সারা বাংলা

অভাব-অনটনে আনন্দ করা ভুলে গেছেন চা-শ্রমিকরা

হবিগঞ্জের পাহাড়ি এলাকাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা ছোট-বড় মিলে চা বাগান রয়েছে ৪১টি। এসব বাগানের বাসিন্দা দেড় লাখের বেশি। এরমধ্যে স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে ৩২ হাজার শ্রমিক চা পাতা উত্তোলনে জড়িত। সারা দিন পরিশ্রম করে তারা যা আয় করে, তা দিয়ে তাদের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরানো অবস্থা। 

প্রতিদিন একজন শ্রমিককে ২৩ কেজি চা-পাতা উত্তোলন করতে হয়। তাতে তিনি পান ১২০ টাকা। মজুরি ও রেশন মিলিয়ে একজন শ্রমিক প্রতিদিন সর্বোচ্চ ১৫০ টাকা আয় করেন। যেখানে একজন খেতমজুরের আয়ও ৫০০ টাকা। একজন রিকশাচালকের আয় ৬০০ টাকা। সনাতন ধর্মাবলম্বী চা-শ্রমিকরা দুর্গাপূজা ও হোলি উৎসবে এবং ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা ঈদে অল্প কিছু টাকা ভাতা পান। ঈদের দিন ও পরের দিন বাগানের শ্রমিকরা ছুটি পান। 

দ্রব্যমূল্য ঊধ্র্বগতির বাজারে দৈনিক ১২০ টাকা মজুরি দিয়ে শ্রমিকদের জীবন চালানো প্রায় অসম্ভব। উৎসবেও তাদের মনে আনন্দ থাকে না। অভাবের তাড়নায় আনন্দ করতেও ভুলে গেছেন তারা। যদিও দৈনিক ৫০০ টাকা মজুরি করার দাবি উঠেছে। মজুরির স্বল্পতায় শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। এ নিয়ে আন্দোলনও করছেন তারা। 

চুনারুঘাট উপজেলার দেউন্দি চা বাগানের শ্রমিক খোকন মুড়া, সূর্য সাঁওতাল, জাহির আলী, কমলা সাঁওতাল, সিরাজ মিয়া বলেন, বর্তমান সময়ে ১২০ টাকায় তাদের কিছুই হয় না। এক বেলা খেলে অন্য বেলায় উপোষ থাকতে হয়। প্রতিদিনই নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। তাই এভাবে চলা কঠিন হয়ে পড়েছে। 

বাংলাদেশ চা বোর্ড ও চা-শ্রমিক ইউনিয়নের তথ্য অনুযায়ী, দেশে সবমিলিয়ে ২৫৬টি চা-বাগান আছে। এতে নিবন্ধিত শ্রমিকের সংখ্যা ১ লাখ ৩ হাজার। অস্থায়ী শ্রমিক ৩০ হাজার। দেশে মোট চা-শ্রমিক পরিবারের বাসিন্দা প্রায় ৮ লাখ। চা বাগানে কাজ না পেয়ে শ্রমিক পরিবারের হাজার হাজার সদস্য এখন বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

চা-বাগান ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ শ্রমিক ও তাদের সন্তানরা রুগ্ন দেহ এবং অপুষ্টির শিকার। পুষ্টিকর খাবার দূরের কথা, তারা দু-বেলা পেটভরে খাবার পায় না। চা-শ্রমিকরা নৈমিত্তিক ছুটি পায় না। চা-শ্রমিকদের বাসস্থানের উন্নতি হয়নি। এটা বাগান মালিকদের দায়িত্ব। ছোট্ট কুঠুরিতে গাদাগাদি করে মা-বাবা, ছেলে, মেয়ে, পুত্রবধূ নিয়ে একত্রে বাস করে।

চান্দপুর বাগানের শ্রমিক শিলা উড়াং, রুমা উড়াং, সাগরী রায়, সন্ধ্যা মহালী, বিনা সাঁওতাল, সাদাদ মিয়া দৈনিক বেতন পান ১২০ টাকা। খেয়ে- না খেয়ে কাজ করতে হয় তাদের। তারা উন্নত জীবন থেকে বঞ্চিত। 

অরুন মহালী বলেন, শ্রমিকরা ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে দিনে মজুরি পেতেন ১ টাকা। এখন পান ১২০ টাকা। রেশন আগের মতোই আছে। রেশনের আটা ও চালের মান ভালো না। চা-বাগান শ্রমিকদের টানাপোড়েনের জীবন কবে শেষ হবে তা জানেন না তারা।  

চা শ্রমিকদের জীবন মান উন্নয়নে গান-নাটকের মাধ্যমে কাজ করে আসা দেউন্দির প্রতীক থিয়েটারের সভাপতি সুনীল বিশ্বাস বলেন, চা-পাতা উৎপাদনে পুরুষের পাশাপাশি নারীও কঠোর শ্রম দিচ্ছেন। একজন শ্রমিক ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত বাগানে কর্মরত থাকেন। পরে অবসরে যান। 

তিনি বলেন, নিত্যপণ্যের দাম দিন দিন বাড়ছে। এখন শ্রমিকদের এ মজুরিতে চলা কঠিন হয়ে পড়েছে। তাদের সুযোগ-সুবিধাও আরও বাড়ানো প্রয়োজন। অভাবে যাদের সংসার চলে না, সেখানে তাদের মনে আনন্দ আসবে কীভাবে?