সারা বাংলা

পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে

অতিবৃষ্টির কারণে পানিবন্দী হয়ে পড়া সাতক্ষীরা পৌরসভাসহ বিভিন্ন উপজেলার মানুষের দুর্গতি বাড়ছে। কিছু কিছু এলাকায় হাঁড়ি জ্বলছে না। ভেঙে পড়েছে স্যানিটেশন ব্যবস্থা। বেড়েছে সাপের উপদ্রব। অপসারণ করা হয়নি খালের নেটপাটা। অপরিকল্পিত মাছের ঘেরগুলোর কারণে পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে লাখো মানুষের দুর্গতির বাড়ছেই।

রোববার (১ আগস্ট) সকালে শহরের বকচরা মাঝেরপাড়া এলাকায় যেয়ে দেখা গেছে, আগরদাঁড়ি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মজনু মালির বাড়ির পাশ থেকে শুরু হওয়া বকচরা খালে স্থানীয় এশার আলী, ইনছান আলী, হাশেম আলী, দক্ষিণপাড়ায় আব্দুল হালিমসহ দীর্ঘদিন ঘরে নেট পাটা দিয়ে মাছ ধরে আসছেন। মাঝেরপাড়া কালভার্টে দাঁড়িয়ে অনেকেই খেপলা জাল দিয়ে মাছ ধরছেন।

বকচরা গ্রামের মান্নান সরদার, হাফিজুল ইসলাম জানান, খালে নেটপাটা দেওয়ার কারণে পানি সরতে পারে না। বছরে তিন মাস ধরে পানিবন্ধি থাকতে হয়। পাঁচ বছর ধরে এ অবস্থা চলছে। ২৭ জুলাই থেকে ২৯ জুলাই তিন দিনের অতিবৃষ্টিতে তাদের বাড়ি ঘরে পানি ঢুকেছে।

তারা আরও জানান, তারা রান্না করতে পারছেন না। আত্মীয় স্বজনের বাড়ি থেকে রান্না খাবার নিয়ে এসে খেতে হচ্ছে। স্যানিটেশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। চারিদিকে পানি থই থই করায় রাতের বেলায় পায়খানার কাজ সারতে হয়। বর্তমানে যে অবস্থা তাতে কেউ মারা গেলে লাশ মাটি দেওয়ার জায়গা নেই।

বকচরা গ্রামের আনিসুর রহমান, হামজার আলী, আব্দুস সালামসহ কয়েকজন জানান, ইউপি চেয়ারম্যান মজনু মালীর বাড়ির পাশ থেকে বকচরা খাল শুরু হয়ে সাপমারা খাল হয়ে হাড়দ্দহ হয়ে ইছামতী নদীর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। বালিয়াডাঙা, ভবানীপুর, বকচরা, বাবুলিয়া, নেবাখালি, ডিঙেরালী, চাতরা ও কদমতলাসহ কয়েকটি বিলের পানি এ খাল দিয়ে নিষ্কাশিত হয়।

আগরদাঁড়ি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মজনু মালি মালী, তার চাচা লিযাকত মালী ও মাসুমসহ কয়েকজন অপরিকল্পিতভাবে মাছের ঘের করায় বর্ষার পানি স্বাভাবিকভাবে বের হতে পারে না। পাঁচ বছর ধরে এ অবস্থা চললেও চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের বলেও কোনো লাভ হয়নি। অপসারিত হয়নি খালের ভিতরে বসানো নেট-পাটা।

শহরের সার্কিট হাউজের মোড় থেকে বকচরা সড়কের দিকে বাইপাস সড়কের ২০০ গজ দক্ষিণে লিয়াকত মালীর ঘের ও মাসুদের ঘের কেটে দিলেই রাস্তা কেটে সেখানে বড় কালভার্ট বসিয়ে দিলেই পানি বের হয়ে যাবে। একইসাথে চেয়ারম্যানের ঘেরের বেড়িবাঁধের একাংশ কেটে দিলেই জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে রেহাই পাবে ইউনিয়নবাসী।

