সারা বাংলা

বদলে গেছে কুমিল্লা টাউন হলের চেহারা

কুমিল্লা নগরীর ‘বীরচন্দ্র গণপাঠাগার ও নগর মিলনায়তন’ কুমিল্লা টাউন হল নামেই পরিচিত। দীর্ঘদিন ধরে টাউন হল মাঠের সীমানা প্রাচীরের ভেতর এবং বাইরের অংশ ছিল অবৈধ দখলদারদের কব্জায়। অবস্থা এমন ছিল যে, ভেতরে না ঢুকলে ১৩৬ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী ভবনটিও দেখা যেত না।

জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ২০২১ সালের শুরুতে টাউন হল মাঠের সীমানা প্রাচীরের ভেতর-বাইরের অস্থায়ী দোকান উচ্ছেদের মাধ্যমে প্রাণ ফেরে টাউন হলের। দলখমুক্ত হওয়ার পর সিটি করপোরেশনের সহায়তায় টাউন হলকে সাজানো হয় নতুন রূপে। এতেই বদলে যায় ঐতিহাসিক টাউন হলের চেহারা। এখন বাইরে থেকেও দেখা যায় স্থাপত্যশৈলীর অনন্য নিদর্শন টাউন হল ভবনটি। 

দখলমুক্ত করার পর মাঠের সীমানা প্রাচীরের ভেতরের অংশে রোপন করা হয়েছে ফুলের গাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষ। শুধু তা-ই নয়, টাউন হলকে দৃষ্টিনন্দন করতে সীমানা প্রাচীরের লোহার গ্রিলে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে পরিত্যক্ত প্লাস্টিক বোতলের তৈরি দৃষ্টিনন্দন ফুলের টব। হলুদ ও সবুজ রঙের টবে ফুল গাছ লাগিয়ে তৈরি করা হয়েছে ঝুলন্ত বাগান। এ বাগানে আছে গোলাপ, পাতাবাহার, গাঁদা, রোজ মসসহ নানান ফুলের গাছ। কিছু কিছু গাছে ফুলও এসেছে।

টাউন হলটিকে দৃষ্টিনন্দন করতে কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সাঈদের আপ্রাণ প্রচেষ্টা ছিল। বাগান তৈরির কাজে তার সঙ্গে ছিল ‘ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশ এবং গার্ডেনারস লাভারস অব বাংলাদেশ’ নামের দুটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।

এ টাউন হলে পদধূলি পড়েছে মহাত্মা গান্ধী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস, মওলানা ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আরও অনেক মনীষীর।

ঐতিহ্যবাহী এ টাউন হলটি নির্মিত হয় ১৮৮৫ সালের তৎকালীন জেলা প্রশাসক এফ এইচ স্ক্রাইনের উদ্যোগে। তিনি ত্রিপুরার চাকলা রোশনাবাদের জমিদার নরেশ মহারাজ ‘বীরচন্দ্র মানিক্য বাহাদুর’- এর কাছে পাঠাগার তৈরির জন্য জমি দিতে অনুরোধ জানান। 

মহারাজ বীরচন্দ্র কুমিল্লা শহরের প্রাণকেন্দ্র কান্দিরপাড়ে ১০ বিঘা জমির ওপর নিজস্ব অর্থায়নে একটি ভবন নির্মাণ করে দেন। ১৮৮৫ সালের ৬মে প্রতিষ্ঠিত ওই ভবনই কুমিল্লার গণপাঠাগার ও নগর মিলনায়তন, যা কুমিল্লা টাউন হল নামে পরিচিত।