সারা বাংলা

১৬ বছর ধরে খুলনায় ‘হাতের ইশারায়’ ট্রাফিক কন্ট্রোল

শনিবার ঠিক দুপুর ১২টা। খুলনা নগরীর ব্যস্ততম শিববাড়ী মোড়। এ মোড় দিয়ে নিউ মার্কেট-ডাকবাংলা, ময়লাপোতা-সোনাডাঙ্গায় যাতায়াতের চারটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক চলে গেছে। সঙ্গতকারণেই ছোট-বড় যানবাহনের ছোটাছুটি। নেই কোনো নিয়ন্ত্রণ। কারণ, এখানে থাকা ডিজিটাল বা স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা অকেজো। তাই সিগনাল না থাকায় যানবাহনগুলোও চলছে ইচ্ছামতো। যে যার মতো। কিন্তু এখানে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্য যখনই ঝুঁকি নিয়ে সড়কের মাঝে গিয়ে হাত উঁচু করে ইশারা করছেন, তখনই যানবাহনগুলো থেমে যাচ্ছে। আবার তার ওই হাতের ইশারাতেই চলছে।  

শুধু শিববাড়ী মোড়ই নয়, একইভাবে নগরীর ডাকবাংলো, পাওয়ার হাউস মোড়, রয়্যাল মোড়, পিকচার প্যালেস, সদর থানা, পিটিআই, ধর্মসভা, ময়লাপোতা ও ফেরিঘাট মোড়, সদর হাসপাতালের সামনে, সার্কিট হাউসের পাশে, হাজী মুহসীন সড়ক এবং দৌলতপুর, নতুন রাস্তা ও জোড়াগেট মোড়সহ ১৬টি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টের ডিজিটাল ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি অকেজো অবস্থায় রয়েছে। ফলে খুলনা মহানগরীর পুরো ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণই ‘হাতের ইশারা’ নির্ভর হয়ে পড়েছে। 

শিববাড়ী মোড়ে সকালের পালায় দায়িত্বরত ট্রাফিক সদস্য সাইফুল ইসলাম, মিজানুর রহমান ও মো. নূরুজ্জামান বলেন, এ মোড়ের ৭টির সবকটি সিগনালই দীর্ঘ দিন ধরে অকেজো রয়েছে। এ কারণে হাতের ইশারাতেই আমাদের যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। কিন্তু এসব সিগনাল বাতি সচল থাকলে হলুদ, লাল আর সবুজ বাতির সংকেতেই খুব সহজে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করা যেত। এতে একদিকে যেমন যানজট ও দুর্ঘটনা কম হতো, অন্যদিকে আমাদের আর একটানা রৌদে দাঁড়িয়ে কষ্ট করে দায়িত্ব পালন করতে হতো না। সবদিক থেকেই সুবিধা হতো। তবে, কেন এ বাতিগুলো ঠিক করা হয় না-সেটি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষই ভালো জানেন- উল্লেখ করে তারা সিগনাল বাতিগুলো সচলের পক্ষে মতামত ব্যক্ত করেন।  

নগরীর ব্যস্ততম ডাকবাংলা মোড়ে দায়িত্ব পালনরত ট্রাফিক সদস্য এসএম বিল্লাল হোসেন ও মো. আরিফ হোসেনও একই সুরে কথা বলেন। তারা আরও বলেন, যানবাহন চালকরা অনেক সময় সিগনাল মানতেও চান না। হাতের ইশারা না মেনেই গাড়ী চালিয়ে চলে যান। আবার অনেক চালক যানবাহন নিয়ে ট্রাফিক বিটেও (ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ পয়েন্ট বা চৌকি) ধাক্কা দেন। এ নিয়ে মাঝেমধ্যেই চালকদের সঙ্গে তাদের বাগ-বিতণ্ডা হয়। কিন্তু ডিজিটাল সিগনাল চালু থাকলেও এ ধরনের বিড়ম্বনায় পড়তে হতো না। 

খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) সূত্র জানায়, দুর্ঘটনা রোধের পাশাপাশি যানজট নিরসনে ১৯৮৭ সালের দিকে খুলনা মহানগরের ১৬টি মোড়ে ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি স্থাপন করা হয়। কিন্তু ২০০৫ সালের মধ্যে সবকটি বাতি অকার্যকর হয়ে যায়। বাতিগুলো মেরামতের উপযোগী না থাকায় কেসিসি নতুন করে আর কোনো উদ্যোগ নেয়নি। মূলত এসব ট্রাফিক সিগন্যাল হলুদ, সবুজ, কালারের বাতি জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। এতে করে দায়িত্বে থাকা ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের যানজট নিয়ন্ত্রণ করতে বেশ বেগ পেতে হয়। মাঝেমধ্যে রাতের বেলায় ইলেকট্রিক সিগন্যাল লাঠি ব্যবহার করতে দেখা গেলেও বেশির ভাগ সময়ে হাতে লাঠি আর বাঁশি নিয়ে যানজট নিরসনের দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায় এসব ট্রাফিক সদস্যদের। এতে নগরীতে দুর্ঘটনা বাড়ার পাশাপাশি পথচারী ও যানবাহন চলাচলের ঝুঁকিও বাড়ছে। 

জ্বলছে না ট্রাফিক কন্ট্রোল লাইট

খুলনা সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র-১ আমিনুল ইসলাম (মুন্না) বলেন, ট্রাফিক সংকেত বাতি বিকল আছে, আমি নিজেও বিষয়টি লক্ষ করেছি। তাছাড়া এতে করে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালন করতে সমস্যা হচ্ছে। মেয়রের সাথে এ বিষয়ে কথা বলে দ্রুত একটি কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মাদ তাজুল ইসলাম বলেন, খুলনা একটি সুন্দর ও আধুনিক শহর। অথচ ট্রাফিক সংকেত বাতি এখনো জনাজীর্ণ। এতে দায়িত্ব পালনে অনেক সময়ে আমাদের পুলিশ সদস্যদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলন্ত গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। এ বিষয়ে আমরা বেশ কয়েকবার খুলনা সিটি করপোরেশনকে চিঠি দিয়েছি। তবে এখনো কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। তবে দ্রুত এসব ট্রাফিক সংকেত বাতি সংস্কার বা নতুন বাতি স্থাপনের প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।