সারা বাংলা

সাহসের প্রতীক ‘মেইল’ মোজাম্মেল

দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার কুন্দনহাট একায় বাড়ি মোজাম্মেল হকের। ৫৭ বছর বয়সী এ মানুষটি এক সময় এলাকার সবচেয়ে দুর্ধর্ষ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তার কর্ম চাঞ্চল্য ও গতিতে মুগ্ধ হয়ে এলাকাবাসী তাকে মেইল মোজাম্মেল বলে ডাকতেন। 

কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস! একদিন তার পায়ের আঙুলে ছোট্ট একটি ক্ষত দেখা দেয়। সেই ক্ষত পরে মারাত্মক হয়ে পড়ে। রংপুর মেডিক্যালে গিয়ে আঙুলটি কেটে ফেলা হয়। পরে কাটতে হয় হাঁটু পর্যন্ত। ক্রমান্বয়ে কোমরের নিচ থেকে কেটে ফেলতে হয় মোজাম্মেলের। গলার কাছেও করা হয় একটি অপারেশন। মোট চারবার অপারেশনের পর মেইল মোজাম্মেল প্রায় অচল হয়ে পড়েছেন।

শুধু তাই নয়, গলার কাছে অপারেশনটি করার পর শ্রবণশক্তিও হারিয়েছেন তিনি। এখন কাগজে লিখে দিলে অন্যের চাহিদা বুঝতে পারেন তিনি। তবে এ পরিস্থিতিতেও আত্মসম্মান হারাননি মোজাম্মেল। নিজের পরিশ্রমেই সম্মানের সঙ্গে বাঁচতে চান। 

প্রায় ৩৫ বছর ধরে সাইকেল-ভ্যান সারাইয়ের পেশা তার। এটাই তার উপার্জনের মাধ্যম। পা হারানোর পরও পেশা ছাড়েননি মোজাম্মেল। হাজার কষ্টের মধ্যেও আঁকড়ে ধরে রেখেছেন পেশাটি। চলাচলের সুবিধার্থে নিজেই বানিয়ে নিয়েছেন একটি চার্জার ভ্যান। তবে সেটির অবস্থাও তেমন সুবিধার নয়।

পরিবারের সবার ভরসার এই মানুষটির অসাধারণ মনের জোর থাকলেও উপার্জনে তেমন জোর নেই। সাইকেল-ভ্যান সারিয়ে প্রতিদিন গড়ে দেড় থেকে দুইশ’ টাকা উপার্জন করেন তিনি। এতে কোনো রকমে চলে সংসার। এদিকে বয়স বাড়ার সাথে সাথে ক্ষত স্থানগুলোতে জেগে উঠেছে ব্যাথা। কাজের গতি কমে যাচ্ছে। কমে যাচ্ছে আয় রোজগারও। 

তার গ্যারেজটির অবস্থাও বড়ই নাজুক। অর্থের অভাবে প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ কিনতে পারেন না মোজাম্মেল। সরকারি বা কোনো হৃদয়বান মানুষের সহায়তা পেলে হয়তো কিছুটা সহজ হতো তার জীবন।