সারা বাংলা

কুমারখালীতে ৩০ লাখ টাকার মাছ লুটের অভিযোগ

কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার মৎস্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অবহেলায় ইফাদ প্রকল্পাধীণ কালীগঙ্গা-বাদলবাসা বাওড় এর অভয়আশ্রমসহ বাওড়ের বিস্তীর্ণ এলাকার মৎস্যচাষ প্রকল্পের ৩০ লাখ টাকার মাছ লুটপাট হয়েছে বলে অভিযোগ সেখানকার প্রান্তিক জেলেদের। সংশ্লিষ্ট উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করলেও অবহেলার অভিযোগ নাকচ করে বলেন, প্রশাসনিক ও আইনশৃংখলা রক্ষার ক্ষমতা মৎস্য বিভাগের নাই। তাছাড়া বিষয়টি জেলা মৎস কর্মকর্তাও অবগত আছেন বলে দাবি করেন তিনি, তবে জেলা মৎস কর্মকর্তা কিছুই জানেন না বলে জানালেন।

স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী কুমারখালী উপজেলার লাহিনী গ্রামের আব্দুল গফুর বলেন, গত তিনদিন ধরে বাওড়ে সব মাছ পানির উপরে ভাসতে দেখে দুইধারের বাসিন্দারা সবাই যে যেমন পেরেছে জাল বর্ষাসহ নানা ধরনের মাছ ধরা সরঞ্জাম নিয়ে পানিতে নেমে বিশেষ করে রুই কাতলা সিলভার কাপ, গ্রাসকার্প, মিনারকার্প নানা জাতের মাছ ধরেছে। এখানে যে সব জেলেরা পাহারা দেয় তাদের ক্ষমতা আছে এসব ঠেকানোর?

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কুষ্টিয়া জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, ‘জেলা উপজেলা পর্যায়ের মৎস্য বিভাগের বিরুদ্ধে অনিয়ম অব্যবস্থাপনার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। যে কারণে খাল বিল বাওড় দীঘি পুকুর নদীর মতো বিশালায়তনের জলাধার থাকা সত্ত্বেও অদ্যবধি জেলার সাড়ে ২২ লাখ মানুষের প্রয়োজনে প্রায় ৫৯ হাজার মেট্রিক টন মাছের চাহিদা পূরণ করতে পারেনি মৎস্য বিভাগ। জেলায় এখনও প্রায় চাহিদানুযায়ী সাড়ে ৬ হাজার মেট্রিক টন মাছের ঘাটতি পূরণ করতে অন্যান্য জেলা থেকে আমদানি করতে হয়। এখানে মৎস্য সম্পদ উন্নয়নের ব্যাপক সম্ভাবনার উৎস থাকলেও সেগুলির যথার্থ উপযোগিতা সৃষ্টি করতে পারেননি সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ। উপরন্তু ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে উঠা খামারগুলির প্রতি দায়িত্ব পালনে চরম উদাসীন ও অবহেলার অভিযোগ রয়েছে খামারী, জেলে ও মাছ চাষীদের।’

কালীগঙ্গা-বাদলবাসা বাওড় মৎস্যজীবি সমিতির সাধারণ সম্পাদক আকমল হোসেনের অভিযোগ, বাওড়টি সরাসরি মৎস্য বিভাগের তত্ত্বাবধায়নে এখানকার প্রান্তিক জেলেরা মাছ চাষ করলেও সঠিক সময়ে কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালন না করা এবং অবহেলার কারণেই বুধ, বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার ৩দিন ধরে অবাধে শত শত লোক পানিতে নেমে প্রায় ৩০ লাখ টাকার মাছ লুট করে নিয়ে গেছে। আমরা বার বার ফোন করে সাহায্য চাইলেও স্যারেরা আমাদের কোনো সাহায্য করেননি। স্থানীয় বাসিন্দা রবিউল ইসলাম বর্ষা দিয়ে মাছ ধরছিলেন, জিজ্ঞাসা করতেই তিনি জানালেন, প্রতি বছরই বাওড়ের পানিতে (কুষ্টা) পাট পচানোর ফলে পানিতে বিষক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এতে পানির সব মাছ ভেসে উঠে। তখন আশপাশের লোকজন এসব ভেসে উঠা মাছ বিভিন্নভাবে ধরে নিয়ে যায়। এতো মানুষকে তো ঠেকাতে পারবেন না।’

কুমারখালী উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান জানান, পানিতে পাট পচানোর কারণে মাত্রাতিরিক্ত এ্যামোনিয়া বেড়ে যাওয়ায় বিষক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এসময় মাছের জীবনধারণে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সংকট দেখা দেয়। এতে মাছ পানির উপর ভেসে উঠে। সময় মতো এর চিকিৎসা দিতে না পারলে পানির সব মাছই মরে যেতে পারে। বাদলবাসা বাওড়ের জেলেরা জানিয়েছিল সমস্যার কথা। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং ডিএফও কে-ও জানিয়েছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মাছ লুট ঠেকাতে উনারা প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেননি।’

তবে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ডিএফও) সাজেদুর রহমান মাছ লুটের ঘটনা কিছুই জানেন না বলে বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘এটাতো কুমারখালী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার দায়িত্ব। উনিই বাদলবাসা বাওড়টি দেখভাল করেন।’