সারা বাংলা

রামেক হাসপাতালে ৪৩ শতাংশই করোনা রোগী, আতঙ্ক বাড়ছে 

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে কোভিড-১৯ রোগী। প্রতিদিন নতুন মৃত্যু যুক্ত হচ্ছে। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন চিকিৎসা সংশ্লিষ্টরা। 

বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া মোট রোগীর প্রায় ৪৩ শতাংশই করোনায় আক্রান্ত। এ পরিস্থিতিতে হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত রোগীর আর্তনাদ ও মৃত ব্যক্তির স্বজনদের আহাজারি আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। 

সোমবার (৫ জুলাই) সকাল ৯টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত রামেক হাসপাতালে অবস্থান নিয়ে দেখা গেছে, এ সময়ের মধ্যে হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে মোট ৫১ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ১৯ জন করোনা আক্রান্ত। এ নিয়ে এদিন হাসপাতালে মোট ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ২১৫ জন। এর মধ্যে করোনা ইউনিটে রয়েছেন ৫১৪ জন। করোনা আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে গর্ভবতী নারীও রয়েছেন। করোনা আক্রান্ত এসব রোগীদের প্রায় প্রত্যেকের শ্বাসকষ্ট রয়েছে। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে এসে প্রথমেই তাদের অক্সিজেনের প্রয়োজন হচ্ছে।  

জরুরি বিভাগের সামনে অবস্থান নিয়ে দেখা গেছে, করোনা আক্রান্ত এসকল রোগীর অনেকটা খারাপ অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। কয়েকজনকে তীব্র শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হতে দেখা গেছে। এমনই একজন গর্ভবতী মুন্নি বেগম। তিনি নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার বাসিন্দা। বয়স ৩৮ বছর। 

তার শ্বশুর আফসার আলী জানান, তার ছেলের বউ গর্ভবতী। এর মধ্যে আবার করোনা আক্রান্ত। গত কয়েকদিন থেকে কিছুটা সর্দি-কাঁশি-জ্বর ছিল। পরে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। তার অ্যাজমার সমস্যাও রয়েছে। রোববার (৪ জুলাই) থেকে শারীরিক অবস্থা খারাপ হয়েছে। উপায়ন্তর না দেখে হাসপাতালে ভর্তি করাতে নিয়ে এসেছেন। 

এমনিই আরেকজন নীলা বেগম। তিনি তীব্র শ্বাসকষ্ট ও মাথাব্যথা নিয়ে হাসপাতালে আসেন। তার বয়স ৩৯ বছর। তিনি করোনা আক্রান্ত না হলেও লক্ষণ থাকায় তাকে করোনা ওয়ার্ডে রেফার্ড করা হয়। 

রামেক হাসপাতাল সূত্র বলছে, প্রতিদিনিই করোনার লক্ষণসহ বিভিন্ন জটিলতা নিয়ে রোগী আসছে। লক্ষণ থাকলে তাদের করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি করানো হচ্ছে। এতে নতুন নতুন ওয়ার্ডকে করোনা ওয়ার্ড হিসেবে প্রস্তুত করা হচ্ছে। এখন ৭ ও ১২নং ওয়ার্ডকে করোনা ওয়ার্ড হিসেবে প্রস্তুত করা হচ্ছে। এরপর হয়তো রোগী আসলে বারান্দায় থাকার ব্যবস্থা করা হবে। 

করোনা ওয়ার্ডে মোট বেড রয়েছে ৪০৫টি। এর বিপরীতে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ৪৮৫ জন। রোববার (৪ জুলাই) সকাল ৮টা থেকে সোমবার (৫ জুলাই) সকাল ৮টা পর্যন্ত ৬৯ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। একই সময়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৪৮ জন। সোমবার (৫ জুলাই) বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত হাসপাতালে মোট করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৫১৪ জন। 

এ বিষয়ে রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী জানান, হাসপাতালে প্রতিনিয়তই করোনা রোগী বাড়ছে। এতে প্রতিদিন তাদের নতুন চ্যালেঞ্জ সামনে রেখে কাজ করতে হচ্ছে। অগ্রিম পরিকল্পনা নিতে হচ্ছে। সামনে আরও দুইটা ওয়ার্ডকে করোনা ওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহার করা হবে। এরপর থেকে রোগীদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যথায় রোগীদের মেঝেতে চিকিৎসা নিতে হবে। 

তিনি আরও জানান, ক্রমবর্ধমান হারে রোগী বাড়তে থাকায় অনেক চিকিৎসক ও নার্সরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। অনেকে করোনা ওয়ার্ডে ডিউটি করতে চাচ্ছেন না। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে এভাবে ছুটি দেওয়ার সুযোগ নেই। তাদের মানসিকভাবে শক্তিশালী হতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।