সারা বাংলা

রাতেও শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটে ফেরিতে ঢাকামুখী যাত্রীদের ঢল

গার্মেন্টস ও শিল্পকারখানা খোলার কারণে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ও মাদারীপুরের বাংলাবাজার নৌপথ দিয়ে হাজার হাজার যাত্রী পদ্মা পারাপার হচ্ছেন।

বৃহস্পতিবার (৫ আগস্ট) সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বাংলাবাজার থেকে ফেরিতে চরে শিমুলিয়া এলাকায় এসে ঢাকামুখী যাত্রীদের ঢল বেড়েই চলেছে।

অধিকাংশ ফেরিতে যানবাহনের পাশাপাশি হাজার হাজার যাত্রীকে পার হতে দেখা গেছে।

বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্পোরেশনের (বিআইডব্লিউ টিসি) শিমুলিয়া ঘাটের সহ-মহাব্যবস্থাপক মো. শফিকুল ইসলাম।

শফিকুল ইসলাম আরো জানান, মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে দক্ষিণাঞ্চলগামী যাত্রীদের চাপ ছিল তুলনামূলক অনেক কম। তবে রাজধানী ঢাকামুখি কর্মজীবী মানুষের উপচেপড়া ঢল ছিল।

শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটে ১৭টি ফেরির মধ্যে বর্তমানে ৪টি রো রো, ৫টি মিডিয়ামসহ সর্বমোট ৯টি ফেরি চলাচল করছে। লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় ৯টি ফেরি চলাচল স্বাভাবিক থাকায় ভোগান্তি বেড়েছে যাত্রীদের। তবে যাত্রীদের সাথে বেড়েছে ব্যক্তিগত যানবাহনের চাপ।

এদিকে, সরেজমিনে ঘাটে গিয়ে জানা গেছে, মাদারিপুর থেকে মো. রুহুল আমিন নামে এক যাত্রী তিন হাজার টাকা দিয়ে পরিবারে পরিজনকে নিয়ে সিএনজি অটোরিকশাতে করে বাংলাবাজার থেকে ফেরিতে চরে শিমুলিয়া ঘাটে এসে তারা ঢাকায় পোশাক কারখানায় যাচ্ছেন।

তিনি আরো বলেন, ঘাটে আসতে চেকপোস্টে আমাদের থামানো হচ্ছে।গনপরিবহন না থাকায় পায়ে হেটে ও ছোট ছোট যানবাহনে চরে ভেঙ্গে ভেঙ্গে ঢাকায় যেতে হচ্ছে।

কথা হয় দিন মজুর সুমন মিয়ার সাথে, তিনি বলেন, সরকার লকডাউন দিছে, কিন্তু পেটে ভাত দেয় নাই। কাম না করলে পরিবার নিয়া খামু কি?। তাই রাতেই  ঢাকায় যেতে হচ্ছে। আগামিকাল কাজে না গেলে চাকরি থাকবো না বলে মালিক জানিয়ে দিয়েছে। এক হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে শিমুলিয়া ঘাট পর্যন্ত এসেছি।আসতে চরম ভোগান্তিতে পরতে হয়েছে।

রাজধানী ঢাকার মিরপুরে এক পোশাক কারখানায় কাজ করেন রুনা আক্তার। তিনি বলেন, ঈদের ছুটিতে মাদারিপুর গ্রামের বাড়ি গিয়েছিলেন।রোববার (১ আগস্ট) থেকে শিল্পকারখানা খুলছে, তাই কর্মস্থলে ফিরতে বৃহস্পতিবার (৫ আগস্ট) ভোরে পদ্মা পাড়ি দিয়ে এসেছেন মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়াঘাটে।ফেরি পার হলেও শিমুলিয়া ঘাটে পৌঁছে কঠোর বিধিনিষেধে পরিবহন বন্ধ থাকায় গাড়ি না পেয়ে পড়েছেন মহা বিপাকে।রাত হয়ে গেছে কী করবেন, কীভাবে পৌঁছাবেন গন্তব্যে, তা বুঝে উঠতে না পেরে নিরাপত্তার কথা না ভেবেই শিমুলিয়াঘাট থেকে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের দিকে পায়ে হেঁটেই যাত্রা শুরু করেন।

রুনা আক্তার জানান, সরকার গণপরিবহন বন্ধ রেখে গার্মেন্টস খুলেছে। ৫ আগস্ট না গেলে চাকরি থাকবে না।চাকরি বাঁচাতে এখন কষ্ট করে যেতে হচ্ছে।গাড়ি পাওয়ার জন্য রাস্তায় হাঁটছি। যদি পথিমধ্যে কোন যানবাহন পেয়ে যাই।

শুধু রুনা আক্তারই নয়, ঢাকায় কর্মস্থলে ফিরতে বাংলাবাজার থেকে শিমুলিয়াঘাটে আসা হাজারও যাত্রীর একই অবস্থা। 

শিল্পকারখানা খোলার কারণে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে ঢাকামুখী মানুষের ঢল রয়েছে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ফেরিতে।

মাওয়া নৌ-পুলিশের চার্জ সিরাজুল কবির বলেন, ‘গণপরিবহন বন্ধ থাকায় সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অনেকে পায়ে হেঁটে, অটোরিকশাতে, পন্যবাহী ছোট-বড় গাড়িতে করে ঢাকায় যাচ্ছেন।বর্তমানে এ নৌরুটে  ৯টি ফেরি সচল রয়েছে।এসব ফেরি জরুরি সেবার জন্য পন্যবাহী যানবাহন ও অ্যাম্বুলেন্স পারাপারের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।তবে মানবিকতা বিবেচনায় আগত যাত্রী ও ব্যাক্তিগত যানবাহনও পারাপার করা হচ্ছে।এখন ছোট-বড় গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্সসহ ২ শতাধিক যানবাহন  পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে।

মুন্সীগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন দেব বলেন, ‘ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে ট্রাফিক ও লৌহজং থানার পুলিশের একাধিক চেকপোস্ট রয়েছে। রাতে যাত্রী নিরাপত্তার কথা ভেবে সারারাত চেকপোস্টে পুলিশ প্রহরায় থাকবে।

শ্রীনগরের হাসাড়া হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আফজাল হোসেন বলেন, 

পদ্মায় তীব্র স্রোত থাকায় একদিকে ফেরি চলাচলে সময় লাগছে বেশি। শিমুলিয়াঘাটে ব্যক্তিগত গাড়িরবাড়তি চাপ রয়েছে।ফেরিতে পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে ছোটবড় ২শতাধিক যানবাহন। মাওয়া ট্রাফিক পুলিশের ইনচার্জ (টিআই প্রশাসন) বলেন, নদীতে পানি বৃদ্ধি ও তীব্র স্রোতের কারণে রাতে বাংলাবাজার থেকে শিমুলিয়া ঘাটে আসতে ফেরিগুলোর দুই থেকে তিনগুণ সময় লাগছে। প্রতিটি ফেরিকে স্রোতের বিপরীতে ও নদীতে ৩-৪ কিলোমিটার বেশি পথ ঘুরে যেতে হচ্ছে। যাত্রীদের স্বাস্থবিধি মানতে মাইকিং করে সচেতন করা হচ্ছে।