সারা বাংলা

খুলনায় দোকানপাট-মার্কেট বন্ধ, তবে চলছে অটোরিকশা-প্রাইভেটকার 

করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে শুক্রবার (২৩ জুলাই) ভোর ৬টা থেকে কঠোর বিধিনিষেধ শুরু হয়েছে। তবে খুলনা বিভাগে অনেকটা ঢিলেঢালাভাবে শুরু হয়েছে লকডাউন। 

খুলনা বিভাগ ও জেলা শহরগুলোর গুরুত্বপূর্ণ মোড় ও প্রধান প্রধান সড়কে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। টহলে রয়েছে সেনা বাহিনী, র‌্যাব ও ভ্রাম্যমাণ আদালত। রাইজিংবিডি’র খুলনা বিভাগের খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, যশোর, কুষ্টিয়া, মাগুরা ও মেহেরপুর জেলা প্রতিনিধি বিস্তারিত তথ্য দিয়েছেন। 

খুলনায় শুক্রবার লকডাউনের শুরুর সকাল থেকে কাঁচাবাজার কেন্দ্রিক ভিড় বেড়েছে। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে নগরীর গল্লামারীতে কাঁচাবাজার, মাছ বাজার ও মাংসের দোকানে ক্রেতার ভিড় ছিলো। এখানে ক্রেতা-বিক্রেতার মুখে মাস্ক ব্যবহার বা স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায়নি। সড়কে পুলিশি চেকপাস্ট বা টহল চোখে পড়েনি। রূপসা ও জেলখানা ঘাটে যাত্রীদের নদী পারাপার স্বাভাবিক ছিলো। এছাড়াও সকাল থেকে নগরীর সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ি, ইজিবাইক, রিকশাভ্যান চলাচল করেছে। ভোরে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে দূরপাল্লার যানবাহন খুলনার সোনাডাঙ্গা আন্তঃজেলা বাসস্ট্যান্ডে প্রবেশ করেছে। তবে দূরপাল্লার বাস খুলনা থেকে ছেড়ে যায়নি। বন্ধ রয়েছে শপিংমল, মার্কেট। 

খুলনার সিভিল সার্জনের দপ্তরের সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ গত ১০ দিনে (১২ জুলাই-২২ জুলাই) খুলনার হাসপাতালে করোনায় ১৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে। জেলায় এ পর্যন্ত মোট মৃত্যু হয়েছে ৫৪৪ জনের। মোট শনাক্ত হয়েছেন ২১ হাজার ৯৫৬ জনের। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১৫ হাজার ৩৬৫ জন। জেলা সিভিল সার্জন অফিসের তথ্য অনুসারে, বর্তমানে নমুনা পরীক্ষার ভিত্তিতে খুলনা জেলায় সংক্রমণের হার ২২-২৭ শতাংশের মধ্যে রয়েছে।  

সিভিল সার্জন ডা. নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, ঈদে ঘরমুখী মানুষের নিয়ন্ত্রণহীন যাতায়াত ও মার্কেট, পশুরহাট ঘিরে কোভিডের সংক্রমণ আবারও বেড়ে যেতে পারে। এজন্য লকডাউন ও স্বাস্থ্যবিধি মানতে কড়াকড়ি হওয়া প্রয়োজন। 

জেলা করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিধিনিষেধে খুলনা জেলা ও মহানগরীতে ২৩ জুলাই ভোর ৬টা থেকে ৫ আগস্ট রাত ১২টা পর্যন্ত দোকানপাট, মার্কেট, শপিংমল ও কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ও কাঁচাবাজারের দোকান প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। হোটেল-রেস্তোরাঁগুলো সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত শুধুমাত্র পার্সেল আকারে খাবার সরবরাহ করতে পারবে। সবধরণের পর্যটন কেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদনকেন্দ্র বন্ধ থাকবে। 

করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান তালুকদার গণবিজ্ঞপ্তিতে বিধি-নিষেধ কঠোরভাবে মেনে চলার অনুরোধ করেছেন। অন্যথায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

রাইজিংবিডির বাগেরহাট প্রতিনিধি আলী আকবর টুটুল জানিয়েছেন, বাগেরহাট জেলা সদরে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে হাইওয়েতে ট্রাক ও পিকাপসহ ছোট ছোট যানবাহন চলাচল করছে। কাঁচা বাজারে ভিড় রয়েছে। শহরে মানুষের চলাচলও রয়েছে। তবে জেলা শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মোড়ে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। 

যশোরের নিজস্ব প্রতিবেদক সাকিরুল কবীর রিটন জানিয়েছেন, যশোরে ভোর থেকে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের শহরের প্রধান প্রধান সড়কে টহল দিতে দেখা গেছে। সকালে শহরের প্রধান সড়কগুলো ছিল ফাঁকা। তারপরও পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাবের গাড়ির টহল দিতে দেখা গেছে।

যশোর জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান জানান, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী এবারের লকডাউন আগের চেয়ে কঠোরভাবে পালন করা হবে। মোবাইল কোর্ট বাড়ানো হয়েছে। তিনি শহরবাসীকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন। 

রাইজিংবিডির সাতক্ষীরা প্রতিনিধি শাহীন গোলদার জানিয়েছেন, ঈদুল আজহা উপলক্ষে ৮দিন শিথিলের পর সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউনের প্রথমদিন শুক্রবার সাতক্ষীরায় বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে একযোগে মাঠে নেমেছে আইনশৃখংলা বাহিনীর সদস্যরা। তবে জেলার সাত উপজেলায় খোলা রয়েছে অধিকাংশ দোকানপাট। 

বিধিনিষেধ উপেক্ষা করেও ঘর থেকে কিছু মানুষ বের হয়েছে। শহরের অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। লকডাউনে জরুরি সেবাপ্রতিষ্ঠান খোলা রয়েছে। বন্ধ রয়েছে সকল প্রকার গণপরিবহন। এছাড়াও শহরের বিভিন্নস্থানে কিছু মানুষের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। 

সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মাদ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, জেলাবাসীকে সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে ঘর থেকে বাইরে না বের হওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হচ্ছে। অকারণে বের হলেই তাকে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির জানান, বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে জেলায় একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ২২টি ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করছে। 

জেলাবাসীকে সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে ঘর থেকে বাইরে না বের হওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক। 

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি কাঞ্চন হালদার জানিয়েছেন, কুষ্টিয়ায় ঈদের পর শুরু হয়েছে লকডাউন। শুক্রবার (২৩ জুলাই) কুষ্টিয়া শহরের ওষুধের দোকান ছাড়া সকল দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। শহরের প্রাণকেন্দ্র মজমপুর গেট রাস্তায় রিকশা, ভ্যান, অটোরিকশা চলতে দেখা গেছে। বিপণিবিতান বন্ধ রয়েছে। জরুরি পণ্যবাহী দু-একটা ট্রাক রাস্তায় চলছে। প্রধান প্রধান সড়ক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। রাস্তায় পুলিশ টহল অব্যাহত রয়েছে। 

কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার খাইরুল আলম বলেন, পুলিশ প্রশাসন মাঠে রয়েছে। লকডাউনে যাতে সরকারি বিধিনিষেধ পালিত হয় সেদিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে। 

মেহেরপুর প্রতিনিধি মহসিন আলী জানিয়েছেন, ঈদুল আযহা পরবর্তী শুক্রবার (২৩ জুলাই) সকাল থেকে সারা দেশের ন্যায় মেহেরপুরে কঠোর লকডাউন শুরু হয়েছে। এ মুহূর্তে মাঠে আছে পুলিশ প্রশাসন, জেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা। 

সকাল থেকে মেহেরপুর পুলিশ শহরের হোটেল বাজার মোড়, কলেজ মোড়, বড় বাজার মোড়, কোর্ট মোড়সহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থান নিয়েছে এবং গাড়ি-ঘোড়া চলাচল বন্ধ করতে চালকদের বাধ্য করছে। মোটর সাইকেল থামিয়ে চালক ব্যতিত আরোহীকে নামিয়ে দিচ্ছে। 

গাংনী উপজেলা শহরে পৌর মেয়র আহম্মেদ আলী পুলিশের সঙ্গে লকডাউন সমর্থনে কাজ করছেন। মুজিবনগর উপজেলায়ও লকডাউন বাস্তবায়ন হচ্ছে। মেহেরপুর জেলা শহরের কাঁচা বাজার ও ওষুধসহ জরুরি সেবার দোকানপাট ছাড়া সব ধরণের দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। 

মাগুরার প্রতিনিধি শাহীন আনোয়ার জানিয়েছেন, সকালে মাগুরা শহর ঘুরে দেখা গেছে, মাগুরার উপর দিয়ে যাওয়া ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ভায়নার মোড়, ঢাকারোড ও পারনান্দুয়ালি এলাকায় লোক সমাগম ছিলো। লোকজন ঢাকা থেকে ফিরতে মোটরসাইকেল, থ্রি-হুইলার মাহেন্দ্র ও ইজিবাইক ব্যবহার করছেন। সড়কে যাত্রীবাহী দূরপাল্লার বাস চলতে দেখা না গেলেও সড়কে পণ্যবাহী ট্রাক ও পিকাপের চাপ রয়েছে। অনেককেই পণ্যবাহী ট্রাকে চড়ে যাতায়াত করতে দেখা গেছে।

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এ রিপোর্ট লেখার সময় সড়কে প্রশাসন বা আইনশৃংখলা বাহিনীর তৎপরতা তেমন চোখে পড়েনি। শহরের ঢাকা রোড এলাকায় প্রচুর রিকশা ও ইজিবাইক চলতে দেখা গেছে। অনেকেই পায়ে হেঁটে চলাচল করতে দেখা গেছে।

শহরের পারনান্দুয়ালি বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, ঢাকা ও খুলনা থেকে যাত্রী নিয়ে দূরপাল্লার বাসগুলো সকালের মধ্যে মাগুরায় পৌঁছেছে। নতুন করে কোনো বাস ছেড়ে যাচ্ছে না। 

ভায়নামোড়ে যাত্রী ছাউনিতে বসে ছিলেন ছয় জন। তারা যশোর ও ঝিনাইদহে যাবেন। তাদের একজন আশিকুর রহমান। রাতে ঢাকা থেকে রওনা করে ভোরে ফেরি পার হয়েছেন। ভেঙে ভেঙে বিভিন্ন যানবাহনে মাগুরা পর্যন্ত পৌঁছেছেন। এখন আর কোনো গাড়ি পাচ্ছেন না। তিনি যাবেন ঝিনাইদহের শৈলকূপায়। 

শহরের ঢাকা রোড এলাকায় বেশ কিছু মানুষকে মালপত্র নিয়ে হাঁটতে দেখা গেছে। মোড়ে মোড়ে অনেককে যানবাহনের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। তাদের বেশির ভাগই ঈদ উদ্‌যাপন শেষে সকালে ঢাকায় ফেরার চেষ্টা করছেন।

মাগুরা পারনান্দুয়ালি বাসস্টান্ডের ঈগল পরিবহন লিমিটেডের বাস শ্রমিক বাদশা মিয়া জানান, মাগুরা থেকে ঢাকার উদ্দেশে আর কোনো গাড়ি ছেড়ে যাচ্ছে না। তবে এখনও ঢাকা ও মাগুরাগামী দুই পাশেই যাত্রীর চাপ রয়েছে বলে তিনি জানান। 

আজ থেকে শুরু হওয়া ১৪ দিনের এই বিধিনিষেধকে ‘সবচেয়ে কঠোরতম’ হিসেবে অভিহিত করেছেন মাগুরা জেলা প্রশাসা ড. আশরাফুল আলম। তিনি এ বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে সবার সহযোগিতা চান।

বিধিনিষেধ চলাকালে ‘অতি জরুরি’ প্রয়োজন ছাড়া বাসা থেকে বের হওয়া যাবে না। বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে মাঠে আছে সেনাবাহিনী।

করোনা সংক্রমণের উর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে খুলনায় গত ২২ জুন থেকে লকডাউন শুরু হয়। এর আগে আরও দুই সপ্তাহের স্বাস্থ্যবিধি দেওয়া হয়। তবে গত ১৩ জুলাই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপনে ১৪ জুলাই মধ্যরাত থেকে ২৩ জুলাই সকাল ৬টা পর্যন্ত সারা দেশে বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়। একই প্রজ্ঞাপনে ২৩ জুলাই ভোর ৬টা থেকে ৫ আগস্ট রাত ১২টা পর্যন্ত সারা দেশে কঠোর বিধি-নিষেধ দেওয়া হয়। 

এই বিধিনিষেধে সরকারি-বেসরকারি অফিস, গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে মাঠে রয়েছে সেনাবাহিনী-বিজিবি-পুলিশ-র‌্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।