বালিয়াডাঙা গ্রামের মহিবুল্লাহ গাজী, কাওছার আলী, হাশেম আলীসহ কয়েকজন জানান, ডিঙেরালী নামক স্থানে ও চেয়ারম্যান মজনু মালীর ঘেরের এক পাশে নেট দিয়ে বাঁধ কেটে দিলে বালিয়াডাঙা, ভবানীপুরসহ বিস্তীর্ণ অঞ্চলের পানি সরে যাবে। তারা বাঁচবেন জলাবদ্ধতার হাত থেকে। এক সময় এসব বিলে তিন ফসল হতো। এখন একটি ফসল ফলানো অসম্ভব প্রায়।

ডিঙেরালী নামক স্থানে ও চেয়ারম্যানের ঘের কেটে দিয়ে জলাবদ্ধতা দূরীকরণের জন্য তারা গত বছর মানববন্ধন করেছেন। সেখানে ইউপি চেয়ারম্যান মজনু বক্তব্য রেখেছেন। কথা দিয়েছিলেন সমস্যার সমাধান করবেন। কিন্তু অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। বিষয়টি নিয়ে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দেবাশীষ চৌধুরীর সঙ্গে কথা বললে তিনি চেয়ারম্যান সাহেবের বাইরে কোনো অভিযোগ শুনতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

খড়িবিলার মফিজুল ইসলাম, আরশাদ আলীসহ কয়েকজন জানান, বকচরা খালে নেটপাটাই শুধু সমস্যার কারণ নয়, গত ২৯ জুলাই বেড়াডাঙি নামকস্থানে মোজাফফর গার্ডেনের ২০০ ফুট মত লম্বা প্রাচীর খালে পড়ে যাওয়ায় পানি সরা একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে।

সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির নেতা আলী নূর খান বাবুল জানান, সাতক্ষীরা পৌরসভার ড্রেনেজ ব্যবস্থা একেবারেই নাজুক। পৌরসভাকে বলেও কোনো লাভ হয় না। এ ছাড়া কামাননগর দক্ষিণ বিলে নেট পাটার ফলে পানি সাপমারার খাল দিয়ে ইছামতী নদীতে পড়তে পারছে না। তার এলাকার অনেকেই বাড়িতে পানি ঢোকায় ও রাস্তার ওপরে পানি থাকায় রান্না বান্না করতে পারছে না। ভেঙে পড়েছে স্যানিটেশন ব্যবস্থা।

আলী নূর খান বাবুল আরও জানান, শুক্রবার রাতে ভ্যানচালক জামাল হোসেনসহ তিনজন সাপের কামড়ে জখম হয়েছেন। আমজাদ হোসেনের বালিশের নীচ থেকে সাপ উদ্ধার করা হয়েছে। দু’একদিনের মধ্যে ঘাস ও সেপটি ট্যাকির মল মিলে মিশে দুর্গন্ধ হয়ে পানি বিষক্ত হয়ে যাবে। ওই পানিতে গোসল ও থালা বাসন পরিষ্কার অব্যহত থাকলে চর্মরোগ দেখা দেবে। পানিবন্দি টিউবওয়েলের পানি ব্যবহার করায় ডায়েরিয়া ও আশাময় দেখা দিচ্ছে। বদ্ধ পানিতে জন্মাতে পারে ডেঙ্গু মশা।

আগরদাঁড়ি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মজনু মালি মালী জানান, তার এলাকায় কোথাও কোনো নেট পাটা নেই। ঘেরের বেড়িবাঁধ কোনো সমস্যা নয়। বকচরা খালের বেড়াডাঙিতে মোজাফফর গার্ডেনের প্রাচীর ভেঙে পড়ায় পানি কম সরছে। খুব শীঘ্রই ওই সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবীর বলেন, পানি নিষ্কাশনের জন্য পৌরসভার সঙ্গে কথা বলে কাজ করা হচ্ছে। নেটপাটা সরানোর জন্য ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছিল। তাতে কাজ না হলে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নেটপাটা অপসারণ করা হবে।