সারা বাংলা

বিধবা সায়েরা বানু এখন পাগলপ্রায়

বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিশুদের কোরআন শিক্ষা দিয়ে সংসার চলতো সন্তানহারা বিধবা সায়েরা বানুর (৬৫)।  করোনার কারণে তাও বন্ধ।  তাই দুটি এতিম নাতনি ও পুত্রবধূসহ অনাহারে-অর্ধাহারে দিন পার করছেন মাগুরা শহরের দোয়ারপাড় এলাকার এই সন্তানহারা বিধবা।

সরকরি হটলাইন নম্বর ৩৩৩ এ কয়েকদিন ফোনের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন।  স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সকালে কি বিকালে আসেন বলে এড়িয়ে যান।  স্থানীয় প্রশাসনের কাছে ধর্ণা দিয়ে ব্যর্থ হয়ে এখন মৃত ছেলের দুটি অবোধ শিশু ও পুত্রবধূসহ খাবারের অনিশ্চয়তায় সায়েরা বানু রীতিমত পাগলপ্রায়।  

কান্না জড়িত কন্ঠে সায়েরা বানু জানান, ৫ বছর আগে একমাত্র ছেলে মিঠুন মিয়া স্ত্রী ও দুটি শিশু কন্যা রেখে পানিতে ডুবে মারা যায়।  তার শোকে কিছুদিনের মধ্যেই তার স্বামী ওলিয়ার মল্লিকও মারা যান।  মিঠুনের স্ত্রী নুপুর ও তার দুটি কন্যা সন্তান মিনু ও তনুকে নিয়ে অকুল পাথারে পড়েন সায়েরা বানু।

এ সময় নিজের কোরআন শিক্ষার জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে এলাকার বাড়িতে বাড়িতে কোরআন প্রাশিক্ষণ দিতে শুরু করেন। এতে মোটামুটি চলছিল তার সংসার।  সম্প্রতি করোনার কারণে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তার সেই প্রশিক্ষণের কাজটিও বন্ধ হয়ে গেছে।  মানুষের কাছে হাত পেতে কিছু চাইতে না পারা আবার আয়ের সব পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তিনি এখন চোখে অন্ধকার দেখছেন।

সায়েরা বানু বলেন, এলাকার অধিকাংশ মানুষই গরীব। এ অবস্থায় তাদেরই পেট চলেনা।  আমাকে সাহায্য করবে কে ?  কয়েকজনের পরামর্শে সরকারি হেল্প লাইন নম্বর ৩৩৩ তে ফোন দিয়ে সংযোগ পেতে বারবার ব্যর্থ হয়েছি।  এলাকার পৌর কাউন্সিলরের বাড়িতে বারবার গিয়ে একই অবস্থা।  শেষমেশ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে ফোন করে নিজের কষ্টের কথা বললে তিনি পরে দেখবেন বলে জানিয়েছেন।  কিন্তু ১০ দিন চলে গেলেও কোন খোঁজই নেননি।  মানুষের বাড়িতে বারবার ধর্ণা দিতে আত্মসম্মানেও বাঁধে।  আমার তো ৪টি প্রাণ বাঁচিয়ে রাখতে হবে।

তিনি বলেন, মাঝে শুধুমাত্র জেলা যুবলীগের হটলাইন টিম এর নেতা ফজলুর রহমানের কাছ থেকে সামান্য কিছু খাবার পাওয়া ছাড়া কোন সহায়তাই পাইনি। এখন যে কি অবস্থা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না।

এ অবস্থায় আসন্ন ঈদে শিশু নাতনীদের মুখে সামান্য সেমাই তো দুরের কথা এখনই দুমুঠো ভাত তুলে দেওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।  তিনি সংশ্লিষ্টদের কাছে এ অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য সহায়তা আশা করেন।

মাগুরা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ইয়াছিন কবীর এ বিষয়ে খোঁজ নেবেন বলে জানান।