সারা বাংলা

পেয়ারা বাগানে করোনার থাবা 

করোনা-কারণে এবং ফলন ভালো না-হওয়ায় ভরা মৌসুমেও লোকসানের মুখে পড়েছেন ঝালকাঠির পেয়ারাচাষি ও ব্যবসায়ীরা। প্রতি বছর এ সময় ভীমরুলী ভাসমান হাটসহ জেলার পেয়ারা বাগানগুলো মুখরিত থাকলেও এবার চিত্র ভিন্ন। পেয়ারা বাগান ঘিরে গড়ে ওঠা পর্যটন কার্যক্রমও বন্ধপ্রায়। ফলে জেলার পেয়ারাকেন্দ্রিক অর্থনীতিতে বড় ধসের শঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ঝালকাঠি সদর উপজেলার কীর্ত্তিপাশা, নবগ্রাম ও গাভা রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের প্রায় ২০ গ্রামের কয়েক হাজার মানুষের জীবিকার প্রধান অবলম্বন পেয়ারা। আষাঢ়ের মাঝামাঝি থেকে শুরু হয় পেয়ারার মৌসুম। প্রতি বছর মৌসুমজুড়ে প্রতিদিন নৌকা, ট্রলার ও ট্রাকে পেয়ারা যায় দেশের বিভিন্ন স্থানে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চাষি, বাগান মালিক, খুচরা ও পাইকারী ব্যবসায়ীদের কোলাহলে মুখর থাকে ভীমরুলী ভাসমান হাটসহ প্রতিটি পেয়ারা বাগান। কিন্ত এবার চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। করোনাসৃষ্ট পরিস্থিতিতে পাইকাররা আসছেন না। এদিকে ছিটপড়া রোগের কারণে ফলনও কম। ফলে চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন কয়েক হাজার পেয়ারাচাষি।

ভিমরুলী, শতদশকাঠী, খাজুরিয়া, ডুমুরিয়া, কাপুড়াকাঠী, জগদীশপুর ঘুরে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। ভীমরুলী গ্রামের পেয়ারাচাষি সন্তোষ মণ্ডল জানান, ভীমরুলীকে ‘পেয়ারার রাজ্য’ বলা হলেও পার্শ্ববর্তী বরিশালের বানারীপাড়া, পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি এবং ঝালকাঠি সদর উপজেলাজুড়ে পেয়ারা চাষ হয়। এখানে যুগ যুগ ধরে চাষ হচ্ছে ‘বাংলার আপেল’খ্যাত পেয়ারা। ফলে উল্লেখিত এলাকায় পেয়ারার চাষ, ব্যবসা ও বাজারজাতকরণের কাজে জড়িত রয়েছেন কয়েক হাজার মৌসুমী শ্রমিক। এ সময় অন্তত ২০টি স্থানে পেয়ারার মৌসুমী মোকামের সৃষ্টি হয়। প্রতিদিন বিক্রি হয় প্রায় ৭ হাজার মণ পেয়ারা। এবার পেয়ারা বিক্রির হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে বলে জানান তিনি। ছিটপড়া রোগের কারণে চাষিরা দামও পাচ্ছেন কম।

পেয়ারাচাষি নিশিথ হালদার শানু বলেন, ‘এ বছর বাগানে তেমন ফলন হয়নি। তার ওপর করোনার ভয়ে চাষিরা বাগানের যথাযথ পরিচর্যা করতে না পারায় ছিটপড়া রোগে আক্রান্ত হয়েছে প্রতিটি বাগান। যে কারণে প্রতিমণ পেয়ারা বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকায়। অথচ গত বছর প্রতি মণ পেয়ারা পাইকারি বিক্রি হয়েছে ৮০০ টাকায়।'

পেয়ারাচাষি সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহর মণ্ডল তার কথার সুর মিলিয়ে বলেন, ‘গত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর পেয়ারার ফলন ৪০ ভাগ কম হয়েছে। রোগবালাইও বেশি। যার প্রভাব পড়েছে বাজারমূল্যে। ফলন কম হওয়ায় শত শত শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন।’

এবার পেয়ারা চাষিদের মুখে হাসি নেই উল্লেখ করে কির্ত্তিপাশা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আ. রহিম মিয়া বলেন, ‘চাষিরা চোখে-মুখে অন্ধকার দেখছেন। প্রতি বছর হাজার হাজার দর্শনার্থীর কারণে স্থানীয় ট্রলার চালক ও মোটরসাইকেল চালকরা প্রতিদিন ভালো আয় করতো। হোটেল-রেস্টুরেন্টগুলোতেও প্রচুর আয় হতো। এ বছর সব বন্ধ।’

ঝালকাঠি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ফজলুল হক জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে চলতি বছর পেয়ারার উৎপাদনে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। কৃষক যেন ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারেন সেজন্য বিনামূল্যে কৃষি উপকরণ ও সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। তবে বিশেষ কোনো প্রণোদনা দেওয়ার উদ্যোগ সরকার এখনও নেয়নি বলেও জানান তিনি।