সারা বাংলা

চাঁপাইনবাবগঞ্জের বানভাসিরা খাদ্য সংকটে

আষাঢ়ের টানা বর্ষণ আর পদ্মা নদীর উজানে ফারাক্কা বাঁধের গেট খুলে দেওয়ায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সকল নদীর পানি ক্রমশ বেড়েই চলেছে। ফলে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতিতে প্রায় দেড় লাখ মানুষ পানিবন্দি।  এসব এলাকায় খাবার পানি, গো খাদ্য, টয়লেট ও ব্যবহৃত বজ্রপানি ফেলার স্থানের সঙ্কট দেখা দিয়েছে।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, আর মাত্র ৩৮ সেন্টিমিটার পানি বাড়লে পদ্মা তার বিপৎসীমা অতিক্রম করবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার শাজাহানপুর, নারায়ণপুর, আলাতুলি, চড়বাগডাংগার কিছু এলাকা, শিবগঞ্জ উপজেলার দূর্লভপুর, পাকা ও উজিরপুর এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সদর উপজেলার নারায়ণপুর ও চড়বাগডাংগা।  শিবগঞ্জের দূর্লভপুর আর পাকা ইউনিয়নে বেশি প্লাবিত হয়েছে।

নারায়ণপুর এলাকার শফিকুল ইসলাম জানান, পানির তোড়ে গ্রামের যাতায়াতের রাস্তা ডুবে গেছে।  গ্রামের মানুষ রান্নাবান্নার কাজ করতে পারছে না।  শুকনো খাবার সংগ্রহ করে তাদের খাবারের চাহিদা মেটাচ্ছে। টিউবওয়েল পানির নিচে। জমানো কিছু পানি ছিল সেটা দিয়েই চলছে। সবকিছু নিয়ে বড় বিপদে আছি।

তিনি জানান, এসব এলাকা ৯ দিন ধরে ডুবে আছে। এ কারণে বিশুদ্ধ পানির সঙ্কটে ভুগছেন অনেক বানভাসিরা। বন্যার পানি দিয়ে থালা–পাতিল পরিষ্কার করছেন। খাবার পানি সংগ্রহ করতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

পাকা এলাকার গৃহিণী জমিলা খাতুন (৪০) জানান, চারদিকে এত পানি, তবু খাওয়ার পানি নেই। তাই কলার ভেলায় করে উঁচু জায়গায় নলকূপের পানি আনতে হচ্ছে।  সেখানেও প্রচণ্ড ভিড়।

তিনি বলেন, বন্যায় আমাদের দুটি ঘর ডুবে গেছে। আমরা বাড়িতেই আছি। কোনোখানে যাইনি। ধারদেনা করে খাবার কিনছি। খাবার সংগ্রহ করছি। কিন্তু পানির সমস্যায় ভুগছি। বন্যার পানি দিয়ে সব করা যায়, কিন্তু খাওয়া যায় না। তাই বন্যার পানি গরম করে খাচ্ছি।

আলাতুলি এলাকার ৫০টি গরুর মালিক সাহাবুদ্দিন। নিজে না খেয়ে থাকতে পারলেও তার পোষা গরুগুলোকে না খাওয়ায়ে থাকতে পারবেন না।  তিনি গরুর খাবার জোগাড় নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় আছেন।

তিনি বলেন, বাড়িতে পানি ঢুকে গেছে, আমরা কোথাও যাইনি। কিন্তু বাড়ির পাশেই একটা উঁচু জায়গা ছিল, সেখানে আরেকটু মাটি তুলে গরুগুলোকে রেখেছি। একদিকে গরু চুরির ভয়, আরেক দিকে গরুর খাবার সঙ্কট। সব মিলিয়ে কঠিন সময় পার করছি।

পাকা এলাকার সাইদুর রহমান বলেন, বাড়ির চারদিকেই পানি আর পানি। গরু নিয়ে খুব কষ্টে আছি। গবাদি পশুর খাদ্য সঙ্কটে নাকাল হয়ে পড়েছেন জেলার কয়েক হাজার বানভাসি।

বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল শরীফ জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মায় পানি বেড়েছে ১০ সেন্টিমিটার ও মহানন্দা নদীতেও ১০ সেন্টিমিটার। বর্তমানে পদ্মায় ২২ দশমিক ২৮ মিটার ও মহানন্দায় ২০ দশমিক ৬৫ মিটার পানি আছে। পদ্মা নদীতে বিপৎসীমা ধরা হয়েছে ২২ দশমিক ৫০ মিটার। বিপৎসীমার ৩৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।