সারা বাংলা

ঈদে সাতকরা বিক্রির ধুম

সিলেট অঞ্চলের রান্নায় ব্যবহৃত উপকরণ সাতকরা। এ ফল দিয়ে রান্না তরকারির স্বাদ নিতে ভুলেন না সিলেটে আগত অতিথিরা। কোরবানির ঈদের সাতকরা দিয়ে গরুর মাংস রান্না করা হয়, আর তা চেটেপুটে খান ভোজন রসিকরা। তাই ঈদ সামনে রেখে সিলেটের বাজারে এ ফলের কদর বেড়েছে বেশ। দামও একটু বেশি এবার।

মঙ্গলবার (২০ জুলাই) রাতে নগরের বন্দরবাজারে কথা হয় সাতকরা বিক্রেতা সালাউদ্দিনের সাথে। তিনি বলছিলেন, ‘সারা বছরই সিলেটে সাতকরা বিক্রি হয়। তবে মৌসুম থাকার কারণে এখন বাজারে সাতকরা বেশি পাওয়া যাচ্ছে। আর কোরবানির ঈদের কারণে বিক্রিও হচ্ছে খুব বেশি। কারণ, সিলেটিরা সাতকরা দিয়ে গরুর মাংস খেতে ভালোবাসেন। তাই যত দামই হোক না কেন, তারা সাতকরা কিনে নিতে কার্পণ্য করছেন না।’

বিক্রেতারা জানান, সাতকরার দাম বেশি নয়। মান এবং আকারভেদে প্রতি হালি ৬০ টাকা থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ঈদের কারণে বিক্রি বেড়েছে। সাতকরা ছাড়াও বাজারে আদালেবুও পাওয়া যাচ্ছে। তবে তা বিক্রি হচ্ছে কম।

বন্দরবাজারে সাতকরা কিনেছেন ফুয়াদ আসলাম। তিনি জানালেন, তাদের ঘরে সবসময়ই সাতকরা সংরক্ষণ করে রাখা হয়। তবে ঈদের কারণে তিনি তিন হালি কাঁচা সাতকরা কিনে নিয়েছেন। মাংস ছাড়াও মাছ, ডালসহ অন্য তরকারিতেও সাতকরার ব্যবহার করা হয় বলে জানালেন তিনি। 

গৃহিনী সাবরিনা শারমিন বলেন, পরিমাণমতো সাতকরা দিলে আকর্ষণীয় ঘ্রাণযুক্ত হওয়ার কারণে তরকারির স্বাদ কয়েকগুণ বেড়ে যায়। তবে অতিরিক্ত পরিমাণে দিলে উল্টো ফল হতে পারে; এক্ষেত্রে তরকারিতে তিতা স্বাদ আসতে পারে বলেও জানান তিনি।

ব্যতিক্রমধর্মী আর আকর্ষণীয় ঘ্রাণের জন্য সাতকরা সিলেট অঞ্চলের রসনার অন্যতম অনুষঙ্গ। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস রয়েছে। যা মানব দেহের জন্য দারুণ উপকারী। এছাড়াও সাতকরার বেশ কিছু রাসায়নিক গুণাগুণ বিদ্যমান রয়েছে। আচার হিসেবেও সাতকরার কদর অতুলনীয়।

আঠারো শতকে সিলেটের সীমান্তের ওপারে ভারতের আসাম রাজ্যে ব্যাপকভাবে ‘সাতকরা’ চাষ হতো। উনিশ শতকের গোড়ার দিকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ‘সাতকরা’ চাষ শুরু হয় সিলেটের পাহাড়ি এলাকায়। কমলা লেবুর মতো ‘সাতকরা’র গাছ আকারে লম্বা ও বড় হয়। বর্তমানে মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সিলেট জেলার পাহাড়ি অঞ্চলে ‘সাতকরা’ চাষ হয়ে থাকে। এ তিন জেলার মধ্যে সিলেট জেলায় ‘সাতকরা’ চাষ হয় সবচেয়ে বেশি।

স্থানীয় অনেকেই সাতকরা দিয়ে নানা রকম আচার তৈরি করছেন; যা সাতকরার স্বাদ বাড়িয়ে তুলেছে। তাছাড়া যুক্তরাজ্য, যুক্তরাজ্য, মধ্যপ্রাচ্যে চাকরি ও ব্যবসার জন্য বসবাসরত সিলেটিরা কাঁচা অথবা রোদে শুকিয়ে সঙ্গে করে ‘সাতকরা’ নিয়ে যান। এমনকি সিলেট সফরে আসা রাষ্ট্রীয় অতিথিদের খাদ্য তালিকায়ও সাতকরা দিয়ে রান্না করা তরকারি রাখা হয়।