সারা বাংলা

জীবিত হয়েও ‘মৃত’, পাচ্ছেন না করোনা টিকা

বরগুনা সদরের বুড়িরচর ইউনিয়নের দক্ষিণ লবনগোলা গ্রামের ৬৮ বছর বয়সী বৃদ্ধ মো. ইউসুফ। দীর্ঘদিন ধরে ইউনিয়ন পরিষদ ও নির্বাচন অফিসে ছোটাছুটি করেও নিজেকে জাতীয় পরিচয়পত্রে জীবিত করতে পারেননি তিনি। ফলে করোনার ভ্যাকসিনতো পাননি, একই সঙ্গে বঞ্চিত হচ্ছেন বয়স্কভাতা থেকেও।

বৃদ্ধ বয়স। বাঁচতে হলে দিতে হবে করোনার টিকা। এমন চিন্তায় ঘুম আসেনা মো. ইউসুফের। কারণ মো. ইউসুফ নির্বাচন কমিশনের খাতায় ২০১৭ সালে থেকেই মৃত। গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোট দিতে গিয়েও ভোট দিতে পারিনি তিনি। তখনও জানতে পারেননি তিনি ভোটার তালিকায় মৃত। বরগুনায় কম্পিউটারের দোকানে করোনার ভ্যাকসিনের জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে এসে জানতে পারেন তিনি জাতীয় পরিচয়পত্রে মৃত।

শুক্রবার (১০ সেপ্টেম্বর) মো. ইউসুফ অভিযোগ করে বলেন, ‘বাইচ্চা থাইকা মরা হইয়া ঘুরতেছি এক মাস ধইরা। সরকার কয় করোনা দিয়া বাঁচতে বুইড়াগো ভ্যাকসিন দেয়া লাগবে। এহন বাচাঁর জন্য টিকা দিতে যাইয়া দেহি মোরে মাইরা রাখছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘ভ্যাকসিন দিতে পারি নাই।  চেয়ারম্যানের ধারে গেছিলাম। হেয় কয় নির্বাচন অফিসে যাইতে। নির্বাচন অফিসের স্যারেগো ধারেও গেছি। হেরা কয় অপেক্ষা করতে। একমাস ধইরা রিক্সা ভাড়া দিয়া যাই আর আই। জ্যাতা থাইক্কাও জ্যাতা প্রমাণ করতে এহন দৌড়াই।’

জাতীয় পরিচয়পত্রে মৃত থাকার কারনে মো. ইউসুফ বঞ্চিত হচ্ছেন বয়স্ক ভাতা থেকেও।

মো. ইউসুফের প্রতিবেশি আলামিন হোসেন বলেন, ‘গরীব বৃদ্ধ মো. ইউসুফ খুব অসহায়ভাবে দিন পাড় করছেন। বয়স্ক ভাতা পেলে কিছুটা হলেও তিনি উপকৃত হতেন।’

বরগুনার সিভিল সার্জন ডা. মারিয়া হাসান বলেন, ‘জাতীয় পরিচয়পত্রে মৃত থাকায় করোনার ভ্যাকসিনের রেজিস্ট্রেশন হচ্ছে না মো. ইউসুফ। রেজিস্ট্রেশন করতে হলে প্রথমে তার জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করতে হবে। নয়তো রেজিস্ট্রেশনের কোনো সুযোগ নেই।’

বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা নাজমুল হাসান বলেন, ‘এ রকম ঘটনা খুব কম ঘটে। মাঠ পর্যায়ে যারা ভোটার তালিকার কাজ করেছেন, তাদের ভুলের জন্য এমনটি হয়েছে। আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি। বৃদ্ধ ইউসুফের জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের আবেদন করা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে তার পরিচয়পত্র সংশোধন করা হবে।’