সারা বাংলা

কোরবানির ঈদেও সুনসান গোপালগঞ্জের কামারপাড়া 

গোপালগঞ্জের সদর হাসপাতাল রোডের কামার কালা চাঁন কর্মকার (৪৮)। সংসারে রয়েছেন স্ত্রী, আর পাঁচ মেয়ে। তার বয়স যখন ১০ বছর, তখন থেকে বাবার সঙ্গে হাতেখড়ি হয় এই পেশায়। এরপর ৩৮ বছর ধরে জড়িয়ে আছেন। দীর্ঘ কর্মজীবনে কামারপাড়ায় এমন সুনসান চিত্র দেখেননি কালা চাঁন। 

কালা চাঁন কর্মকার বলেন, গত বছর থেকে করোনার কারণে মন্দাভাব যাচ্ছে তার। মূলত কোরবানির ঈদের দিকে চেয়ে থাকেন তিনি। এ সময় কাজ করে সারা বছরের রোজগার হয় তার। কিন্তু করোনার কারণে গত বছরের মতো এ বছরও কাজ কমে গেছে। আগে ঈদের সময় যেখানে প্রতিদিন তিনি তিন হাজার টাকা রোজগার করতেন, সেখানে এখন আয় হয় এক হাজার টাকার মতো। ফলে সাত সদস্যের পরিবারের ভরণপোষণ চলাতে হিমমিশ খেতে হচ্ছে তাকে। তার মতো একই অবস্থা জেলার কয়েকশত কর্মকার পরিবারের। 

শুক্রবার সকালে (১৬ জুলাই) কামার পল্লিতে গিয়ে দেখা গেছে, করোনা মহামারির মধ্যে আর্থিক সংকট থাকায় এ বছর পশু কোরবানির সংখ্যা কমে যাওয়ায় তেমন কেউ অস্ত্র বানাতে আসছেন না। এতে সেই কর্মচাঞ্চল্য নেই। ক্রেতা না থাকায় অনেকে পশু কোরবানির সরঞ্জাম না বানিয়ে পাট মৌসুমকে কেন্দ্র করে কাস্তে বানাচ্ছেন। দু-একজন ক্রেতা আসলেও নতুন অস্ত্র না কিনে তারা পুরাতন অস্ত্র ঠিক করে নিচ্ছেন। 

পশু জবাই করা, মাংস কাটা ও চামড়া ছাড়ানোর জন্য প্রয়োজন হয় চাকু, চাপাতি, দাসহ নানা ধরনের উপকরণের। কিন্তু করোনার কারণে এ বছর চাকু, চাপাতিসহ বিভিন্ন অস্ত্র আগাম তৈরি করে রাখেননি কামাররা। তবে তাদের হাতে যা অস্ত্র আছে, তা কয়লাসহ বিভিন্ন কাঁচামালের দাম বাড়ায় উপকরণের মান অনুযায়ী কেজিপ্রতি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা দাম চাচ্ছেন। 

ক্রেতা সদর উপজেলার চরমাহিকদাহ গ্রামের মিলন বেগ (৪৮), মধুপুর গ্রামের মো.  শাহবুদ্দিন (৬০) বলেন, এবার করোনার কারণে হাতে কাজ না থাকায় কোরবানির পশু কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন। এ বছর একা কোরবানি দিতে পারছেন না। তবে কয়েকজন মিলে পশু কোরবানি দিলেও এ জন্য চাপাতি, ছুরিসহ বিভিন্ন অস্ত্রের দরকার। তবে এবার নতুন অস্ত্র নয়, পুরাতন অস্ত্র ধার দিতে এসেছেন। 

ক্রেতা সদর উপজেলার নবীনবাগ এলাকার মো. হান্নান সিকদার, পাইককান্দি গ্রামের তরিকুল বলেন, ‘করোনার কারণে কয়েকবার লকডাউন থাকায় আর্থিক অনাটনের রয়েছি। যে কারণে নতুন অস্ত্র তৈরি করা সম্ভব হয়নি। তবে পুরাতন অস্ত্র ঠিক করে এ বছর কোরবানির পশু জবাই করবো।’ 

কর্মকারপাড়ার স্বপন কর্মকার বলেন, করোনার কারণে এবার জেলায় পশুরহাট বসেনি। কোরবানির সরঞ্জাম বানাতেও কেমন কেউ আসছে না। দু-একজন যা এসেছেন, তারা পুরাতন অস্ত্র ঠিক করে নিয়ে যাচ্ছেন। যে কারণে এ বছর আগাম অস্ত্র বানাননি তিনি। 

একই এলাকার দিলীপ কর্মকার জানান, পশু জবাই করা ছুরি কেজিপ্রতি ৫০০ টাকা, দা ৬০০ টাকা, চাপাতি ৪০০ টাকা, কুড়াল ৪০০ টাকা এবং বটি প্রতিকেজি ৫০০  টাকা দরে বিক্রি করছেন। এ বছর লোহা, কয়লা প্রভৃতির দাম আগের থেকে বেশি হওয়ায় উৎপাদিত মালামালও বেশিদামে বিক্রি করতে হচ্ছে। কিন্তু ক্রেতা সংকটের কারণে তেমন বিক্রি করতে পারছেন না। এতে তাদের সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছে। 

একই এলাকার খোকন কর্মকার বলেন, এখন পর্যন্ত ক্রেতারা অস্ত্র তৈরি করতে আসছে না। তবে আগামী দু’-একদিনের মধ্যে ক্রেতা বাড়বে বলে আশা করছেন তিনি।