথমবারের মতো ফাঁসি কার্যকর করা হলো। আর সেই ফাঁসি কার্যকরের দায়িত্বে ছিলেন জল্লাদ শাহজাহান।

বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) রাত ১১টায় সিরাজের ফাঁসি কার্যকর হয় বলে জানান কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মঞ্জুর হোসেন। তিনি জানান, ‘ফাঁসি কার্যকরের আগে সিরাজের শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার সুযোগ দেওয়া হয়। এরপর তাকে গোসল করিয়ে তওবা পড়ানো হয়। পরেই ফাঁসির মঞ্চে নেয়া হয়। ফাঁসি কার্যকরের পর রাতেই সিরাজের স্বজনরা তার মরদেহ দাফনের জন্য হবিগঞ্জে নিয়ে গেছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।’

কারাগার ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, হবিগঞ্জের রাজনগরের কবরস্থান এলাকার বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম সিরাজ ২০০৪ সালের ৬ মার্চ স্ত্রী সাহিদা আক্তারকে শাবল ও ছুরি দিয়ে হত্যা করেন। এ ঘটনার পরদিন হবিগঞ্জ সদর থানায় সাহিদার বড় ভাই বাদি হয়ে হত্যা মামলা করেন। দীর্ঘ শুনানী শেষে এই মামলায় ২০০৭ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক জেলা ও দায়রা জজ সিরাজের ফাঁসির আদেশ দেন। পাশাপাশি ১০ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়।

এই রায়ের বিরুদ্ধে সিরাজ হাইকোর্টেও আপিল করেছিলেন, তবে আদালত নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখেন। পরে ডেথ রেফারেন্সের (নং-১৮/০৭) আলোকে ২০১২ সালের ১ আগস্ট জেল আপিল নিষ্পত্তি করে আগের রায় বহাল রাখেন। ওই রায়ের বিরুদ্ধে ফের সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগেও জেল পিটিশন (নং-২৬/১২) দেওয়া হয়। শুনানি শেষে আপিল বিভাগ ২০২০ সালের ১৪ অক্টোবর সিরাজের আপিল বাতিল করে ফাঁসি বহাল রাখেন।

আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের ১৬ বছর ৩ মাস পর স্বামী সিরাজের ফাঁসি কার্যকর করা হলো। অবশ্য ফাঁসির হাত থেকে বাঁচতে গত ২৫ মে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষা চেয়ে আবেদন করেছিলেন তিনি, কিন্তু তার আবেদন মঞ্জুর হয়নি। পরে সকল আইনী প্রক্রিয়া শেষ হওয়ায় আজ রাতে তার ফাঁসি কার্যকর হয়।

ফাঁসির মঞ্চে ওঠার আগে সিরাজ খুব শান্তভাবে হেটে ফাঁসির মঞ্চে যান বলে কারা সূত্র জানিয়েছে। সূত্র জানায়, সিরাজের ফাঁসি কার্যকরের জন্য ১৪ জুন কাশিমপুর কারাগার থেকে শাহজাহানকে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা হয়। সিরাজ ছাড়াও এই জল্লাদ বিএনপি নেতা সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরী, জামায়াত নেতা আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, কাদের মোল্লাসহ কয়েকজনের ফাঁসি কার্যকর করেছেন।

প্রসঙ্গত, ১৭৮৯ সালে নগরীর ধোপাদীঘির পাড়ে ২৪.৬৭ একর জায়গায় তৎকালীন বৃটিশ রাজের প্রতিনিধি সিলেটের কালেক্টর জন উইলসন  নির্মাণ করেন সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার। এতে নির্মাণ ব্যয় হয়েছিল এক লাখ রুপি। 

২২৭ বছর পর সেই কারাগার সরিয়ে নেয়া হয় নগরীর বাইরে-শহরতলীর বাদাঘাট এলাকায়। নতুন কারাগারের বন্দির ধারণ ক্ষমতাও প্রায় আড়াই হাজার। রয়েছে আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধাও। ২০১৮ সালের  ১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের উদ্বোধন করেন। 

তবে উদ্বোধনের দুই মাস পর ২০১৯ সালের ১১ জানুয়ারি বন্দি স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরু হয়। তখন এই কারাগারের নামকরণ করা হয় সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার-১। আর পুরাতন কারাগারটি সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার-২ নামে কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। পুরাতন কারাগারের ফাঁসির মঞ্চে ৭টি ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছিল।