সারা বাংলা

কঠোর লকডাউনে ফাঁকা রাজশাহী মহানগরী

মহামারি কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ রোধে সারা দেশের ন্যায় রাজশাহীতেও চলছে কঠোর লকডাউন। লকডাউনের প্রথমদিনে শুক্রবার (২৩ জুলাই) মহানগরীজুড়ে নিস্তব্ধতা নেমে এসেছে। মহানগরীর প্রধান সড়কগুলোতে হাতেগোনা দু-একটি রিকশা, মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার এবং জরুরি সেবার গাড়ি চলাচল করতে দেখা যাচ্ছে। কাঁচাবাজার ও মুদি দোকান ছাড়া শহরের সব মার্কেটের দোকানপাট বন্ধ রয়েছে।

সকাল থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত মহানগরীর কাশিয়াডাঙ্গা, কোর্ট বাজার, শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান চত্বর, শিরোইল বাস টার্মিনাল, রেলওয়ে স্টেশন, সাহেববাজার, নিউমার্কেট, উপশহর নিউ মার্কেটসহ মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলো ঘুরে দেখা যায়, রাস্তাঘাট একেবারে ফাঁকা। দু’-একজন মানুষ মোড়ে ঘুরাঘুরি করছেন। নির্দেশনার আওতাধীন সকল দোকানপাট বন্ধ রাখতে দেখা গেছে।  

রাজশাহী মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নিয়েছেন। তারা পথচারীদের সচেতন করে মাইকিং করছেন। যারা রাস্তায় বের হচ্ছেন, তাদের প্রত্যেককেই পুলিশের জেরার মুখে পড়তে হচ্ছে। জরুরি প্রয়োজন প্রমাণে ব্যর্থ হলে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও যারা জরুরি প্রয়োজনে বের হচ্ছেন, তাদের দ্রুত কাজ শেষ করে ঘরে ফেরার নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।

মহানগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, যারা জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হয়েছেন, তারা প্রত্যেকেই মাস্ক ব্যবহার করছেন। মহানগরীর ভেতরের সরু রাস্তাগুলো দিয়ে যাতায়াতকারী অটোরিকশায় অনেককেই গাদাগাদি করে যাত্রী পরিবহণ করতে দেখা গেছে। এছাড়াও এসব চালকরা যাত্রীদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া আদায় করছেন।

মহানগরীর কাজলা এলাকার বাসিন্দা সায়রা বেগম কাশিয়াডাঙ্গা এলাকায় মেয়ের বাসায় কোরবানির মাংস দিতে এসেছিলেন। আজ (শুক্রবার) সকাল বেলা যাওয়ার পথে গাড়ি না পেয়ে বিপাকে পড়েন। অন্যান্য স্বাভাবিক সময়ের ৩০ টাকার ভাড়া চাওয়া হয় ১৫০ টাকা। বাধ্য হয়ে ১২০ টাকায় রিকশা নিয়ে গন্তব্যে রওনা দেন তিনি।

চালকরা বলছেন, মহানগরীর প্রায় প্রতিটি মোড়ে মোড়ে পুলিশের অবস্থান। লকডাউনের প্রথম দিন অটো রিকশাও চলতে দিচ্ছে না। তাদের সামনে পড়লেই জরিমানা অথবা রিকশার বাতাস ছেড়ে দিচ্ছে।  

লকডাউনের প্রথমদিনে দূরপাল্লার কোনো পরিবহনও ছেড়ে যেতে কিংবা প্রবেশ করতে দেখা যায়নি। তবে জরুরি প্রয়োজনে যানবাহন চলতে দেখা গেছে। এছাড়াও মহানগরীর কাঁচাবাজারগুলোতে জনসমাগম কিছুটা বেশি দেখা গেছে।

মহানগরীজুড়ে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‌্যাব ও পুলিশের টহল দেখা গেছে। মহানগরীতে রাজশাহী জেলা প্রশাসনের চারটি এবং ৯টি উপজেলায় ১৮টি ভ্রাম্যমাণ টিম কাজ করছে। মহানগরীর প্রবেশপথগুলোতেও পুলিশের বাড়তি নজরদারি দেখা গেছে।

কাশিয়াডাঙ্গা প্রবেশপথে দায়িত্বপ্রাপ্ত কাশিয়াডাঙ্গা থানার ওসি মাসুদ পারভেজ জানান, আগের মতো মহানগরীর প্রবেশ পথে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কোনো পরিবহণ মহানগরীতে প্রবেশ অথবা বাইরে যেতে দেওয়া হচ্ছে না।

রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) আবু আসলাম জানান, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী রাজশাহীতে লকডাউন বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। নির্দেশনা অমান্য করে কেউ অপ্রয়োজনে বাইরে ঘোরাঘুরি করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি পথচারীদের সচেতন করে মাইকিং করা হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, এখন পর্যন্ত রাজশাহীতে অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটেনি। জনগণ শান্তিপূর্ণভাবে লকডাউন মানছেন।

রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) মুখপাত্র অতিরিক্ত উপকমিশনার গোলাম রুহুল কুদ্দুস জানান, রাজশাহীতে লকডাউন বাস্তবায়নে পুলিশ সদস্যারা কাজ করছেন। লকডাউন কঠোরভাবে পালিত হচ্ছে।