সারা বাংলা

বাগেরহাটে বীজধান সংকট, কৃষকরা দিশেহারা

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপে গত জুলাই মাসের ২৭ থেকে ৩০ তারিখ পর্যন্ত ভারী বর্ষণ ও পূর্ণিমার জোয়ারের প্রভাবে প্লাবিত হয় বাগেরহাটের নিম্নাঞ্চল। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়ে জেলার লক্ষাধিক মানুষ। ভেসে যায় পুকুর ও মাছের ঘের। এখন পানি নিষ্কাশনের পর বীজতলা, আমন ধান, সবজি, পানসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দৃশ্যমান হচ্ছে। সবচেয়ে ক্ষতি হয়েছে আমনের বীজতলার। বীজতলা পচে ও নষ্ট হয়ে যাওয়ায় নতুন করে দেখা দিয়েছে বীজ সংকট। এতে অধিকাংশ জমি অনাবাদী থাকার আশংকা করছেন চাষিরা।

শরণখোলা উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, শরণখোলায় মোট ১১ হাজার ২৯০ জন চাষির মাধ্যমে এ বছর ৯ হাজার ৪৩৯ হেক্টর জমিতে আমন চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই লক্ষ্য নিয়ে বিআর-১১, বিআর-৫২ ও বিআর-২২ জাতের ধান চাষের জন্য ৭৩০ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরি করা হয়। সব বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। শুধু শরণখোলা উপজেলা নয়; রামপাল, মোংলা, মোড়েলগঞ্জ উপজেলারও অধিকাংশ বীজতলা নষ্ট হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছে কৃষকরা। 

শরণখোলা উপজেলার খোন্তাকাটা ইউনিয়নের পশ্চিম রাজৈর গ্রামের চাষি মো. সাইয়েদ আলী জানান, তার ১০ কাঠা জমির বীজতলার সব নষ্ট হয়ে গেছে। নতুন করে বীজতলা তৈরির জন্য ডিলারের কাছে বীজধান কিনতে গিয়েছিলাম। কিন্ত কোনো ডিলারের কাছে বীজধান নেই। সামনের দিনগুলো খুব কষ্টে কাটবে তার। 

সাউথখালী ইউনিয়নের খুড়িয়াখালী গ্রামের কৃষক আলম জানান, সম্প্রতি বৃষ্টির ফলে ২০ কেজি ধানের বীজতলা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় চারাগাছ পচে নষ্ট হয়ে গেছে। যার ফলে এবার আর আমন চাষ করা সম্ভব নয়। নতুন ধান চাষাবাদের জন্য অনেক জায়গায় যোগাযোগ করেও বীজ সংগ্রহ করতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত জমি পতিত থাকবে কি না, তাই নিয়ে তিনি দুঃশ্চিন্তায় রয়েছেন। 

উত্তর তাফালবাড়ী গ্রামের নাছির উদ্দিন পাহলান বলেন, ২০ বিঘা জমিতে আমন ধান লাগানোর জন্য একশত কেজি বীজধান বোনেন তিনি। জলাবদ্ধতায় ধানের চারাগুলো (পাতো) বেশির ভাগ পচে গেছে। 

মোড়েলগঞ্জ উপজেলার বহরবুনিয়া ইউনিয়নের ফুলহাতা গ্রামের কৃষক রাকিব হাসান বলেন, ‘৬ বিঘা জমিতে ধান রোপণের বীজতলা সবই নষ্ট হয়ে গেছে। এ এলাকায় মাছ এবং এক ফসলী আমন ধান ছাড়া তেমন কিছুই হয় না। নতুন করে চাষের জন্য অনেক জায়গায় ঘুরেও একমুঠো বীজধান পাইনি। এই ক্ষতি কীভাবে পুশিয়ে উঠবো, তাই ভেবে পাচ্ছি না।’

মোড়েলগঞ্জ উপজেলার ভাই ভাই স্টোরের স্বত্বাধিকারী বীজধানের ডিলার সুখদেব হালদার বলেন, ‘এ বছর চাহিদা ছিলো ১০ টনের মতো। কিন্তু বরাদ্দ পেয়েছি মাত্র সাড়ে তিন টন বীজধান। সম্প্রতি বৃষ্টিতে বীজধান নষ্ট হয়ে যাওয়ায় আমাদের কাছে অনেক কৃষক এসেছেন। কিন্তু আমরা কাউকে বীজধান দিতে পারছি না।’  

সরকারি বীজধান সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বিএডিসির বাগেরহাট কার্যালয়ের সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা আকলিমা খাতুন বলেন, ‘কৃষকের চাহিদা ছিলো ৫০ টন বীজধান। অথচ ৫০ টনেরও কিছু বেশি বীজ এই মৌসুমে সরবরাহ করা হয়েছে। কিন্তু এখন নতুন করে আর বরাদ্দের সুযোগ নেই।’  শরণখোলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও রায়েন্দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আছাদুজ্জামান মিলন জানান, বৃষ্টির পানিতে বীজতলাগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে উপজেলাজুড়ে কৃষকরা এখন হতাশায় রয়েছেন। নতুন করে চাষাবাদের জন্য বীজধান সংগ্রহসহ কৃষকদের দ্রুত সরকারি সহায়তার দাবি জানান তিনি।

বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ভারী বর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে জেলায় ১ হাজার ৫৮৮ হেক্টর রোপা আমনের বীজতলা নষ্ট হয়েছে। ৯৬০ হেক্টর জমির আউশ ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গ্রীষ্মকালীন সবজির ক্ষতি হয়েছে ৩৭৯ হেক্টর জমির। সাড়ে ১০ হেক্টর জমির পানের বরজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে এতে ২০ হাজার ২০৩ জন কৃষকের ৫ কোটি ৬৫ লাখ ৩ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, ‘বীজতলা নষ্ট হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত চাষির তালিকা তৈরি করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পাঠানো হয়েছে। সরকারি সহায়তা আসলে কৃষকদের দেওয়া হবে। পাশাপাশি ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে আমরা কৃষকদের নানা পরামর্শ দিচ্ছি। এছাড়াও বীজ ধানের সংগ্রহের বিষয়ে আমরা কাজ করছি।’