সারা বাংলা

বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে হাসপাতালে হাঁটুজল

চট্টগ্রাম মেডিক‌্যাল কলেজ হাসপাতালের পর সবচেয়ে বড় যে হাসপাতালটির ওপর সমগ্র চট্টগ্রাম জেলার মানুষ নির্ভর করে তার নাম চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল। অথচ সামান্য বৃষ্টিতেই এই হাসপাতাল পানিতে সয়লাব হয়ে পড়ে। হাসপাতালের ভেতরে রোগীর বিছানার সামনে হাঁটুজল! প্রতি বর্ষা মৌসুমে এই হাসপাতালের দুভার্গ্যজনক চিত্র এটা। 

৬৫০ শয্যার এই হাসপাতালটি প্রতিবছর নিয়ম করে জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ পড়ছে। রোগী এবং চিকিৎসা সেবাদানকারী চিকিৎসক এবং কর্মীরা এই সময় হাঁটুপানিতে দাড়িয়েই কাজ সারছেন। দীর্ঘ প্রায় ১২ বছর ধরে হাসপাতালটি এই জলাবদ্ধতার শিকার হলেও এর কোনো স্থায়ী সমাধান মিলছে না। গত দুই দিন ধরে চট্টগ্রামের টানা বৃষ্টিপাত এবং জোয়ারের পানিতে প্রায় হাঁটু পানিতে ডুবে রয়েছে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, ১৯৭৯ সালে নগরীর আগ্রাবাদ এলাকায় যখন এই হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা লাভ করে তখন এই জলাবদ্ধতার সমস্যা ছিলো না। কারো কল্পনাতেও ছিলোনা কখনো এই এলাকাটি বর্ষা মৌসুমে পানিতে তলিয়ে যেতে পারে। কিন্তু হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার প্রায় ৩০ বছর পর এই সমস্যা দেখা দেয় ২০১০ সাল থেকে। সেই থেকে প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে সামান্য বৃষ্টি হলে এবং সমুদ্রে জোয়ার হলে পুরো হাসপাতালের নিচতলা এবং হাসপাতাল সংলগ্ন পুরো এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। সর্বশেষ গত বুধবার (২৮ জুলাই) সারাদিনই চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের নিচতলা হাঁটু সমান পানিতে তলিয়ে ছিলো। একই দুরাবস্থা বিরাজ করছে বৃহস্পতিবারও (২৯ জুলাই)।

সরেজমিন পরিদর্শন এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল মা ও শিশুর বিশেষায়িত চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি সব শ্রেণি পেশার মানুষের বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা রয়েছে। এই হাসপাতালে রয়েছে ১৪২ শয্যার করোনা ইউনিটও। মা ও শিশুর চিকিৎসার জন্য রয়েছে আলাদা করে ৩০০ শয্যা। অনুদান নির্ভর ট্রাস্টভিত্তিক পরিচালনায় স্বল্প খরচে চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালটি সমগ্র চট্টগ্রামে অনবদ্য ভূমিকা রেখে চলেছে ১৯৮০ সাল থেকেই। কিন্তু বর্তমান বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতায় হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম মারাত্বকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে দেখা গেছে, সমুদ্রের জোয়ার এবং বৃষ্টির কারণে হাসপাতালের প্রধান ফটক থেকে হাসপাতালের পুরো নিচতলা হাঁটু সমান পানিতে তলিয়ে রয়েছে। নিচতলার জরুরি ওয়ার্ড, প্রশাসনিক কার্যালয়, টিকিট কাউন্টার, রিসিপশনসহ নিচতলার সর্বত্র পানিতে থই থই।

হাসপাতালে রোগী এবং স্থানীয়রা জানান, বৃষ্টি হলেই এই দুর্ভোগের শিকার হতে হয় সকলকেই। রোগী নিয়ে হাসপাতালে কোনো রোগী প্রবেশ কিংবা বের হতে পারেন না। চিকিৎসকরা সেবা দিতে পারেন না। রোগাক্রান্ত মানুষের দুর্ভোগের সীমা থাকে না।

মা ও শিশু হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সহ-সভাপতি সৈয়দ মো. মোরশেদ হোসেন জলাবদ্ধতা এবং দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে রাইজিংবিডিকে জানান, এই জলাবদ্ধতার সমস্যা দীর্ঘ দিনের। জলাবদ্ধতা থেকে হাসপাতালকে রক্ষা করতে হাসপাতালের নিচতলা প্রায় আড়াই ফুট পর্যন্ত উঁচু করা হয়েছে, কিন্তু এরপরও মুক্তি মিলছে না। বর্তমানে আরও উঁচু জায়গায় হাসপাতালের ১৪ তলা বিশিষ্ট নতুন ভবন নির্মাণাধীন রয়েছে। এই ভবনের নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। নির্মাণ সম্পন্ন হলে মা ও শিশু হাসপাতালের জলাবদ্ধতা থেকে স্থায়ী সমাধান মিলবে।

মোরশেদ হোসেন আরও বলেন,  নতুন ভবনে আরও ২শ’ শয্যা বৃদ্ধি করার কাজ চলছে। সেটি সম্পন্ন হলে হাসপাতালের  শয্যা সংখ্যা ৮৫০টি হবে।  তবে জরুরি ভিত্তিতে বর্তমান নিচতলার কার্যক্রম দ্রুততার সঙ্গে নতুন ভবনে স্থানান্তরের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। নতুন ভবনটি নির্মাণ সম্পন্ন হলে বর্তমান ভবন থেকে চিকিৎসা কার্যক্রম ক্রমান্বয়ে নতুন ভবনে স্থানান্তর করা হবে। এছাড়া বর্তমানে জলাবদ্ধ থাকা নিচতলা থেকে জরুরি ওয়ার্ডসহ নিচতলার অন্যান্য সেবা কার্যক্রম ওপরের তলায় স্থানান্তর করা হয়েছে। বর্তমানে এই হাসপাতালে প্রায় দুই হাজার চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য বিভাগের কর্মী কাজ করছেন।

মা ও শিশু হাসপাতালের জলাবদ্ধতা প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, এই সমস্যা দীর্ঘদিনের। শুধু মা ও শিশু হাসপাতাল নয়, সমগ্র চট্টগ্রামেই জলাবদ্ধতার সমস্যা রয়েছে। তবে মা ও শিশু হাসপাতাল সমুদ্রের নিকটবর্তী হওয়ায় জোয়ারের পানিতে পুরো এলাকাটি প্লাবিত হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রপৃষ্টে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় জোয়ারের সময় চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদ, হালিশহর এলাকায় পানি প্রবেশ করে। এই সময় মা ও শিশু হাসপাতালের নিচতলায় পানিতে প্লাবিত হয়। বর্তমানে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ চলছে। এই কাজ সম্পন্ন হলে চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতার সমস্যা থাকবে না বলে আশা প্রকাশ করেন সিটি করপোরেশনের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।