সারা বাংলা

প্রাণচাঞ্চল‌্যে ভরপুর কেশবপুর আশ্রয়ণ কেন্দ্র

চারদিকে সবুজ ফসলের মাঠ। এরমধ্যে সারি সারি ১৫টি পাকা ঘর। ঘরে বসবাসকারী মানুষের জন‌্য এখানে রয়েছে সুপেয় পানির ব‌্যবস্থ‌া। এখানকার যোগাযোগ ব‌্যবস্থাও ভালো। ঘরের পাশে রোপণ করা হয়েছে পেঁপে, লাউ, বেগুন, শিম গাছ। আরও রয়েছে জাম, কাঁঠাল ও পেয়ারাসহ প্রায় ৫০টি চারা গাছ। এগুলো সবই করা হয়েছে এই ১৫টি পাকা ঘরে বাস করা মানুষগুলোর জন‌্য।

এ সুন্দর ছবিটা হবিগঞ্জ জেলার শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার কেশবপুর আশ্রয়ণের। মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে এ আশ্রয়ণে ১৫ পরিবার পেয়েছেন আপন ঠিকানা। এর আগে এই পরিবারগুলোর স্থায়ী ঠিকানা ছিলো না। দরিদ্র এই মানুষগুলো পেশায় কেউ ভিক্ষুক কেউ বা দিনমজুর। আবার কেউ করেন গৃহকর্মীর কাজ। বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত উপহারের ঘরে শান্তিতেই বসবাস করছেন তারা। এর পাশেই কেশবপুর বাজার। আর বাজার অতিক্রম করে প্রায় দুই কিলোমিটার পরেই অলিপুর শিল্পাঞ্চল। শিল্পাঞ্চলে রয়েছে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা। এসব সুবিধায় আশ্রয়ণবাসীর মাঝে প্রাণচাঞ্চল‌্যে ভরে গেছে।

বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) সরেজমিনে দেখতে গিয়ে এই প্রকল্পের আশ্রয়ণে এমন চিত্র দেখা গেছে।

জানা গেছে, আশ্রয়ণে এই পরিবারগুলো নিজেদের জন‌্য পেঁপে, লাউ, বেগুন, শিম গাছ রোপণ করেছিলেন। কিন্তু সেখানে ছিল না ফলের গাছ। বিষয়টি নজরে আসে রোটারি ক্লাব অব হবিগঞ্জের নেতৃবৃন্দের। তারা জাম, কাঁঠাল ও পেয়ারাসহ প্রায় ৫০টি চারা গাছ রোপণ করে দেন। এসব গাছ বড় হলে আশ্রয়ণবাসী যেমনটা পাবেন মুক্ত অক্সিজেন, তেমন খেতে পারবে ফল। শুধু তাই নয়, এখানকার প্রায় প্রতি ঘরেই পালন হচ্ছে দেশী মুরগি। এসব মুরগির ডিম ও মুরগী পরিবারের সদ‌্যসরা চাহিদা মেটানোর পর বাজারে বিক্রি করছেন আশ্রয়ণবাসীরা। এতে আসছে বাড়তি অর্থ।

দুই শতক জমি ওপর ঢেউটিনের ছাউনীতে পাকাঘরে বসবাস করা সবুরা খাতুন বলেন, ‘আমি অন‌্যের বাসায় কাজ করি। কোনো ঘর ছিল না আমার। অন্যের বাড়িতে বাস করতে হচ্ছিল। এখন নিজ ঘরে থাকি। এই আনন্দটা বলে বোঝানো কঠিন।’

আবুল মিয়া বলেন, ‘শরীরটা ভালো যাচ্ছে না। তবে মনটা ভালো। কারণ ঈদের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে ঘর উপহার পেয়েছি। নিজ ঘরে বসে ঈদ পালন করার আনন্দটা উপভোগ করেছি। আর কি চাই?’

মিনারা খাতুন বলেন, ‘এই বিষয়টা আমার কাছে স্বপ্নের মত লাগছে। নিজের ঘর ভাবতে অবাক লাগছে। নিজ গৃহে বসবাস করে মনে তৃপ্তি পাচ্ছি।’

একই কথা বললেন, জাহানারা বেগম, শিরই বেগম, বিধান আলী, লালু মিয়াসহ আশ্রয়ণের অন্যান্য বাসিন্দারা।

ব্রাহ্মণডুরা ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার মো. কামাল হাজারী বলেন, ‘কেশবপুর আশ্রয়ণের বাসিন্দারা বিদ্যুৎ, পানি ও রাস্তার সুবিধা পেয়ে ভালভাবেই বসবাস করছেন। আমরা তাদের পাশে আছি। উপজেলা প্রশাসন থেকে তাদের খোঁজ খবর নেওয়া হয়। এছাড়াও তাদেরকে সরকারি সহায়তা দেওয়া হয়।’

ব্রাহ্মণডুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হোসাইন মো. আদিল জজ মিয়া জানান, ইউএনও মহোদয়ের দায়িত্বশীল ভূমিকায় আশ্রয়ণের এই ঘরগুলো সুন্দর মজবুত করে নির্মাণ করা হয়েছে। আমার ইউনিয়নের সুন্দর পরিবেশে এসব ঘরে দরিদ্র লোকদের মাথা গোজার ঠাঁই হয়েছে। তাই অত্যন্ত ভালো লাগছে। জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের ঘরে বসবাসকারীরা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সকল প্রকার সরকারি সহযোগিতা ভোগ করছে।

রোটারিয়ান আব্দুল আউয়াল তালুকদার জানান, কেশবপুর আশ্রয়ণ পরিদর্শন করে বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। তারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরে শান্তিতেই বসবাস করছেন। তাদের পাশে উপজেলা প্রশাসন আছে।

উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ গাজীউর রহমান ইমরান জানান, ইউএনও মহোদয়ের সঠিক তদারকিতে কেশবপুর আশ্রয়ণের ঘরগুলোতে টেকসই কাজ হয়েছে। আশ্রয়ণবাসী স্বাচ্ছন্দে বসবাস করছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. মিনহাজুল ইসলাম জানান, চারদিকে ফসলি জমি। মাঝখানে এ আশ্রয়ণে ১৫টি পরিবারের শতাধিক লোক স্বাচ্ছন্দে বসবাস করছে। আশ্রয়ণে সুপেয় পানির জন্য রয়েছে ৪টি নলকূপ। বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হয় আশ্রয়ণটি। এছাড়া আরও সুযোগ সুবিধা তৈরি করে দেওয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসন কাজ করছে। দেওয়া হচ্ছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মানবিক সহায়তাগুলো। এই কারণে এখানকার বাসিন্দারা ভালোই আছেন।