সারা বাংলা

হাট-বাজারে আর জমে না সাপের খেলা

‘খা খা খা বক্ষিলারে খা তারি দিব্যি ফণাতে তোর যে ঠাকুরের পা নাচ নাগিনী ফণা তুলে, নাচ রে হেলেদুলে’

নদীমাতৃক বাংলাদেশের বেদে বহরে সাপ ছিল অবধারিত। সাপুড়েরা ঘুরে ঘুরে বাড়িতে বা হাট-বাজারে সাপ নাচিয়ে খেলা দেখিয়ে জীবিকা নির্বাহ করত। হাঁক ছেড়ে তারা তখন গেয়ে উঠত সেই গান: খা খা খা বক্ষিলারে খা’ অথবা ‘কি সাপ দংশিলো রে লক্ষিন্দরে…।’

সাপুড়ে কিংবা বেদেদের সাপের খেলা আর তেমন দেখা যায় না। অথচ এক সময় এই পেশা উঠে এসেছে সাহিত্য অথবা চলচ্চিত্রে। সেই কল্পকাহিনীর প্রতি বাঙালির আকর্ষণ ছিল চিরন্তন। সেই আকর্ষণকে পুঁজি করেই খেলা দেখান সাপুড়েরা। কিন্তু বর্তমান আধুনিক যুগে সাপের খেলার আবেদন কমে যাওয়ায় পেশা বদল করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ঠাকুরগাঁও বালিয়াডাঙ্গীর লাহিড়ী হাটে এক বিকেলে দেখা মেলে সপু মিয়ার (৪০) সঙ্গে। দু’জন সহযোগী নিয়ে সাপের খেলা দেখাচ্ছিলেন। পাশেই সাউন্ড বক্সে বাজছে বীণের শব্দ। তাকে ঘিরে রয়েছে বিভিন্ন বয়সের মানুষ। 

সপু মিয়ার বাড়ি জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায়। তিনি ১৮ বছর বয়স থেকে  সাপের খেলা দেখান। বাপ-দাদার পেশা থেকেই সে এই পেশায় এসেছে। আগে সবসময় সাপ নিয়ে খেলা দেখাতেন। লোকজনও হতো প্রচুর। কিন্তু এখন আর আগের মতো খেলা জমে না। আগের মতো উপার্জনও নাই। তাছাড়া এখন আর আগের মতো সাপও পাওয়া যায় না। 

সপু বলেন, ‘এখন কয়েকটি সাপ নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে হাটে-বাজারে খেলা দেখাই। এতে যে যা সাহায্য করে তাই দিয়ে সংসার চালাই।’

লাহিড়ী হাটে হঠাৎ সাপের খেলায় উৎসুক জনতার বেশ ভিড় দেখা যায়। খেলা দেখতে আসা আলম হোসেন জানান, এক সময় প্রতিদিন এই হাটে সাপের খেলা দেখানোর আসর জমতো। তারা বেশ আনন্দের সঙ্গে উপভোগ করতেন। তবে এবার প্রায় ৩ বছর পর তিনি সাপের খেলার মজমা দেখতে পেয়ে এখানে দাঁড়িয়েছেন। 

তবে প্রবীণ সাংবাদিক আব্দুল লতিফ বলেন, ঠাকুরগাঁও জেলায় একসময় প্রচুর সাপুড়ে ছিল। কোথাও সাপের সন্ধান পেলেই সাপ ধরতে আসতেন তারা। অনেকে তাদের থেকে বিভিন্ন প্রকার ওষুধ ও তাবিজ নিয়ে ব্যবহার করতেন। তবে এখন জেলায় সাপুড়ে খুঁজে পাওয়া দুঃসাধ্য হয়ে উঠেছে।

প্রফেসর মনতোষ কুমার দে জানান, একসময় সারা দেশেই সাপের খেলা বেশ জনপ্রিয় ছিল। এখন হারিয়ে যাচ্ছে। বিষধর সাপও যে মানুষের পোষ মানে তা সাপুড়েদের কারসাজি দেখে বোঝা যায়। পরবর্তী প্রজন্মের কাছে এই খেলা গল্প হয়ে থাকবে।