সারা বাংলা

পাখির জন‌্য গাছে গাছে মাটির হাঁড়ি 

গাজীপুরের প্রাণকেন্দ্র রাজবাড়ী রোড ধরে যাওয়ার পথে হাতের ডান পাশেই রয়েছে প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (পিটিআই)। যেখানে পাখিদের অবাধ ও শান্তিপূর্ণ বিচরণের জন্য অভয়াশ্রম তৈরি করা হয়েছে। পিটিআইয়ের ভেতরের গাছগুলোতে পাখির অবাধ যাতায়াত ও বংশ বিস্তারের জন‌্য গাছে গাছে মাটির হাঁড়ি বেধে দেওয়া হয়েছে।

এই মহৎ কাজটি করেছেন গাজীপুর প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের (পিটিআই) সুপারিনটেনডেন্ট মো. রফিকুল ইসলাম তালুকদার।

মো. রফিকুল ইসলাম তালুকদার জানান, শিল্পনগরী গাজীপুরে গড়ে উঠছে অপরিকল্পিত নগরায়ণ। এর জন্য যে যার মতো গাছপালা কেটে নির্মাণ করছে অট্টালিকা। এতে হারিয়ে যাচ্ছে পাখি। আগের মতো পাখির কিচিরমিচির শব্দ আর শোনা যায় না। তাই এ শহরে পাখিরা যাতে নিরাপদে থাকতে পারে, সে জন্য গাছে গাছে মাটির হাঁড়ি বসানো হয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটির সুপারিনটেনডেন্ট রফিকুল ইসলাম নিজ উদ্যোগে পাখি রক্ষায় ব্যতিক্রমধর্মী পদক্ষেপ নেন। তিনি তার একজন কর্মী পাঠিয়ে টাঙ্গাইলের কুমারপাড়ায় পাখিদের জন্য বিশেষ ধরনের হাঁড়ির ফরমাশ দেন। কয়েক দিনের মধ্যে হাঁড়ি তৈরি শেষ হলে সেগুলো গাজীপুরে নিয়ে আসা হয়। এই হাঁড়ির দুই পাশ দিয়ে পাখি যাতায়াত করতে পারে। পরে হাঁড়িগুলো ওই প্রতিষ্ঠানের গাছের নিরাপদ স্থানে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। এরই মধ্যে সেই হাঁড়িতে পাখির আনাগোনা শুরু হয়েছে।

রোববার (১১ জুলাই) সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, পিটিআই প্রতিষ্ঠানের ভেতরে তিন শতাধিক ছোট–বড় বনজ, ফলদ ও ওষুধি গাছ রয়েছে। পাখির নিরাপদ আশ্রয়, পাখি রক্ষা ও তাদের বংশবৃদ্ধির জন্য হাঁড়িগুলো বসানো হয়েছে। এতে ঝড়, বৃষ্টি, রোদ থেকে পাখিরা বাঁচবে। হাঁড়িগুলোতে ছোট ছোট ছিদ্র করে দেওয়া হয়েছে। এতে বৃষ্টির পানি ঢুকলেও নিচের ছিদ্রগুলো দিয়ে পড়ে যাবে। তাছাড়া হাঁড়ির দুই দিকে বড় দুটি মুখ রাখা হয়েছে। এক দিক দিয়ে পাখি ঢুকলে আবার সোজা অন্য মুখ দিয়ে বের হয়ে যেতে পারে।

শহরের বাসিন্দা হাজ্জাজ বিন ফেরদৌস বলেন, ‘এটি একটি মহৎ কাজ। পাখির অভয়াশ্রমের মতো পজিটিভ চিন্তাধারা সবাই যদি করতে পারতেন, তাহলে আমাদের শহরটি আরও পরিবেশবান্ধব হয়ে উঠতো।’

জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক এ টি এম তৌহিদুজ্জামান বলেন, ‘পাখির প্রতি এমন ভালোবাসার কথা শুনে খুবই ভালো লেগেছে। পরিবেশ রক্ষার জন্য সবারই পশুপাখির প্রতি সদয় হওয়া উচিত। পাখির জন্য কেউ এমন আয়োজন করে, আমার জানা ছিল না। এই সুন্দর কাজ দেখে অনেকেই উদ্বুদ্ধ হবেন।’

পিটিআই প্রতিষ্ঠানের টেকনিশিয়ান পলাশ আহমেদ বলেন, ‘করোনার সময় ভেতরে লোকজন কম প্রবেশ করায় বেড়েছে পাখিদের আনাগোনা। প্রতিটি হাঁড়িতেই ডিম দিয়েছে, ফুটেছে পাখির ছানা। কিছু গাছে হাড়ি নষ্ট হয়ে গেছে সেগুলোতে নতুন হাড়ি বসানো হবে। পাখির ছানাগুলো যখন উড়ে উড়ে বেড়ায় তখন দৃষ্টি জুড়িয়ে যায়। তাদের কিচিরমিচির ডাকে ভরে যায় মন।’