সারা বাংলা

কঠোর লকডাউনে ফাঁকা সিলেট

ঈদুল আজহার ছুটি শেষে শুক্রবার (২৩ জুলাই) ভোর ছয়টা থেকে সারাদেশের মতো সিলেটেও শুরু হয়েছে দুই সপ্তাহের কঠোর লকডাউন । বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বিভাগের চার জেলায় মাঠে কাজ করছেন। সড়ক-মহাসড়কে পুলিশের একাধিক চেকপোস্ট বসেছে। এসব চেকপোস্টে আটকে দেওয়া হচ্ছে যানবাহন, নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে যাত্রীদেরও।

শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় সিলেট নগরের পথ-ঘাট এমনিতেই ফাঁকা। তবুও নগরের মোড়ে মোড়ে অবস্থান করছেন পুলিশ সদস্যরা। বন্দরবাজার, সিটি পয়েন্ট, জিন্দাবাজার, আম্বরখানা, টিলাগড় পয়েন্ট, সুরমা গেইট, হুমায়ুন চত্বরসহ বিভিন্ন পয়েন্টে পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহনও নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। পরীক্ষা করা হচ্ছে কাগজপত্রাদিও। জরুরী প্রয়োজন ছাড়া বাইরে কেউ যানবাহন নিয়ে বের হলে তাকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। অবশ্য জরুরী সেবা প্রদানের যানবাহন বিধিনিষেধের আওতার বাইরে রয়েছে।

বন্ধ রয়েছে বিপনীবিতান ও শপিং মল। তবে জরুরী সেবা প্রদানের জন্য ওষুধ এবং কাঁচা বাজার খোলা থাকলেও ক্রেতা সমাগম একদমই নেই। যান্ত্রিক যানবাহন চলাচল না করলেও সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নগরে হাতেগোনা কয়েকটি রিকশা চলাচল করতে দেখা গেছে।

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিটি সার্ভিস) বিএম আশরাফ উল্যাহ তাহের জানান, ‘কঠোর বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে শহরের প্রবেশদ্বারসহ বিভিন্ন এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে কাজ করছে এসএমপির ১৬টি টিম। জরুরী সেবা ব্যতিত শহরে অন্য কোন যানবাহনই প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। এর বাইরে নগরজুড়ে একাধিক পেট্রোল টিমও দায়িত্ব পালন করছে।’

সিলেট জেলা প্রশাসনের মিডিয়া সেল থেকে জানানো হয়েছে, ‘আজ থেকে শুরু হওয়া দ্বিতীয় দফার কঠোর বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে জেলার সকল উপজেলায় একাধিক ম্যাজিস্ট্রেসি টিম কাজ করছেন। সরকারি নির্দেশনা মেনে নিত্যপণ্যের দোকান ও জরুরী সেবা প্রদানের দোকান খোলা থাকবে। তবে নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক জরিমানা-জেল প্রধান করা হবে।’

এদিকে সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ এবং হবিগঞ্জ জেলায়ও কঠোর বিধিনিষেধ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

রাইজিংবিডির মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি সাইফুল্লাহ হাসান জানান, ‘বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসন, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কঠোর অবস্থানে রয়েছেন। সকালে শহরের কুসুমবাগ, চৌমুহনা পয়েন্টসহ একাধিক পয়েন্টে পুলিশের চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। জরুরী প্রয়োজন ছাড়া কোন যানবাহনই শহরে প্রবেশ করতে পারছে না।’

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি মামুন চৌধুরী জানান, সকাল থেকেই জেলা ও উপজেলা শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহানের নেতৃত্বে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও এসিল্যান্ড মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছেন। এতে সহায়তা করছেন পুলিশ, সেনাবাহিনী, র‌্যাব ও বিজিবি সদস্যরা।

শহরের রাস্তায় মাঝে মাঝে ছোট ছোট যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে। গ্রামে লোকজন ঘর থেকে বের হয়ে স্বাভাবিকভাবে চলাচল করছেন। কিন্তু শহরে লোকজন ঘর থেকে বের হলেও প্রশাসনের উপস্থিতি টের পেলেই দ্রুত সরে যাচ্ছেন। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে হাইওয়ে পুলিশ কঠোর অবস্থানে থাকায় বড় কোন যানবাহন চলাচল করতে দেখা যায়নি। এ লকডাউনে দুর্ভোগে পড়েছেন নিম্ন আয়ের লোকজন।

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি আল আমিন জানান, লকডাউনের প্রথম দিন ঢিলেঢালাভাবে শুরু হয়েছে। সকালে সুনামগঞ্জ শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড, ট্রাফিক পয়েন্টে, কাজিরপয়েন্ট, থানা পয়েন্টে, নতুন বাসস্ট্যান্ড, ওয়াজখালীসহ বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে- পথচারী, পরিবহন শ্রমিক ও ঢাকা-সিলেটগামী যাত্রীরা সরকারি বিধিনিষেধ মানছেন না, মানা হচ্ছেনা স্বাস্থ্যবিধিও। গাড়ি না পেয়ে অননকে পায়ে হেঁটে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিতেও দেখা গেছে।

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো.  জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘কঠোর বিধিনিষেধ (লকডাউন) চলছে। তা বাস্তবায়নে পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব,  সেনাবাহিনী  ও ভ্রাম্যমান আদালতের টিম কাজ করছে। সারা জেলায় ভ্রাম্যমাণ আদালত চলমান আছে। তবে কোনো ধরণের যানচলাচল আর দেওয়া হচ্ছে না।’

বিকেলে জেলা প্রশাসক নিজেও অভিযানে মাঠে নামবেন বলেও জানিয়েছেন।